বিলাসী জীবনের ইচ্ছে নেই, হলে থেকে রাজনীতি করব

আল-নাহিয়ান খান জয়
আল-নাহিয়ান খান জয়

অর্থ লেনদেন ও অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বাদ পড়েছেন গোলাম রাব্বানী ও রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। সুনাম ফিরিয়ে আনতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের উপর। দায়িত্ব নেয়ার পরপরই তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যেকোন ধরণের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ছাত্রলীগের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ফিরিয়ে আনতে নানা পরিকল্পনার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নুর হোসেন ইমন-

আল নাহিয়ান খান জয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের আব্দুর আলী খানের ছেলে। বরিশাল জিলা স্কুলে অধ্যয়ন শেষে করে তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ঢাকা কমার্স কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হওয়ার পর আইন বিভাগের এ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দায়িত্ব পালন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বও।


প্রশ্ন: রাজনীতিতে কিভাবে এলেন?
নাহিয়ান খান জয়: আমি আমার পরিবার থেকেই রাজনৈতিক শিক্ষা পেয়েছি। বরিশাল জিলা স্কুল, ঢাকা কমার্স কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতাম। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরে হল সাংগঠনিকভাবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করি।

প্রশ্নঃ ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে আসার স্বপ্ন ছোট বেলায় দেখেছিলেন কিনা?
নাহিয়ান খান জয়: ছোট বেলায় যখন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিদের টেলিভিশনে বা পত্রিকায় ছবি দেখতাম তখন একটা আশা জাগতই একদিন আমিও দেশের ভালো একটা জায়গায় যাব, সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করব। ছাত্রলীগের সভাপতি হব এ ধরণের স্বপ্ন না দেখলেও রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখেছি।

প্রশ্ন: বিগত নেতারা পদ পাওয়ার পর বিলাসী জীবনযাপন শুরু করেছেন, আপনি কি করবেন?
নাহিয়ান খান জয়: ছাত্রলীগ অনেক বড় সংগঠন, অনেক শিক্ষার্থীর সম্মিলন এখানে ঘটে। আমি কখনোই প্রটোকলের জন্য বাইক জড়ো করতে চাই না। বাইক নিয়ে একা একাই চলাফেরা করছি, আর সাধারণ কর্মীদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হওয়ার জন্য হলে থাকছি। এখান থেকেই রাজনীতি করব। ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে আগামী দিনে বিলাসী জীবনযাপন করার কোন ইচ্ছে আমার নেই।

প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ফিরিয়ে আনতে কি করবেন?
নাহিয়ান খান জয়: কিছু কারণে ছাত্রলীগের প্রতি প্রধানমন্ত্রী কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলা যায়। তবে ছাত্রলীগই যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশরত্নের ভ্যানগার্ড হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশীদার হচ্ছে। আমরা চাইব প্রধানমন্ত্রীকে সকলে ভালোবাসে এমন একটি ছাত্রলীগ উপহার দিতে। এজন্য যা যা করা দরকার সব ছাত্রবান্ধব কাজ আমরা করে যাব।

প্রশ্ন: ছাত্রলীগের বহিষ্কৃতদের নাম প্রকাশ ও বিতর্কিতদের ব্যপারে কি করবেন?
নাহিয়ান খান জয়: আমরা মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে তার থেকে একটি দিকনির্দেশনা নিয়ে আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করবো। তিনি যেভাবে দিক নির্দেশনা দিবেন, সেভাবেই কাজ করবো।

প্রশ্নঃ পদবঞ্চিতদের ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি?
নাহিয়ান খান জয়: ছাত্রলীগকে সুন্দরভাবে চালানোই আমাদের চ্যালেঞ্জ। একটা সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে এসব বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

প্রশ্ন: ছাত্রলীগের ইমেজ সংকট থেকে উত্তরণে কি করবেন?
নাহিয়ান খান জয়: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অনেক বড় একটি সংগঠন। লাখ লাখ নেতকর্মী সেখানে দেখা যায় যে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়। অনেক সময় অনেকের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে সংগঠনের ইমেজ নষ্ট হয়। এ ধরণের ঘটনা যেন আগামীতে না ঘটে সেজন্য আমরা কাজ করে যাবো।

প্রশ্ন: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলন দিবেন কিনা?
নাহিয়ান খান জয়: রাজনীতি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় চলে আসছে। আমরা যেহেতু ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি, তাই আশা করি দ্রুতই সম্মেলন দিতে পারব। তার আগে কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করব। বিষয়টি কঠিন হলেও আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্মেলনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারব। সর্বোপরি আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন চাইবেন তখন সম্মেলন দেয়া হবে।

প্রশ্ন: সংগঠনের চাঁদাবাজ টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিবেন?
নাহিয়ান খান জয়: আমাদের কঠোর বার্তা থাকবে যদি কারো বিরুদ্ধে কোন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বা দুর্নীতির কোন অভিযোগ পাওয়া যায়; তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

প্রশ্ন: আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কমিটি দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেবেন?
নাহিয়ান খান জয়: আসলে বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। যেসব জায়গায় অভিযোগ এসেছে আমরা প্রমাণ সংগ্রহ করছি, যদি এ ধরণের প্রমাণ পাই তাহলে সংগঠন থেকে তাদের বাদ দিয়ে দেয়া হবে।

বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

প্রশ্ন: ঢাবির হল কমিটি কখন দিবেন?
নাহিয়ান খান জয়: আমাদের শক্তির প্রধান উৎস ঢাবির হল কমিটিগুলো। যত দ্রুত সম্ভব আমরা সকলের সাথে কথা বলে সমন্বয় করে হল কমিটি দিয়ে দেব।

প্রশ্ন: গেস্টরুম, জোর করে মিটিং-মিছিল করানো ও প্রচলিত প্রটোকলে সংস্কার আসবে ?
নাহিয়ান খান জয়: একটা পক্ষ চায় ছাত্রলীগের বদনাম করার জন্য। কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধা শোনার জন্য ঢাবির হলগুলোতে গেস্টরুম করানো হয়। কিন্তু অনেকে অতি উৎসাহী হয়ে এমন করে। আমরা যদি কোন রকম টর্চার বা অপরাধ ঘটানোর অভিযোগ পাই, তাহলে তাদের উপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করানোর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাদের তুলে দেব। এ বিষয়গুলো খুব সচেতনতার সাথে আমরা মোকাবেলা করব।

প্রশ্ন: আপনার রাজনৈতিক পরিকল্পনা কি?
নাহিয়ান খান জয়: এটা আমার রাজনীতির পথচলা মাত্র শুরু। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী, আইন পেশায়ও আমার একটা প্লাটফর্ম তৈরি হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতির ভালো একটা জায়গায় যেতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব।

প্রশ্ন: আপনার পরিবার অন্য রাজনীতির সাথে যুক্ত অভিযোগ করা হয়, এটা নিয়ে কি বলবেন?
নাহিয়ান খান জয়: এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমরা দু’ভাই এক বোন। আমার বাবা-মা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সবসময় কাজ করছে। আমার বাবা ১৯৯৬ সালে নির্বাচন করেছিলেন স্বতন্ত্র পার্থী হয়ে। সেটাকে অনেকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে বলতে চাচ্ছে যে তারা অন্য দলের সাথে যুক্ত। ছাত্রলীগে আসার পর থেকেই এ ধরণের ষড়যন্ত্র করে আমাকে থামাতে চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু আমি আমার যোগ্যতা বলে এ পর্যায়ে উঠে এসেছি।

লেখক ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকার পড়ুন: ছাত্রলীগের ইমেজ বাড়ানোই আমার প্রধান লক্ষ্য


সর্বশেষ সংবাদ