তিন মাসের কমিটিতে ২ বছর পার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে। তিন মাসের জন্য গঠিত আহ্বায়ক কমিটি দুই বছর পার করেছে। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় সংগঠনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৯১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে। সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পান মো. আমানউল্লাহ আমান। কমিটি ঘোষণার পর বিদ্রোহীদের বিরোধীতায় বেশ বেগ পোহাতে হয় তাদের। ওই সময় টানা চারদিন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ও নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
আহ্বায়ক কমিটিকে ১ মাসের মধ্যে হল কমিটি করে কেন্দ্রের কাছে জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার করে ২২ মার্চ ২০২০ সালে ১২টি হলের আংশিক কমিটি গঠন করতে সক্ষম হন শাখা ছাত্রদল। সমন্বয়হীনতার কারণে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের কমিটি ও কর্মী সংকটের কারণে পাঁচটি ছাত্রী হলে কমিটি দিতে পারেনি তারা। একই কারণে কমিটিও পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি হল শাখার আংশিক কমিটির নেতারা।
দীর্ঘদিন ধরেই কয়েকটি বলয়ে বিভক্ত ছাত্রদলের রাজনীতি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে আহ্বায়ক-সদস্য সচিব একই বলয় (টুকু গ্রুপ) থেকে হওয়ায় বঞ্চিতদের সঙ্গে নানা বিষয়েই মতবিরোধ দেখা দেয়। ফলে সাংগঠনিক কাজেও নামে স্থবিরতা।
আরও পড়ুন- ঢাবি ছাত্রদল: নবীনদের বরণে কর্মসূচি নেই, নেতাকর্মীদের ক্ষোভ
সম্প্রতি শাখা ছাত্রদলের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নেতাকর্মীরা আহ্বায়ক-সদস্য সচিবের সমালোচনা করে নতুন কমিটির দাবি জানান। সূত্র জানায়, বিশৃঙ্খলা এড়াতে আহ্বায়ক-সদস্য সচিবকে সভায় বক্তব্য দিতে দেয়নি কেন্দ্রীয় কমিটি।
বিবাহিত ছাত্রীদের হলে না থাকার ইস্যুতে নীরব ছিলো ছাত্রদল। যদিও আহ্বায়ক রাকিব দাবি করেন, ১৪ ডিসেম্বর তারা এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু সংগঠনের বাকীরা এ দাবি নাকচ করে দেন। তারা বলেন, এ নিয়ে শাখা ছাত্রদল থেকে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে কোনো কর্মসূচিও পালন করেনি সংগঠনটি। এছাড়া করোনা মহামারির পর ক্যাম্পাস খুলে দেয়া, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানো ছাড়া শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি ছাত্রদলকে। মধুর ক্যান্টিনে সময় দেয়া, সন্ধ্যায় টিএসসিতে আড্ডা-ছবি তুলে সময় পার করেন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পরও বিভিন্ন হলের বেশ কয়েকজন কমিটিতে স্থান পাননি। কমিটি বর্ধিত করে তাদের অন্তর্ভূক্তির দাবি থাকলেও সেটি পূরণ করা হয়নি। এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক জানান, আহ্বায়ক-সদস্য সচিব দুইজনই আমাদের কারো সাথে কোনো পরামর্শ করেন না। নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো সংগঠন চালাচ্ছেন। এখন নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনেও আসেন না। কমিটি হওয়ার পর সব কমিটিই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য সভা করেছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এমন কোনো আয়োজন ছিলো না। এখন পর্যন্ত কোনো সাধারণ সভা হয়নি। তাদের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে এস এম হলের কমিটি এখন পর্যন্ত হয়নি।
নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, আহ্বায়ক রাকিব কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে আসার জন্য লবিং তদবিরে ব্যস্ত। দিনের বেশিরভাগ সময় তিনি এক্ষেত্রে ব্যয় করেন। অন্যদিকে বারবার গ্রুপ পাল্টানোর কারণে অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়েছেন সদস্য সচিব আমান। যার কারণে ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক কার্যক্রমে তিনি আগ্রহ হারিয়েছেন।
আরও পড়ুন- কেএএসওয়াইপির ফেলো নির্বাচিত হলেন ঢাবি ছাত্রদল নেতা দ্বীন
সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকীর পরামর্শে সদস্য সচিব আমান কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুল রহমান খোকনের গ্রুপে যোগ দেন। কিছুদিন পর আবার সিনিয়র সহ সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের গ্রুপে ফেরেন তিনি। এসময় বাশার সিদ্দিকীর অনুসারীরা তাকে ত্যাগ করে। শ্রাবণের গ্রুপে সুবিধা করতে না পেরে বর্তমানে তিনি আহ্বায়ক রাকিবের সাথে জোট বেঁধেছেন। এভাবে বারবার গ্রুপ বদলের কারণে তার পক্ষের কর্মীরা তাকে ছেড়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে, শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে রাকিব-আমান দুইজনকেই শোকজ করেছিলো কেন্দ্রীয় কমিটি। টিএসসিতে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের সাথে ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিনের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে ছিলেন আহ্বায়ক রাকিব। এ ঘটনায় তাকে শোকজ করা হয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে হাতাহাতিতে জড়িয়ে ছিলেন সদস্য সচিব আমান। কেন্দ্রীয় সভাপতি খোকনের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে শোকজ নোটিশ পেয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালেয়ে ছাত্র সংগঠনে জড়াতে নিষেধাজ্ঞা!
এ সব বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, শিক্ষাথীদের জন্য কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম কিন্তু ভিসি ও প্রক্টর স্যার আমাদের নিরুৎসাহিত করেছেন যাতে কোন কর্মসূচি না দেই। আমরা ক্যাম্পাস খোলার পরের দিন মধুতে গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগ আমাদের বাধা দেয়। প্রক্টর স্যার আমাদের ফোন দিয়ে মধুতে ঢুকতে নিষেধ করে। যার কারণে আমরা সেরকম কোন কর্মসূচি পালন করতে পারিনি। দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ কেউ করতেই পারে। কিন্তু সেটা আপনাদের না বলে আমাদের সংগঠনের বৈঠকে তো বলতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমানকে কল দিলে তিনি বলেন, মিটিংয়ে আছেন। পরে কথা বলবেন।
এদিকে শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে আমরা কর্মীসভা করেছি। কাজ চলছে।