প্রথম বিসিএসেই প্রশাসন ক্যাডার রূপম

রূপম দাস
রূপম দাস  © টিডিসি ফটো

৩৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার রূপম দাসের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন। রূপম দাস ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসাবে কার্মরত আছেন—

বাড়ির বড় ছেলে হওয়াতে ছোটবেলা থেকেই বাবা মার প্রত্যাশাটা বেশি ছিল। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং মানুষের মত মানুষও হতে হবে। তাই সেই ছোট বেলা থেকেই আমার জীবনের প্রতিষ্ঠিত হবার যাত্রা শুরু ২০০২ সালে ৫ম শ্রেণীতে এবং ২০০৫ সালে ৮ম শ্রেনীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ রচনা প্রতিযোগিতা, কুইজ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কারসহ শতাধিক পুরস্কার ও সার্টিফিকেট পাই।

সেই সাথে ১ম-১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের ১ম স্থান অধিকার বজায় রেখে এসএসসিতে জিপিএ ৫.০০ আক্কলপুর এফইউ পাইলট হাইস্কুল থেকে এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫.০০ পাই। এরপর বাবার ইচ্ছে ছিলো ডাক্তার হয়ে যেনো মানুষের সেবা করতে পারি।

কিন্তু খুব ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ০.৫০ পয়েন্টের জন্য চান্স না হওয়া এবং প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। যেদিন ১ম ক্যাম্পাসে যাই সেদিন থেকে নিজের মনকে শক্ত করার চেষ্টা করি এবং ভাবি এখান থেকেও ভালো কিছু হতে পারে। বাবা মার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি কি না।

আমি ছিলাম জগন্নাথ হলে সেখানে বড় দাদাদের দেখি তারা ভালো ভালো পজিশনে গেছে এখান থেকে। আস্তে আস্তে নিজেকে সামলে নেই ঘোরাঘুরি, গল্প, নতুন বন্ধুদের সাথে। গুটিগুটি পায়ে ৩য় বর্ষে উঠে যাই। এবার আমায় বাবা-মার স্বপ্নের কথা মনে হয় এবং নিজেকে আবিষ্কার করি নতুন করে এবং সীমিত পরিসরে পড়াশুনা শুরু করলাম।

বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় গণিত ও বিজ্ঞানে তেমন কোন সমস্যা ছিলো না। ছোটবেলা থেকে বই পড়ার অভ্যাস থাকায় অনেক উপন্যাস ছোটগল্প কবিতায় বেশ ভালো ছিলাম। যা আমাকে বাংলা সাহিত্যে অনেক সাহায্য করেছিল। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকে ইংরেজি পত্রিকা পড়ার জন্য ইংরেজিতে দক্ষতা খারাপ ছিলো না এবং সাধারণ জ্ঞান থাকে যা আমাদের বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একটু অপ্রিয়।

এবার সেই জিনিসকে প্রিয় করতে সাধারণ জ্ঞান দিয়েই যাত্রা শুরু করলাম চাকরির পড়াশুনা। প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাশাপাশি কারেন্ট আ্যফেয়ার্স, ম্যাপ নিয়ে পড়তাম এবং ক্রমশই সেই অপ্রিয় বিষয় প্রিয় হতে শুরু করল এবং পড়তে পড়তে ভাবতাম ব্যক্তি জীবনে আমাকে সফল হতে হবে। এবার জব সলুউশন ব্যাখ্যা পড়া শুরু করলাম প্রশ্নপত্র সম্পর্কে ধারণা পাবার জন্য।

এভাবে চলতে থাকে এবং ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অনার্সের ভাইভা শেষ করি এবং ২৯ ফেব্রুয়ারি ৩৭তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন আসে। ৯ এপ্রিল অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট নিয়ে আবেদন করার মধ্য দিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু হলো। এরমধ্যে ১৩ এপ্রিল আমার অনার্সের ফল ঘোষণা হয় এবং একটা ভালো সিজিপিএ নিয়ে পাস করলাম।

এরপর শুরু হলো আমার কঠিন সময় একই সাথে মাস্টার্স এবং বিসিএসের প্রস্তুতি। একটা সময় খুব হতাশাই পড়ি, আসলে কি করা উচিত। কারণ মাস্টার্সের চাপটা বেড়ে যাচ্ছিলো আবার এদিকে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি।

হতাশার ভুগতে থাকি আসলে আমায় স্বপ্ন পূরণ হবে তো? মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা এবং বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা কাছাকাছি সময় চলে আসে। আর এই সময়টাতে আমার বাবা-মা এবং কাছের ফেন্ডস আমাকে মানসিকভাবে শক্তি দেয়, অনেক বোঝায়। অবশেষে সেই বহু প্রতীক্ষিত দিন ১২ জুন ২০১৮ সালে আসে আমার জীবনে প্রশাসন ক্যাডার জাতীয় মেধাক্রম ৬০তম।


সর্বশেষ সংবাদ