প্রথম বিসিএসেই সাফল্য ছাত্রলীগের মিছিল-সভায় সক্রিয় থাকা তূর্যের

মো. নাঈম পাহলান তূর্য
মো. নাঈম পাহলান তূর্য  © টিডিসি ছবি

সমাজে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা আছে যেমন পড়াশোনা ও রাজনীতি একসঙ্গে করতে গিয়ে পিছিয়ে পড়তে হয় বা সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি করলে চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব না—ইত্যাদি। কিন্তু এ ধারনা ভুল প্রমাণ করে প্রথম বিসিএসেই শিক্ষা ক্যাডারের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. নাঈম পাহলান তূর্য।

সম্প্রতি ৪১তম বিসিএসে ২ হাজার ৫২০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে মেধাতালিকায় ১৪তম স্থান অধিকার করেছেন তিনি।

তূর্য সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের (জয়-লেখক কমিটির) সদস্য ছিলেন। এর আগে জবি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বিভাগে ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ছিলেন। ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে সক্রিয় থেকে শুধু বিসিএসে সাফল্য নয়। বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলেও অবস্থান প্রথম সারির দিকে।

পড়াশোনা, রাজনীতি ও চাকরির প্রস্তুতি— সবগুলো একটা রুটিন মাফিক করতেন তূর্য। বন্ধু কিংবা রাজনৈতিক সহপাঠীদের সঙ্গে অযথা আড্ডা দিয়ে সময় অপচয় করতেন না তিনি। তার এই সাফল্যের পেছনে এটাই সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করছেন জবির সাবেক এই শিক্ষার্থী।

জানা যায়, ক্যাম্পাস জীবনের শুরু থেকেই বিভাগের পড়াশোনা, রাজনীতি ও চাকরির প্রস্তুতি— সবগুলো একটা রুটিন করেই নিয়মিত পালন করতেন তূর্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল না থাকায় থাকতেন রাজধানীর রামপুরায়। প্রতিদিন সকাল ৮টায় বাসা থেকে যেতেন ক্যাম্পাসে। তারপর ১১টা পর্যন্ত বিভাগের ক্লাস-পড়াশোনায় সময় দিতেন, এরপর বেলা ৩টা পর্যন্ত রাজনীতিতে সময় দিতেন। পরে বিকেল ৩টার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ও উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে চাকরিকেন্দ্রিক পড়শোনা করতেন। এর ফাঁকে সময়ে পেলে সামাজিক ও সাংস্কৃতি সংগঠনেও সময় দিতেন তিনি। 

তূর্য বলেন, আপনারা জানেন আমাদের ক্যাম্পাসটি ছোট। মেয়েদের একটি হল ছাড়া নেই কোন আবাসিক সুবিধা। তাই বেলা ১১টা থেকে ‍শুরু হয়ে বিকেল তিনটার মধ্যে রাজনৈতিক সব কর্মসূচি শেষ হয়ে যেতো। এরপর যে যার মতো করে চলে যেতেন। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, কেউ টিউশনি কিংবা কেউ পড়াশোনা করে বাকি সময়টি পার করিয়ে দিতেন। আমি প্রথম বর্ষ থেকে সকাল ৮টায় বাসায় থেকে বের হতাম, রাত ১০টার পর ফিরতাম। এরমধ্যে পড়াশোনা, রাজনীতি ও চাকরির প্রস্তুতি— সবগুলো একটি রুটিন অনুযায়ী করতাম।

তিনি বলেন, আমার আত্মীয় স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকেই ভেবেছিলেন ছাত্রলীগের পেছনে যেভাবে সময় দিয়েছি তাতে আর যা চাকরিই হোক না কেন বিসিএস সম্ভব না। কিন্তু বাবা-মা ও পুরো পরিবার পরিবার আমার উপর আস্থা রেখেছিল। আল্লাহর অশেষ রহমত, আমার কঠোর পরিশ্রম ও পরিবারের সর্বাত্মক সহযোগিতায় প্রথম বিসিএসসে কৃতকার্য। তাছাড়া ৪৩তম ও ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও দেওয়া আছে। 

নিজ বিভাগের ফলাফলেও উজ্জল তূর্য। ২০১৪-১৫ সেশনের বিভাগের এই শিক্ষার্থীর স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে ৩য়, সিজিপিএ-৩.৬৬ এবং ২০১৮-১৯ সেশনের স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম, সিজিপিএ-৩.৯৩।

যারা বিসিএস দিতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সফলতার কোনো সহজ পথ নেই। কঠোর না, আমি বলবো অমানুষিক পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম করে যান ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবেই।

রাজনীতি করলে পড়াশোনা করা যায় না— এমন ধারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কি ২৪ ঘন্টাই রাজনীতি করি, না? বাকি সময়টা আড্ডা কিংবা অযথা সময় নষ্ট করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন, ‘আগে পড়াশোনা, পরে রাজনীতি’। ক্যাম্পাসের শেষের দিকে আমাদের সম্মেলন, নতুন কমিটি ইত্যাদি নিয়ে সময় বেশি দিতে হতো। তারপরও তো পড়াশোনা করেছি। সঠিকভাবে পরিশ্রম দিয়েছি।


সর্বশেষ সংবাদ