করোনা না গেলে হল কমিটি দেবে না ছাত্রলীগ, রাজনীতিবিমুখ হচ্ছেন কর্মীরা
- মোতাহার হোসেন, ঢাবি
- প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২০, ১২:০২ PM , আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০, ১০:২২ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের প্রায় এক বছর হতে চলেছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করলেও হল নিয়ে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ আজও চোখে পড়েনি। তৎপরতা নেই কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও। ফলে সঞ্জিত-সাদ্দাম কমিটি থাকাকালীন আদৌ হল কমিটি গঠন হবে কিনা— তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন পদপ্রত্যাশী অনেকে। হতাশ হয়ে রাজনীতি ছেড়ে চাকরির পড়াশোনাতেও মন দিচ্ছেন কেউ কেউ।
কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, হল কমিটি নিয়ে আপাতত কোন আলোচনা নেই। করোনা মহামারি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুললে আলোচনা করবেন তারা। পদ প্রত্যাশীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নানা অজুহাতে হল কমিটি নিয়ে গড়িমসি করছেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা পর্যন্ত কোন কিছু নিয়ে চিন্তাভাবনা নেই।’ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা হল কমিটি দিতে চাই। কিন্তু করোনার কারণে ঝামেলা হয়ে গেছে। এখন এই পরিস্থিতিতে হল কমিটি নিয়ে কেন্দ্রের কোন নির্দেশনা নাই। পরিস্থিতি ঠিক হলে হল কমিটি হবে। এর মধ্যে কোন সিদ্ধান্ত আসলে জানিয়ে দেবো।’
এদিকে হল কমিটি না দেওয়ার কারণে অনেক নেতাকর্মী রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছেন। হতাশায় রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার মনস্থিরও করেছেন কেউ কেউ। সূত্র জানায়, নিদিষ্ট সময় অনেক আগে অতিবাহিত হওয়ার পরও হল কমিটি না হওয়ার কারণে অনেকে বিসিএসকেন্দ্রীক পড়াশোনা শুরু করেছেন।
তথ্যমতে, বির্তকিত কর্মকাণ্ডের জন্য শোভন-রাব্বানীর পদ হারানোর পর সংগঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন জয়-লেখক। শোভন-রব্বানী পদ হারানোর পর প্রতিটি হলে রেখে যাওয়া তাদের সমর্থিত কর্মী ও পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকে জয়-লেখককে মন থেকে পুরোপুরি মেনে নিতে পারেননি। আবার অনেকে শোভন-রাব্বনীর প্রিয় হওয়ার কারণে জয়-লেখকের কাছে যেতে পারেননি।
জানা গেছে, জয়-লেখক দায়িত্ব পাওয়ার পর তাদের এলাকাভিত্তিক অনেকেই হলের পদপ্রত্যাশী নেতা হয়ে উঠেছেন। একই হলে নতুন পদপ্রত্যাশী সৃষ্ট হওয়ায় শোভন-রব্বানীর একনিষ্ঠ কর্মীরা জয়-লেখকের কাছে যেতে পারেননি। ফলে জয়-লেখকের কর্মীদের সঙ্গে আগের পুরোনোদের সমন্বয় হয়নি। আবার হল কমিটি নিয়ে নানা অজুহাতও দেখিয়েছেন ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। এসব কারণে কমিটি কমিটির দীর্ঘদিন পরও আলোর মুখ দেখেনি ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হল কমিটি।
সাংগঠনিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ বছরের ২৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন হয়। সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে সনজিত চন্দ্র দাস সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গত বছরের ৩০ মে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাংগঠনিক জেলার মর্যাদা পায়। আর জেলা শাখার মেয়াদ এক বছর। সে হিসেবে দু’মাস আগে শেষ হয়েছে বর্তমান কমিটির মেয়াদ। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর। জেলা শাখাকে উপরিউক্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে ৯০ দিন সময় বৃদ্ধি করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ আহহবায়ক বা এডহক কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে কমিটি না হওয়ায় হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এখনও দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তাদের অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে হল পরিচালনা করতে গিয়ে দো-টানায় পড়তে হচ্ছে তাদেরকেও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি হলের পদ প্রত্যাশী এক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ এক বছর। সেখানে দুই বছর পার হলেও কমিটি হচ্ছে না। আমাদের ভবিষৎ এই কমিটির ওপর নির্ভর করছে। কমিটির ওপর নির্ভর করে আমরা এতদূর এসেছি। এখন কমিটি হবে কিনা তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
তিনি বলেন, যে কর্মীটা তৃতীয় বর্ষে বা চতুর্থ বর্ষের দিকে রাজনীতি শুরু করেছিল; সে এখন মাস্টার্সে পড়ে বা পাস করেছে। আবার মাস্টার্সের যে কর্মীটা হল পদপ্রার্থী হয়েছিল, তার এখন চাকরির বয়স শেষ হতে চলেছে। এখন সে চাকরির পড়াশোনা করবে নাকি রাজনীতি। এটা সবার জন্য একটি ক্ষতির কারণ।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটিগুলো সাধারণত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতা ও ঢাবি ছাত্রলীগের দুই নেতার অনুসারীদের দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে। সে হিসেবে এই চার নেতার প্রায় ১৫০ জনের অধিক প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী হিসেবে রয়েছেন— আবির হাসান ও জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী ও মাসুদ সুইট। অন্যদিকে সনজিত চন্দ্র দাসের শরীফ আহম্মেদ পুনিম, মুনিম, রাহাতুল আশিকিন রিজভী ও অমিত এবং সাদ্দাম হোসেনের মামুন আলি ও আশরাফুল ইসলাম ।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে আল নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে রাজনীতি করছেন আনোয়ার হোসেন, আমীর হামজা ও সোহরাব মিয়া সোহাগ; অন্যদিকে লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী রয়েছে শাহীন আলম, সোহান, সায়েফ, তারেক, আহম্মেদ মনির তায়েফ ও সায়িফ; সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী সাইফুল্লাহ অব্বাসী অন্তত ও মাহফুজুর রহমান ইমন এবং সাদ্দাম হোসেনের কামাল, জামী আলম শামীম নুর, শোয়েব মস্তুফা ও সজিব।