শখের বসেই ছবি তোলা, এখন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার জবি ছাত্র মুন হৃদয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র মুন হৃদয়। বন্য প্রাণীদের ছবি তুলতে অনেক পছন্দ করেন। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি করেন। তার এই পথচলা, স্বপ্ন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস এর প্রতিনিধি তাওফিকুল ইসলাম হিমেলের সাথে। পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো-
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ ফটোগ্রাফিতে কীভাবে এলেন ?
মুন হৃদয়ঃ আমি যখন বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে ৭ম শ্রেনীতে পড়তাম তখন আমার একটি স্যাম্পোনি মোবাইল ফোন ছিলো। তখন ফোনেই আমার বিভিন্ন রকমের ছবি তুলতে খুব ভালো লাগতো। ধীরে ধীরে বিষয়টি আমার নেশায় পরিণত হয়। যখন শখ নেশায় পরিণত হয় তখন বাবা ২০১৮ সালে আমাকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে প্রথম ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে দেন। এরপর থেকে আমি পশু পাখির ছবির সন্ধানে আমার পরিচিত কয়েক জন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার - খাজা ভাই, আদনান ভাই, বিপ্লব ভাই, পায়েল ভাই তাদের সাথে বিভিন্ন বনে-জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়ানো শুরু করি। তারপর নেশা যখন বেড়েই যাচ্ছিলো ভালো ছবি তোলার জন্য ২০২১ সালে আমার বাবা আমার আগ্রহ দেখে দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে আমাকে আরেকটি ক্যামেরা ও ১টি ল্যান্স কিনে দেন। এভাবেই শুরু হয় আমার আলোকচিত্রি জীবন।
আরও পড়ুন: ঘরে বসেই চাকরি করেন আমেরিকাতে, মাসে আয় লাখ টাকা
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ কেন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফিকেই বেছে নিলেন?
মুন হৃদয়ঃ ছোট বেলা থেকেই আমার পশু-পাখির প্রতি আলাদা রকমের আবেগ ও ভালোবাসা কাজ করতো। যার কারনে যখন আমি ক্যামেরা চালানো শিখলাম,তখন আমি আমার ফটোগ্রাফির জন্য আমার আবেগের বিষয়টিকেই বেছে নিলাম।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ আলোকচিত্রি জীবনে আপনার অর্জন গুলি কী কী?
মুন হৃদয়ঃ ২০১৯ সালে আমি বাংলাদেশের জাতীয় যুব ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা থেকে মেধা তালিকায় উর্ত্তীর্ন হই । ২০২০ সালে ‘৩৫ জাতীয় পুরস্কার’ প্রতিযোগিতায় আমার ছবি ১০০ টি মোবাইল বিভাগে মনোনীত হয়েছে এবং আরও অনেক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় আমার ছবি সেরা হয়েছে । সম্প্রতি ‘ইউনেস্কো সিল্ক রোড’ প্রতিযযোগিতায় আমার একটি ছবি সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হয়েছে যেই প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিলো ইউনেস্কো। আমি ২০২১ সালে জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছি। মজার বিষয় হচ্ছে ৫-৬ টি প্রতিযোগিতায় জিতেছে আমার ১টি মাত্র ছবি যেই ছবির নাম দিয়েছি ‘এঞ্জেল ফল’। ২০২১ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ফেইজবুক, টুইটার ও ইন্সটাগ্রাম অফিসিয়াল পেজে প্রকাশ করেছিল যে ছবির নাম ‘কিস অফ ডেথ’ ।
সম্প্রতি আমি এসসিজি এর ফটোগ্রফি ক্লাবে ডিএসএলআর ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরুষ্কার পেয়েছি। আমি ক্যানন ইন্ডিয়ার অফিসিয়াল পেজে ফিচার পেয়েছি।আমার ছবি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এবং ক্যানন ইন্ডিয়ার ফিচারের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি ২০২২ সালের এপ্রিলে আমি একটি প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার জন্য রাশিয়া থাকার পাশ পাস পেয়েছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ বাংলাদেশে ফটোগ্রাফির ভবিষ্যৎ কেমন দেখেন?
