পড়াশোনা, সংগঠন সবই করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকও হয়েছি
- সুজন চন্দ্র দাস, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৭ PM , আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:১২ PM
মো. রাকিবুল হাসান, টাঙ্গাইলের পাড়দিঘুলিয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহন করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। পিতা মো. ফজলুল হক পেশায় ব্যবসায়ী ও মাতা ফরিদা ইয়াসমিন পেশায় গৃহিণী। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে রাকিব সবার ছোট। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ২০১৩ সালে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সাইন্স বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হয়ে এবং টানা ৮ সেমিস্টার প্রথম স্থান অধিকার করেন। স্নাতকের সিজিপিএ ৩.৯৭। তার কৃতিত্বস্বরূপ প্রতিবছর টানা চারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবৃত্তি পান। স্নাতকোত্তরে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩.৯৬ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন মেধাবৃত্তি লাভ করেন।
২০১৮ সালে লাইফ সায়েন্স অনুষদে স্নাতক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩.৯৭ নিয়ে প্রথম হওয়ার স্বীকৃতিস্বরুপ ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ মনোনয়ন পান এবং ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট হতে স্বর্ণপদক গ্রহন করেন। একই ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৩ সালের ৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে ভাইস চ্যন্সেলর অ্যাওয়ার্ড (স্বর্ণপদক) ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ফরহাদ হোসেনের নিকট থেকে গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে একই ফলাফলের স্বীকৃতি স্বরুপ ১১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইউনিভার্সিটি অ্যাকাডেমিক জিনিয়াস এওয়ার্ড’ এ মনোনীত হয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মাননীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীর-এর নিকট হতে মেডেল গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালে ৮টি এশিয়ান দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত ‘এসকেএ এশিয়ান কুইজ কম্পিটিশন অন ফুড সেফটি’ শিরোনামে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ রাউন্ডে প্রথম হয়ে ‘ফুড সেফটি পার্ফেক্ট’ উপাধি লাভ করেন এবং একই বছর কলকাতায় অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার পরবর্তী পর্যায়ে ‘ফুড সেফটি লিডার ইন এশিয়া’ উপাধি লাভ করেন।
ছাত্র থাকা অবস্থায়ই রিসার্চ এসিসট্যান্ট হিসেবে নিজ ডিপার্টমেন্টে প্রফেসর ড. রোকেয়া বেগমের অধীনে ২০১৮- ২০২১ সাল পর্যন্ত ৩ বছরের একটি গবেষনা প্রকল্পে কাজ করেন। এরপরেই ২০২২ সালে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে নিউট্রিশন এন্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শিক্ষক হওয়ার পেছনের গল্প জানতে চাইলে রাকিবুল জানান, শিক্ষকতা পেশায় আশার পেছনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকবৃন্দ এবং পরিবার বিশেষ করে আমার মা-বাবা। দৈনিক রুটিন ধরে পড়াশোনা করা হয়নি। তবে ক্লাস টেস্টগুলো ভালো করে দিলে সেমিস্টারের অনেকটাই পড়া হয়ে যেত। সেমিস্টারের অন্য সময় খুব রুটিন মেনে না পড়লেও, ফাইনাল পরীক্ষার একমাস আমার কাছে মনে হত মহাযুদ্ধের মতো। পরীক্ষা শুরুর আগে পিএল-এর সময়টা পুরোপুরি কাজে লাগাতাম। বিশেষ করে নোট/ক্লাস লেকচার সব গুছিয়ে নেওয়া। এসব কাজে সব থেকে সাহায্য পেয়েছি আমার বান্ধবী আতিয়া ফেরদৌস স্মৃতির থেকে যার কথা না বললেই নয়।। সেমিস্টার চলাকালীন সময়ে খাওয়া, ঘুম, গোসল মানে যে কাজগুলো না করলেই নয় সেগুলো বাদে বাকি সময়টা পড়তাম।
তিনি আরো জানান, ভালো রেজাল্টের জন্য যেভাবে ইফোর্ট দিতে হয় সেভাবেই দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কেবল পড়ালেখা করেছি সেটা না। আমি আমার বিভাগের প্রতিষ্ঠিত নিউট্রিশন ক্লাব এর প্রতিষ্ঠাকালীন ও টানা দুই মেয়াদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। দায়িত্ব পালনকালে জাতীয় পর্যায়ে ক্লাবের বিভিন্ন অর্জনও হয়েছে। যেমন, বিভিন্ন বছরে অনুষ্ঠিত নিউট্রিশন অলিম্পিয়াডে আমার ক্লাব বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ান ক্রেস্ট অর্জন করেছে। এছাড়াও টাঙ্গাইলের স্বনামধন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ত্রায়ক’ এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবেও কাজ করেছি। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় রোটার্যাক্ট ক্লাবের কুইজ প্রতিযোগীতায় আন্তঃবিভাগ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ান ক্রেস্ট পাই।
রাকিবুল বলেন, ছাত্র থাকাকালীন নিজ বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন কনফারেন্স, সেমিনার, ওয়ার্কশপ উপস্থাপনা করেছি। আরও বড় পরিসরে এই দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চাই। তবে একটা কথা না বললেই না। আমার দৃঢ় একটা সংকল্প হচ্ছে আমি শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষক হতে চাই। আমি ছাত্র হিসেবে যেসব জিনিসগুলোর অভাব বোধ করেছি আমার ছাত্ররা যেন সেসব জিনিসগুলো পায়, সেটার খেয়াল রাখব। ছাত্রদের যেন আমার দ্বারা কোন হয়রানি বা ভোগান্তি না হয় সেটার বিশেষ খেয়াল আমি রাখব। শিক্ষকতা পেশার আদর্শ কে ঠিক রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। উচ্চশিক্ষার (পিএইচডি) নিয়ে আর নিজের গবেষনার দক্ষতা বাড়াতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা পেশায় যারা আসতে চায় তাদের উদ্দেশ্য বলেন, নতুন যারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী বিশেষ করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যারা এখানে শিক্ষকতা পেশায় আসতে চায় তাদের জন্য বলবো, শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাইলে অবশ্যই সবার আগে রেজাল্ট খুব ভালো করতে হবে। আর পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের প্রেজেন্টেশন স্কিল বাড়াতেই হবে। কথা বলা, বিশেষ করে ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর এখন যেহেতু শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি আগের মত নেই। অনেক গুলো স্ক্রিনিং পার হয়েই শিক্ষক হতে হয় তাই এখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই নিজের একাডেমিক রেজাল্টের পাশাপাশি অন্য স্কিলগুলোও ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। আমি পড়াশোনা, সংগঠন সবকিছুই করেছি অবশেষে জয়ীও হয়েছি ।”
রাকিবুলের বাবা মো. ফজলুল হক বলেন, ইচ্ছে ছিলো আমার ছেলে রাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে; কয়দিন আগেই আমার ছেলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছে। আল্লাহতালার উপর অনেক কৃতজ্ঞ। তার উপর কেউ আস্থা রাখলে তিনি কাউকে নিরাশ করেন না।
উল্লেখ্য, মো. রাকিবুল হাসান এবছরের ২০ জানুয়ারি নিয়োগপত্র পেয়ে একই দিনে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সাইন্স বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।