নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
৪ বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ছাত্রদলের কমিটি, নেপথ্যে প্রভাব বিস্তার-চাঁদাবাজি?
- নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৪ PM , আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪০ PM

সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২১ সালের ৬ জুন ইমরান হোসেন প্রধানকে আহ্বায়ক এবং আল আমিনকে সদস্য সচিব করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ২