ছাত্র আন্দোলনের ভয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে সরকার
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:৪১ PM , আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:৫৮ PM
সরকার করোনাকে ভয় পায় না বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে দুর্নীতি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের করা প্রতিবাদকে ভয় পায় বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শোভন রহমান। বৃহস্পতিবার (০২সেপ্টেম্বর) বেলা ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এর সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
একই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে এবার সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলার হুশিয়ারি দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও করোনাকালীল বেতন ফি মওকুফ করার দাবিতে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সমাবেশটির আয়োজন করে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরি জয় এর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্স, ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিব গান্ধী রায়, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শোভন রহমান, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মুক্তা বারৈ ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রোখসানা আফরোজ আশা প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্স বলেন, আজকে এই সরকারের মন্ত্রীরা বড় বড় কথা বলে টিকাকে একটা তামাশায় পরিণত করেছে। গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে যে এখন পর্যন্ত কত সংখ্যক টিকা এসেছে এবং কত সংখ্যক টিকা দেওয়া হয়েছে তার কোন পূর্ণাঙ্গ হিসেব এই সরকারের কাছে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য যে বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা দেওয়ার কথা ছিল, আমরা দেখেছি সেটা নিয়েও নানান টালবাহানা করা হয়েছে।
আজকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির মিটিং এর সময় আমরা দেখেছি ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল যেন সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেওয়া হয়। অতঃপর আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় না খোলার প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা প্রতীকী ক্লাস নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গতকাল আমরা দেখেছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতীকী অনশন পালন করেছিল কিন্তু ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ সেখানে নির্মমভাবে হামলা চালিয়েছে। আজকে আমরা বলতে চাই যে, এই হচ্ছে ছাত্রলীগের চরিত্র। আজকে যখন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে ছাত্ররা রাজপথে নামে তখন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যে, বিশ্ববিদ্যালয় খুললে নাকি অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। কার বিরুদ্ধে অস্থিতিশীলতা?
আপনারা দেখেছেন যে, এই সরকারের মাস্ক খাতে কেলেঙ্কারি, স্বাস্থ্য খাতে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার যে কেলেঙ্কারি, বিভিন্ন রকমের যে মেগা প্রকল্প সেখানে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি লুটপাটের যে খবর বেরিয়ে এসেছে তার বিরুদ্ধে যেন ছাত্ররা কোন প্রতিবাদ করতে না পারে,কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে সেই শঙ্কা থেকে ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় খুললে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। সেজন্য ছাত্রলীগকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা আজকের এই সমাবেশ থেকে তার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এবং এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই যে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে সরকারের দুর্নীতি- দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
এছাড়াও তিনি বলেন করোনাকালীল সময়ে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে। হাজার হাজার মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের করোনা কালীল বেতন ফি মওকুফ করতে হবে এবং অবিলম্বে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।
করোনার ভয়াবহতা উল্লেখ পূর্বক সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শোভন রহমান বলেন, সরকার করোনাকে ভয় পায় না বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে দুর্নীতি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের করা প্রতিবাদকে ভয় পায়।
কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মুক্তা বলেন,তাঁরা স্কুল কলেজ খোলা নিয়ে নানান ছলনা করে শিক্ষার্থীদের সাথে খেলা খেলছে। তাদের এই একের পর এক শিক্ষা বিরোধী কর্মপরিকল্পনার বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
সাংগঠনিক সম্পাদক রোখসানা আফরোজ আশা বলেন, সরকারি হিসেব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে করোনার প্রকোপ প্রতিনিয়ত কমছে। এমতাবস্থায় দোকান পাট খোলা, পার্ক খোলা, গার্মেন্টস খোলা কিন্তু শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। আপনারা বলেছেন, ১০০ শতাংশ টিকা দিয়ে তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবেন কিন্তু আপনারা কি টিকার হিসেব দিচ্ছেন? গত এক বছরে কত টিকা এসেছে কোথা থেকে এসেছে কিছু কি জানিয়েছেন? আসলে আপনারা ভয় পান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আপনাদের কী হবে সেটা নিয়ে।
পূর্ববর্তী বক্তাদের সাথে মিল রেখে সভাপতির বক্তব্যে আল কাদেরি জয় বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সরকারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হবে সেটাকেই এই সরকার ভয় পায়।