ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি পলাশ হত্যার ১৮ বছর
মঞ্চে দাঁড়িয়ে জীবনের শেষ বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘যতবার হত্যা করো জন্মাব আবার, দারুণ সূর্য হব, লিখব নতুন ইতিহাস।’
শেষ উক্তিটিই যে এমন সত্যে রূপ নেবে কেউ জানতোনা। অসম্ভব মেধা, রাজনৈতিক ধীশক্তি, উন্নতচরিত্র, অমায়িক ব্যবহারই কাল হয়েছিলো ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এসআর পলাশের। অতি জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত ঘাতকের বুলেটে জীবন দিতে হয়েছিল নব্বইয়ের দশকের এই ছাত্রনেতাকে। এসআর পলাশের পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায়। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভর্তি হননি। ঢাকা কলেজ আর ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতিকে ভালবেসে স্নাতকে ভর্তি হন ঢাকা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে।
পরবর্তীতে নেতৃত্বে আসেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের। ১৯৯৮ সালে গঠিত ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ ও ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।
ছাত্র রাজনীতিতে আসার আগে বিটিভিতে প্রচারিত জনপ্রিয় ‘জ্ঞান জিজ্ঞাসা’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করতেন তিনি। সবশেষ দায়িত্ব পালন করেন ২০০২ সালের শেষ সময় পর্যন্ত। ২০০৩ সালে দায়িত্ব পান ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের।
আরো পড়ুন বশেমুরবিপ্রবি ভিসি অবরুদ্ধ
তবে বেশি দিন আর সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। ২০০৩ সালের (১৬ জুন) আজকের এই দিনে সন্ত্রাসীদের নির্মম গুলিতে নিহত হন তিনি। দিনটি ছিল সোমবার। রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে নিহত হন তিনি।
দায়িত্ব পরায়ণ ও কর্মী বান্ধব এই ছাত্রনেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও সাথে থাকা সঙ্গী দুজনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তারা ঠিক আছেন কিনা! তাদের শরীরেও গুলি লেগেছে কিনা!
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নিহতের খবর কলেজে পৌঁছালে শুরু হয় আন্দোলন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশে সারা দেশেই আন্দোলন চলতে থাকে। পরবর্তী ১৮ ও ১৯ জুন সারাদেশে পালিত হয় হরতাল।
অতি জনপ্রিয়তাই তাঁর অকাল মৃত্যুর কারণ হয়েছে উল্লেখ করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের ১৯৯৮ সালের কমিটির সহ-সম্পাদক সৈয়দ রেজওয়ানুর রহমান বলেন, সবাই তাঁকে অনেক পছন্দ করতেন। তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। সারাদেশের ছাত্রসমাজের জন্য একজন রোল মডেল ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে উনার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি ছিল।
এসআর পলাশ ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালীন কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন মো. সায়েম ইবন ইসলাম অনিক। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বপালন করেন তিনি। বললেন, তিনি স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে রাজনীতি করেছেন। দলের জন্য কাজ করেছেন, দলকে কিভাবে গোছানো যায় সেই কাজগুলোই করেছেন।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফুয়াদ হাসান পল্লব বলেন, পলাশ ভাইয়ের হাতেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। তৎকালীন সময়ে একজন জনপ্রিয় ও কর্মী বান্ধব নেতা ছিলেন। তিনি আজীবন আমাদের অন্তরে রয়ে যাবেন।
প্রতিবছর আজকের এই দিনে এসআর পলাশের স্মরণে ঢাকা কলেজে আলোচনা অনুষ্ঠান ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এবার সীমিত পরিসরে দোয়া অনুষ্ঠান ও রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী করবস্থানে এসআর পলাশের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ।