ছাত্র ফেডারেশনকে লিগ্যাল নোটিশ দিল ছাত্রশিবির
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, সম্পাদক সাকিবুর রনি, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। গত সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ ছা্ত্রশিবিরের পক্ষে সংগঠনটির আইন সম্পাদক আরমান হোসেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোঃ মুজাহিদুল ইসলামের মাধ্যমে এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশ বলা হয়, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কে গত ২৯ মে ঢাকা বিশ্ববিখ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করে ছাত্র ফেডারেশন। যেখানে বলা হয় ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে পুলিশের উপস্থিতিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলা করেছে। চট্টগ্রামে হামলার ঘটনায় একজনকে আটক করলে থানায় মব সৃষ্টি করা হয়েছে। যা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। এসব তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মর্যাদা ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে যেটি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর গোচরীভূত হয় এবং গত ৩১ মে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল এক যৌথ বিবৃতিতে এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।
এতে বলা হয়, বাম ছাত্র সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির সহচর হিসেবে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ও সুস্থধারার রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সম্প্রতি মহামান্য আপীল বিভাগের ছাত্রশিবিরের প্রথম ঢাবি সভাপতি এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস দেওয়া রায়ের বিরোধিতায় তারা রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিগত ২৭ মে রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শাহবাগ বিরোধী ছাত্র ঐক্য’র মিছিলে বিনা উস্কানিতে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের হামলা অস্থিতিশীলতা তৈরির পরিকল্পনারই অংশ।
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রামে সংঘটিত ঘটনাটির সঙ্গে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে ছাত্র ফেডারেশন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। একটি ভিডিও ফুটেজে এক নারীর ওপর হামলাকারী ব্যক্তিকে ছাত্রশিবিরের কর্মী বলে দাবি করা হচ্ছে। উক্ত হামলার ঘটনায় দৃশ্যমান ব্যক্তি বর্তমানে ছাত্রশিবিরের কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মী নন। হামলাকারী ব্যক্তি যে দলের কর্মী ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল তাকে তাদের দলের কর্মী হিসাবে স্বীকার করে নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। সুতরাং এমন ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব হীন কর্মকান্ডের দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপানো ছাত্রশিবিরের উপর জুলুমের শামিল। উপরন্তু ছাত্রশিবির শুরু থেকে অপরাধী ব্যক্তির শাস্তির দাবি করে আসছে। একটি আদর্শবাদী ও শান্তিপ্রিয় ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রশিবির সুস্থ ও সহাবস্থানের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। নারীর মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান রক্ষাকে ছাত্রশিবির সর্বদা গুরুত্ব প্রদান করে। নারীর প্রতি সহিংস মনোভাব ছাত্রশিবিরের আদর্শবিরোধী এবং সংগঠনের নীতিমালার পরিপন্থি।
আরও পড়ুন: ঢাবি থেকে একসাথে পাস করে বের হলেন সেই মা-ছেলে
ছাত্র শিবিরের অবস্থান জানিয়ে এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির একটি আদর্শ ছাত্র সংগঠন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছাত্রদের কল্যাণে ও তাদের অধিকার আদায়ে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক উপায়ে সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গরীর ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান, ভর্তি কার্যক্রম ও শিক্ষা সামগ্রী, ড্রেস ও বইয়ের জন্য আর্থিক সহযোগিতা, চিকিৎসা সহযোগিতা, কৃতি ছাত্র-ছাত্রী সংবর্ধনা, হেল্পডেস্কের মাধ্যমে বিভিন্ন সহযোগিতা, শারীরিকভাবে অসুস্থ ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ সহযোগিতা, উচ্চ শিক্ষার জন্য সহযোগিতাসহ ছাত্রদের সামগ্রিক কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইতোমধ্যে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির তার প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকে ছাত্র-জনতার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটি ন্যায়-সঙ্গত ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব।
ছাত্র ফেডারেশনকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে নোটিশে অ্যাডভোকেট মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ছাত্রশিবির এর বিরুদ্ধে আপনারা সাংবাদিক সম্মেলনে ছাত্রশিবির সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের মত আদর্শিক সংগঠনের যথেষ্ট মানহানি ঘটিয়েছেন যাহা দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ধারা ৫০০ অনুযায়ী একটি ফৌজদারি অপরাধ। আগামী ০৩ দিনের মধ্যে সাংবাদিক সম্মেলনে দেওয়া আপনাদের প্রদত্ত মিথ্যা বিবৃতি প্রত্যাহার করে নিবেন এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন। অন্যথায় আমার মোয়াক্কেল আপনাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দন্ডবিধি-১৮৬০ মোতাবেক ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলাসহ বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করিতে বাধ্য থাকিবেন।