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী হিসেবে রাজনীতি করছেন সোবায়েল ও সিরাজ। অন্যদিকে লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী সাবেক হল সংসদের জিএস শান্ত ও আশরাফুল আলম অনিক। এছাড়াও সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী হিসেবে আজহার ও রানা এবং সাদ্দাম হোসেনের আবির ও আমির রয়েছেন।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী হলেন কামাল ও তারেক। অন্যদিকে লেখক ভট্টাচার্যের মিলন, আরিফ ও নাজমুল। সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী আনোয়ার হোসেন, রিয়াজ, সোহাগ, কাহার ফাহিম ও মিজান এবং সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী আতিক, তানভীর শিকদার, রায়হার কবীর।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী শাকিল, জামি, সিফাত এবং লেখক ভট্টাচার্যের আকমল, শাখাওয়াত ইসরাফিল, মাহাবুব। অন্যদিকে সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী শান্ত, নাহিদ, সাদিকুর ও নাফি এবং সাদ্দাম হোসেনের মুসান্নাহ আল গালিব, পিয়াস।
বিজয় ৭১ হলের আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী হারুন, আব্বাস, রোমান, শিবলী, তরিকুল ও ইমন; লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী রাজিব, নিশান, ফাহিম, লিখন, রাব্বি। এছাড়া সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী হল সংসদের সাবেক ভিপি সজিব, তারেক রহমান এলিট, ইয়ামিন ও শফিক এবং সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী ইউনুস, রবিউল ও রনি।
কবি জসীম উদ্দিন হলে আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী সুমন; লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী সাইফুল ও লুৎফর, নাসির। এছাড়াও সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী ইমাম. এনায়েত ও ফজলুর এবং সাদ্দাম হোসেনের ফরহাদ, ইমরান, রণি, মারুফ ও বাদল ।
সূর্যসেন হলে আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী হলেন ইমরান সাগর; আর লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে রাজনীতি করছেন সৈয়দ শরিফুল আলম শফু, মোজাম্মেল হোসেন পারভেজ ও হাবিবুর রহমান সুমন। অন্যদিকে সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী হিসেবে আছেন মারিয়াম জামান খান, সোহান রাইসুল ইসলাম ও নাহিদ হাসান; আর সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে রাজনীতি করছেন আরিফুল ইসলাম ও সিয়াম রহমান ।
হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী সৌরভ, শিশির, রিয়াজ, জাহিদ। লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী লিটল, হোসেন, জিবন। সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী সাদিল আব্বাস এবং সাদ্দাম হোসেনের মিজান।
ফজলুল হক মুসলিম হলে আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী মুমিন। লেখক ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য অনুসারী নেই। সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী হিসেবে আছেন সানোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন নায়িম, সুফি। অন্যদিকে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আছেন এনায়েত, হাসিব, শাওন ও অভি।
অমর একুশে হলের আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী তানভীর। লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী সোহাগ, রাতুল, দিপু। সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী শিপন, রাজিব। সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী আহসান, মনন।
স্যার এ এফ রহমান হলের আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী রিয়াদ, ফয়সাল, আফসার। লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী রাহিম সরকার। সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী মিজানূর রহমান রনি, আলামিন, আপেল। সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী সাজু, মুন প্রমুখ ।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী সাবরিনা আক্তার স্বর্ণা। লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী রুবাইয়া আক্তার, সুবর্ণা আক্তা। সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী পাপিয়া আক্তার টুম্পা। সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী কূহিণুর আক্তার রাখি।
বেগম রোকেয়া হলে আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী সিথিমা সেন, মাসুমা ইয়াসমিন, মাইসা। লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী ইসমাত জাহান সানমুন, ফাল্গুনী দাস তন্বী। সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী মাইসা, অন্তরা দাসা পৃথা। সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী আতিকা।
শামসুন নাহার হলে আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী হিসেবে আছেন খাদিজা উর্মি। অন্যদিকে লেখক ভট্টাচার্যের সাদিয়া মাহমুদ নিলা ও নুসরাত রুবাইয়া নিলা। এছাড়াও সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী বিশাখা দাস এবং সাদ্দাম হোসেনের সাবরিনা তাবাসসুম মিথিয়া ও শেহের জাহান।
সুফিয়া কামাল হলের আল নাহিয়ান খান, লেখক ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য প্রার্থী নেই। তবে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মিম ও মিতালী মন্ডল এবং সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী পূজা কর্মকার রাজনীতি করছেন।
জগন্নাথ হলের আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী হিসেবে আছেন রঞ্জয় রায় ও লিটুল বিশ্বস; অন্যদিকে লেখক ভট্টাচার্যের সত্যজিত দেবনাথ, অতুনু বর্মন, সজল দাস, সত্যজিত দেবনাথ ও প্রণব বিশ্বাস। এছাড়াও হলটিতে সনজিত চন্দ্র দাসের সঙ্গে রাজনীতি করেন কাজল দাস, বরুন সাহা, সজল ব্যাপারী এবং অর্নব হোড়।