৪৫ জনের মধ্যে ৩৪ জনেরই পদত্যাগ, অভিযোগ গ্রুপিং
- ইরফান এইচ সায়েম
- প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২০, ১০:২১ PM , আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২০, ১১:০০ AM
গ্রুপিং দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সদ্য ঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আংশিক কমিটির ৪৫ জনের মধ্যে ৩৪ জনই পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। যা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হওয়ায় কমিটি ঘোষণার ৫ দিনের মাথায় তা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে ২ নভেম্বর দুই মহানগরের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার, কেন্দ্রীয় পরিষদ। ১ বছর মেয়াদি এ কমিটিতে উত্তরের সভাপতি হিসেবে মোল্ল্যা রাহমাতুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাদ্দাম হোসেনকে নির্বাচিত করা হয়। আর দক্ষিণের শাহ মুহম্মদ সাগরকে সভাপতি ও নাজমুল করিম রিটুকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। এর মধ্যে উত্তরের আংশিক কমিটিতে ২১ জন এবং দক্ষিণের আংশিক কমিটিতে ২৫ জনকে পদ দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু কমিটি দুটি ঘোষণার পরপরই বিদ্রোহ শুরু করে স্বয়ং পদ পাওয়া নেতারা। এ নিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রকাশ্যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমিটি ঘোষণার পর থেকে শনিবার (৭ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত আংশিক কমিটি দুটিতে পদ পাওয়া ৪৫ জনের মধ্যে ৩৪ জনই পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে দুই মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রয়েছে। বেশ কয়েকজনের পদত্যাগ পত্রের কপি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের রয়েছে।
পদত্যাগ পত্র জমা দেয়ার একজন উত্তরের সভাপতি হিসেবে মোল্ল্যা রাহমাতুল্লাহ। কেন্দ্রীয় আহবায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাশেদ খাঁন বরাবর পাঠানো তার পদত্যাগ পত্রে লেখেন, ‘কমিটিতে মহানগর শাখার পুরোনো ও ত্যাগী সহযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করে বিভাগীয় সমন্বয়কদের যোগসাজশে নতুন ও বারবার সংগঠন নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের (প্রমাণিত) পদায়ন করা হয়েছে, যা সংগঠনের নীতি ও আদর্শের পরপন্থী। আপনাকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ করার পরেও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্বজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করছি।’
ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটিতে বিভাগীয় সমন্বয়কদের ‘সুদৃষ্টি’ থাকা মূল্যায়নের অভিযোগ এনে পদত্যাগ পত্র দেন এই কমিটির দপ্তর সম্পাদক হাসিবুর রহমান। কেন্দ্রীয় আহ্বায়কের কাছে পাঠানো পদত্যাগ পত্রে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা গ্রুপিং এর প্রমাণ আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছি, কিন্তু তার পরেও আপনারা আপনাদের অবস্থানে অটুট। এই দুর্নীতি মেনে নিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি।’
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতে বিভাগীয় সমন্বয়কদের দায়িত্বে ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক ও ঢাকা বিভাগের সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান খান ও শাকিলউজ্জামান। মূলত তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ। স্বজনপ্রীতি ও দলকে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের অনেককেই এই কমিটি দুটিতে পদায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি অধিকাংশ নেতা।
এ ব্যাপারে সংগঠনটির উত্তরের সভাপতি (বিলুপ্ত) মোল্ল্যা রাহমাতুল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছি; কিন্তু সংগঠন থেকে চলে যায়নি। সংগঠনের সুখে-দুঃখে আমরা সব সময় ছিলাম এবং আাগামীতেও থাকবো।
সংগঠনটির দক্ষিণের সভাপতি (বিলুপ্ত) শাহ মুহাম্মদ সাগর বলেন, গঠিত কমিটি নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকায় আমরা স্বেচ্ছায় অব্যাহতি পত্র জমা দিয়েছি। মেইলের মাধ্যমে আমাদের অব্যাহতিপত্র পাঠিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের সমস্যগুলো কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জানিয়েছি। তারা যদি বিষয়টির সমাধান করতে পারে তাহলে আমরা অবারও ফিরে আসব। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
কমিটি ঘোষণার ৫ দিনের মাথায় কেন বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিষদের কেন্দ্রীয় আহবায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাশেদ খাঁন আলাদাভাবে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যেটা উল্লেখ আছে সেটাই সাংগঠনিক বক্তব্য।
এর আগে গত ১৫ অক্টোবর ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাশেদ খাঁন ও ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি ও সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক নুরকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ২২ সদস্যের নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে একই সংগঠনের সাবেক কয়েকজন নেতা।