ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণ, বন্ধ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান  © টিডিসি ফটো

করোনাভাইরাসের বন্ধের পর সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ আসছে। কোথাও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুগ্রুপের সংঘর্ষ হচ্ছে। কোথাও শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগও উঠছে। ​এতে বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে আবারও অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভালো কাজের জন্য ছাত্রলীগ গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে- নিকট অতীতে এমন নজির খুঁজে পাওয়া ভার। এমন বেপরোয়া আচরণে সংগঠনটির ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশও বিঘ্ন হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়গুলোর খবর বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৩০ নভেম্বর কুয়েটের লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. সেলিম হোসেনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। হলে পছন্দের ডাইনিং ম্যানেজার নিযুক্ত করার জন্য প্রাধ্যক্ষকে চাপ দিয়ে আসছিল ছাত্রলীগের প্রভাবশালী কর্মীরা। এরা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করলে মানসিক প্রতিক্রিয়ায় তার মৃত্যু ঘটে বলে পরিবার ও সাধারণ ছাত্রদের অভিযোগ।

এর এক মাস আগে ৩০ অক্টোবর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি-সংঘর্ষের ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক)। প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আঘাত পান কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহাদি জে আকিব। কঠিন আঘাতে ভেঙে যায় আকিবের মাথার হাড়।

মহামারি পরিস্থিতিতে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সংঘর্ষের কারণে গত আড়াই মাসের মধ্যে এক মাসই বন্ধ ছিল চমেক। পরে ২৭ নভেম্বর ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুয়েট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত রবিবার ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনায় রাতেই কলেজ কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজের হল বন্ধ ঘোষণা করেছে।

এছাড়াও রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের চলমান নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও ছাত্রলীগের বাধা দেওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে আসে। ২০১৮ সালে শিশু-কিশোরদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মিছিলে হামলা হলেও এবার ছাত্রলীগ বাড়াবাড়ি করছে না।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গত ৫ বছরে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটিয়েছিল বুয়েটে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েট ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে আবরার ফাহাদ নামের এক ছাত্রের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এরপর তার লাশ উদ্ধার হয়।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রলীগ ৫০ লাখ নেতাকর্মীর বিশাল এক সংগঠন। এখানে বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি, তা বলার সুযোগ নেই। তবে যখনই এমন কোনো খবর এসেছে আমরা অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে গিয়েছি।