সাবেক ছাত্রনেতাদের কদর বাড়ছে বিএনপিতে
২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তারুণ্যনির্ভর দল গঠনের কথা বলেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দলটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতের সকল আন্দোলন সংগ্রামে তরুণ-যুবকদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। আগামীতেও যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে হলে এ তরুণদের সামনে আনার বিকল্প নেই।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে প্রায় শতাধিক তরুণ নেতা তথা ছাত্রদলের সাবেক নেতাদেরকে পদায়ন করা হয়েছে। ধারাবাহিকতায় তারুণ্যনির্ভর দল গড়তে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের কদর বাড়ছে বিএনপিতে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে জাতীয় স্বার্থে পদহীন ছাত্রদলে সাবেক নেতাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা হচ্ছে।
বিশেষ করে ৯০’র দশকে ছাত্রদলের যেসব সাহসী নেতা সক্রিয় ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে দীর্ঘদিন পদহীন তাদেরকে মূল্যায়ণ করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ।
আরও পড়ুন: সহাবস্থান প্রশ্নে আপোষহীন ছাত্রদল, ছাত্রী হলে প্রার্থী সংকট!
তরুণদেরকে দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের মানুষ আজ ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সংবিধান স্বীকৃত সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত। এমতাবস্থায় দেশবাসী তাদের সব ধরনেরর অধিকার ফিরে পেতে বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে।
বর্তমানে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যেই আছে জানিয়ে ফখরুল আরও বলেন, এ আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে হলে তরুণ-যুবকদের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য আমরা সারাদেশের তরুণ যুবসমাজকে সংগঠিত করছি। যারা দীর্ঘদিন দলের বাইরে রয়েছেন তাদেরকে দলে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
গত ২৫ জানুয়ারি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন নব্বই দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা বেনজীর আহমেদ টিটো। এর আগে তার মতো ছাত্রদলের সাবেক শতাধিক নেতাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। এতে করে যেসব ছাত্রনেতা এখনো দলের সাথে সম্পৃক্ত অথচ পদে নেই তারা আশার আলো দেখছেন। তারা মনে করছেন দীর্ঘ ২০ বছর পর টিটোকে গুরুত্ব দিলো বিএনপি।
আরও পড়ুন: পুলিশ দেখেই কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে স্থান ত্যাগ করলো ছাত্রদল
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেলে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন বেনজীর আহমেদ টিটো। আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেলের আঘাতে তার ৮টি দাঁত ভেঙে যায় তার। বর্তমানে বিএনপির প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন টিটো। তবুও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন সবসময়।
এছাড়া বিগত ওয়ান ইলেভেনের সরকারের আমলে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন এ টিটো।
বেনজীর আহমেদ টিটো বলেন, আমাকে দীর্ঘদিন পর হলেও মূল্যায়ণ করায় আমি দলের হাইকমান্ডের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাকে মূল্যায়ণের মাধ্যমে একটি বিষয়টি পরিষ্কার হলো যে, যারা দলের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং ধৈর্য ধরতে জানে তাদেরকে যেকোনো সময় মূল্যায়ণ করা হবে। যারা আমার মতো বহুদিন ধরে দলীয় পদের বাইরে রয়েছেন এটি তাদের জন্য একটি শুভ বার্তা।
এর আগে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে খুলনা বিভাগের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে তিনি একই বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এভাবে সম্প্রতি কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুল। আগে তিনি বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
আরও পড়ুন: কেউ হামলা করেনি, অ্যাম্বুলেন্সের হর্নে ছাত্রদল পালিয়েছে: লেখক
তরুণ ও সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়নের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যারা রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ঠ ও সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন তাদেরকে নেতৃত্বের সামনের সারিতে নিয়ে আসার দায়িত্ব আমাদের সিনিয়রদের। সেইসাথে অতীতের আন্দোলন সংগ্রামে যারা সফলতা দেখিয়েছেন কিন্তু দলের সাথে সম্পৃক্ততা নেই তাদেরকেও মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
এদিকে, বেনজীর আহমেদ টিটোসহ কয়েকজনকে মূল্যায়ণের খবরে আশার আলো দেখছেন ছাত্রদলের সাবেক আরও অসংখ্য নেতা। নেতৃত্বের সামনের সারিতে আসার জন্য অপেক্ষায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মনির হোসেন, সাঈদ ইকবাল মাহমুদ, ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মশিউর রহমান মিশু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ আরও অনেকেই।