১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৫

চমেকে ছাত্রদল নেতা আবিদুরের স্মৃতিফলক ভাঙচুরের ভিডিও ভাইরাল

ছাত্রদল নেতার স্মৃতিফলক ভাঙচুর  © ভিডিও থেকে নেওয়া

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও চমেক ছাত্রদল নেতা শহীদ আবিদুর রহমানের স্মৃতিফলক ভাঙচুরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পাঞ্জাবি পরিহিত এক বয়স্ক ব্যক্তি একটি চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্মৃতিফলকটি কাটছেন। স্মৃতিফলকটি নষ্ট করার পর তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পুরো ঘটনাটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হয় এবং সেই ফুটেজই পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) শাখার সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রশিক্ষিত প্রোডাকশন হিসেবে জীবিত ছাত্রদল নেতা আবিদুরের চেয়েও মৃত ছাত্রদল নেতা শহীদ আবিদুর যে আরও বেশি শক্তিশালী—এ কথা হয়তো একাত্তরের পরাজিত শক্তি কিংবা ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারিনী খুনি শেখ হাসিনার দোসররা ভুলে গেছে। যারা এই নেক্কারজনক কাজটি করেছে, তাদের উদ্দেশে নেতারা বলেন, প্রতিহিংসা কখনোই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক রাজনীতির অংশ হতে পারে না। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শিক্ষা, ঐক্য ও প্রগতিতে বিশ্বাস করে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

নেতারা আরও বলেন, উসকানি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। বরং জীবিত আবিদুরের চেয়েও মৃত আবিদের আত্মা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে আরও বেশি শক্তিশালী করবে এবং আরও বেশি প্রেরণা জোগাবে—এ বিশ্বাস তারা দৃঢ়ভাবে ধারণ করেন। জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রেরণার উৎস হিসেবে শহীদ ছাত্রদল নেতা আবিদুর রহমানের আত্মত্যাগের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।

এই যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন শহীদ আবিদের ব্যাচমেট ও সাবেক ছাত্রদল নেতা ডা. মাহমুদুল হাসান, চমেক ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ডা. সাদ্দাম হোসেন, ড্যাব চমেক শাখার সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মেহেদি হাসান, চমেক ছাত্রদলের সভাপতি হাসিবুল হাবিব, সহ সভাপতি তাহের আহমেদ, সহ সভাপতি নাফিজ ইমতিয়াজ নিশান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ইমন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারহান মুহিব এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিকুর রহমান।

আরও পড়ুন: গাড়ি লক করে যুগ্মসচিবকে আটক— ৬ লাখ টাকা দাবি চালকের, অতঃপর...

এছাড়া সাংস্কৃতিক সংগঠন সারগামের সভাপতি তাওহিদুল ইসলাম, সিনিয়র সহ সভাপতি বিকাশ হালদার, সহ সভাপতি এ বি এম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক আসিফ হাসান নিয়ন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকিব আবদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাসিন সামি, দপ্তর সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নাদিম সামি, সহ দপ্তর সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জিহাদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাহেদ হাওলাদার, প্রচার সম্পাদক মো. ফাহাদ হোসেন, সমাজসেবা সম্পাদক নাজমুল হাসান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সৈকত, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু সুফিয়ান রহমান কিয়াম, শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক বিদ্যুৎ কুমার দে, ক্রীড়া সম্পাদক এস এম রাশেদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গত, শহীদ আবিদুর রহমানকে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে দুপুর ২টা, সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১০টায় তিন দফা নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতনের পর তাকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে গভীর রাতে তাঁর বোনের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন তাঁকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১১ সালের ২১ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি মারা যান।

মৃত্যুকালে আবিদুর রহমান চমেকের ৫১তম ব্যাচের বিডিএস কোর্সের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ছাত্রদল রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উত্তর বড়ইতলী গ্রামের বাসিন্দা এবং মৃত নুরুল কবির চৌধুরীর ছোট ছেলে।

এই ঘটনায় চমেক ছাত্রলীগ শাখার ১২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যার মামলা দায়ের করা হয়। তবে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত সকল আসামিকে খালাস দেন। পরবর্তীতে বাদীপক্ষের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং আসামিদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।