মুন হৃদয়ঃ আসলে ফটোগ্রাফি বলতে শুধু যে সংবাদপত্রের জন্য ফটোগ্রাফি করতে হবে বিষয়টি আর তেমন নেই। এর বাইরেও ফটোগ্রাফারদের কাজ রয়েছে। ফ্রিল্যান্সার ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন ধরণের কাজ করছেন। তারা বিভিন্ন দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করছেন। কেউ আবার ওয়েডিং বা মডেল ফটোগ্রাফি করছেন। জীবনকে ফ্রেমে বন্দি করে রাখতে ফটোগ্রাফারদের চাহিদা নিয়মিত বাড়ছে। তবে চাহিদা বাড়লেও এই ফটোগ্রাফির কোন একটি ধারাকে যদি এখন কেউ নিজের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ হিসেবে নিতে চান তাহলে বর্তমান সময়ে এক ধরণের ঝুঁকি রয়েছে। এখন যে পরিমাণে পেশাদার ফটোগ্রাফার রয়েছেন সে পরিমাণে কাজ নেই। ফলে অনেক বড় বড় ফটোগ্রাফার রয়েছেন যারা প্রয়োজনীয় পরিমাণ কাজ পাচ্ছেন না। এর সবচেয়ে বড় কারণ নতুন ফটোগ্রাফারদের আগমনে সিনিয়রদের কাজের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এতো বেশি ফটোগ্রাফার হয়ে যাওয়ার কারণে এখন পুরোপুরি ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নেওয়াটি খুব বেশি ভরসার জায়গা হবে বলে আমার মনে হয় না। তারপরও যারা পেশা হিসেবে ফটোগ্রাফিকে নিতে চান তাদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে- বিষয়টির ওপর বিস্তর জ্ঞান অর্জন করে তবেই আসবেন। এর ফলে, আপনার কাজের মূল্যায়ন যেমন বাড়বে তেমনি ভবিষ্যতে ভালো কাজ করে যাওয়ার পথ সুগম হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ বিশ্বের কাছে দেশকে তুলে ধরতে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফাররা যথেষ্ট অবদান রাখছেন বলে আপনি মনে করেন কি?
মুন হৃদয়ঃ অবশ্যই। নিঃসন্দেহে ফটোগ্রাফাররা এ কাজটি খুব ভালোভাবেই করছেন। খবরের ছবি হোক আর প্রতিযোগিতার ছবি হোক, দেশের ফটোগ্রাফাররা বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন প্রতিনিয়ত। অনেক কথার চেয়ে বেশি কথা বলে একটি ছবি। সেই ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশকে পৃথিবীর সর্বত্র তুলে ধরছেন ফটোগ্রাফাররা।
আরও পড়ুন: ঘরে বসেই চাকরি করেন আমেরিকাতে, মাসে আয় লাখ টাকা
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফাররা কতোটা জায়গা করতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
মুন হৃদয়ঃ রয়টার্স, এএফপি, এপির মতো বড় ফটো এজেন্সিতে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফাররা দেশে এবং দেশের বাইরে কাজ করছেন। একটা সময় ছিল যখন বিদেশি এনজিওগুলো বাংলাদেশে তাদের কাজের জন্য বিদেশি ফটোগ্রাফার নিয়ে আসতেন। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। তারা বেশির ভাগ ফটোগ্রাফার নেন বাংলাদেশ থেকেই। বাংলাদেশের ফটোগ্রাফাররা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়ে উঠতে পেরেছেন বলেই তারা এ জায়গাগুলো নিতে পারছেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ফটোগ্রাফারদের অর্জন যদি আনুপাতিক হারে হিসাবে করেন তাহলে ফটোগ্রাফিতে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এক নম্বরে রয়েছে।