শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ন্যায়বিচারের পথ খুলে দিয়েছে
গণঅভ্যুত্থানে পতন হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়ায় অভিনন্দন দিয়েছে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ফোরাম (ইউটিএফ)। শিক্ষকরা বলছেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে জুলাই বিপ্লবে শহীদ ছাত্র–জনতার আত্মত্যাগ বিচারিক স্বীকৃতি পেল এবং রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ প্রথমবার আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়ালো। দীর্ঘদিনের দমন–পীড়ন, রক্তপাত, গুম, হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর এ রায় জাতির সামনে একটি নতুন ন্যায়বিচারের পথ খুলে দিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে ইউটিএফের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব ড. শামীম হামিদী বলেন, রায়ের মাধ্যমে জনগণের বিজয় আরও সুদৃঢ় হলো। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে তারা বলেন, কোনো বিলম্ব বা ষড়যন্ত্র যেন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে—এটি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
যৌথ বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের সময় সংঘটিত অন্যান্য হত্যা, গুম, হামলা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সব মামলার অগ্রগতি এখনো সন্তোষজনক নয়। অসংখ্য পরিকল্পনাকারী, সহযোগী ও নির্দেশদাতা এখনো আইনের বাইরে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ও বিচার বিভাগকে চলমান মামলাগুলোর গতি বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
ইউটিএফ গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয়ের আড়ালে যারা জুলাই বিপ্লবের ছাত্র–জনতার হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছিল, তারা আজও দায়মুক্ত নয়। এরা ছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বুদ্ধিবৃত্তিক দোসর, যারা বিভ্রান্তিকর বিবৃতি, ন্যারেটিভ এবং মিডিয়া প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে খুনিদের রক্ষা করতে মরিয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: চার প্লাটফর্মে সক্রিয় আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নীল দলের কার্যক্রম
৫ আগস্টের পূর্বে তারাই ছাত্র–জনতা হত্যার নৃশংস সিদ্ধান্তকে উৎসাহিত করেছিল এবং হত্যাকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করার সাম্প্রদায়িক প্রচার চালিয়েছিল উল্লেখ করে শিক্ষকরা বলেন, ইউটিএফ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে আহবান জানাচ্ছে—এই দোসরদের চিহ্নিত করে খুনীদের সহযোগী হিসেবে বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে। কারণ তারাই আজ আবার নতুন করে শেখ হাসিনার এই ঐতিহাসিক রায়ের বিপক্ষে বিবৃতি দিয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিচারকে বানচাল করার লক্ষ্যে দেশি–বিদেশি অপশক্তির ষড়যন্ত্র, আগুন–সন্ত্রাস, চোরাগুপ্ত হামলা, অস্থিরতা সৃষ্টি এবং ভিন্নমতকে দমন করার কৌশল এখনো সক্রিয়। প্রশাসনকে হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা ও সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
বিবৃতির শেষে ইউটিএফ নেতারা বলেন, জুলাই বিপ্লবের আত্মত্যাগের প্রতিফলন এখনই সম্পূর্ণ হবে না—যতক্ষণ পর্যন্ত রায় বাস্তবায়ন, অন্যান্য মামলার নিষ্পত্তি এবং খুনি ও তাদের সহযোগীদের সর্বাত্মক বিচারের আওতায় আনা নিশ্চিত না হয়। আজকের রায় নতুন বাংলাদেশের ন্যায়বিচারের ভিত্তি, আর তার বাস্তবায়ন জাতির প্রতি রাষ্ট্রের দায়।