নতুন ভোরের প্রতীক্ষায় ছাত্রনেতা সাদ

এক বছরে অক্সিজেন সেবা পেয়েছেন ৭৬৫৯ জন

সাদ বিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’
সাদ বিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’  © টিডিসি ফটো

একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষায় সারাদেশে করোনায় আক্রান্তদের দ্বারে দ্বারে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক স্বাধীনতা, সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’। গত এক বছরে ৭ হাজার ৬৫৯ জন করোনায় আক্রান্ত রোগীর কাছে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

শুরুতে ১২টি সিলিন্ডার দিয়ে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে প্রায় ১৪০টি সিলিন্ডার রয়েছে তাদের৷ এছাড়াও এই উদ্যোগে ১৫০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন। বিভাগীয় শহরের মধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী এই সেবা সরাসরি সংগঠনটির সেচ্ছাসেবকরা পৌঁছে দেন। জেলা শহরের মধ্যে ফেনী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এই সেবা বিদ্যমান৷

অন্যদিকে যেসব জেলা শহরে সরাসরি সেবা নেই সেখানে কুরিয়ার যোগে বা কোন এম্বুলেন্স ওই জেলা গেলে সিলিন্ডার পাঠিয়ে দেন তারা।

অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠানোর জন্য এমনকি কোন যাতায়াত ভাড়াও নেননা তারা। এমনকি কোন জামানতও জমা দিতে হয় না। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন থাকা সাপেক্ষে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই সেবাটি মানুষের বাসায় পৌঁছে দেন।

নিজেরাই রোগীর দ্বারে গিয়ে এই সেবা পৌঁছে দেন বলে জানিয়েছেন ‘বিনামূল্যে জয়বাংলা অক্সিজেন সেবা’র প্রধান সমন্বয়ক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী।

করোনার এই প্রকোপে সেবা প্রদানকালীন স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে প্রায় ২০ জন এবং সাদ বিন কাদের চৌধুরীর পুরো পরিবার করোনাক্রান্ত হলেও তাদের সেবা থেমে যায়নি কখনো।

সাদ বিন কাদের বলেন, যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি আমরা সেসব জেলা অক্সিজেন সেবা চালুর চেষ্টা করি। সেক্ষেত্রে যেসব জেলায় সংক্রমণ কমে গেছে সেসব জেলা থেকে আমরা অধিক সংক্রমিত জেলার দিকে মুভ করি।

আর্থিকভাবে কেউ সহযোগিতা করছে কিনা কিংবা ফান্ডের উৎস জানতে চায়লে সাদ বলেন, আমরা আর্থিক লেনদেন করিনা। কেউ কোন পণ্য দিলে আমরা শুধু সেটি গ্রহণ করি। কেউ অক্সিজেন রিফিলে সহযোগিতা করতে চাইলে আমরা রিফিল সেন্টারের সাথে কানেক্ট করিয়ে দেই। আমরা আর্থিক লেনদেন কে নিরুৎসাহিত করে থাকি। আমরা প্রতিমাসে একবার করে অক্সিজেন সেবার সামগ্রিক বিবরণী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদান করে থাকি। আমরা বিশ্বাস করি কাজের স্বচ্ছতা কাজকে গতিশীল করে।

সাদ বলেন, এত দীর্ঘসময় মানুষের ভালবাসা ছাড়া এধরণের একটি কাজ পরিচালনা করা অসম্ভব। ভালবাসার কোন বিনিময় হয় না। মানুষের ভালবাসায় জন্যই আমরা দীর্ঘ সময় এই কাজটি পরিচালনা করতে সম্ভব হয়েছি। মানুষ যখন বলে আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার এর উসিলায় উনি বেঁচে গেছেন, পুনরায় জীবন ফিরে পেয়েছেন তখন এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর হতে পারে না। যদিও হায়াতের মালিক সৃষ্টিকর্তা।

যতদিন সংকট থাকবে ততদিন এই সেবা চালিয়ে যাবেন বলেও জানান ছাত্রলীগের এই নেতা।

তিনি আরও জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির শুরু থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। নেত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরণের জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে মানুষের পাশে থেকেছে। সে ধারাবাহিকতায় মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা চালু করি বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা।

অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মানুষের ভালবাসার জন্যই এই সংগ্রামের পথ আমরা পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছি। আনন্দ যেমন দেখেছি, ঠিক তেমনি আর্তনাদের সাক্ষী হয়েছি। অন্যের প্রিয়জন হারানোর বেদনা আমাদের ব্যথিত করেছে। অনেক সময় রোগির চাপ এতো বেশি থাকে যে সবাইকে আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে পারিনা। এই সময় আমরা দোকান থেকে ভাড়া নিয়ে এবং ভাড়ার মূল্য পরিশোধ করে সেবা দিয়ে থাকি। কিন্তু কিছু সময় থাকে যখন তাদের কাছেও সিলিন্ডার থাকে না। তখন আমরা অতিরিক্ত এই রোগিদের আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারিনা। তখন আমরা ব্যথিত হই। এই বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের।

ছাত্রলীগের এই নেতা আরও বলেন, এই মহামারীতে অনেকে তার প্রিয়জন হারিয়েছেন। এই হারানোর লাইনটা আর দীর্ঘতর না হোক সেটি প্রত্যাশা। গতবছর ২৫ জুন থেকে আমরা এই সেবা চালু করি। মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে দিনে ২৪ ঘন্টা এবং সপ্তাহে ৭ দিন সেবা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের অন্তপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক বন্ধুদের জন্য এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং চেষ্টা করে যাব। সংকট শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই সংগ্রাম জারি থাকবে ইনশাল্লাহ।

সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্র সংগঠনগুলোও তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অনেকে ইতোমধ্যে তাদেরকে অক্সিজেনের ফেরিওয়ালা নাম দিয়েছেন।

সাদ বলেন, আমার বিশ্বাস করি করোনামুক্ত যে নতুন ভোরের স্বপ্ন আমরা দেখি সে ভোর খুব বেশি দূরে নয়। দুঃখের অমানিশা ভেদ করে সুখের সোনালী সূর্য আবার ফিরে আসুক সেই প্রত্যাশয়। এই অন্ধকারে আলো হয়ে মানুষের পাশে থাকবে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা।


সর্বশেষ সংবাদ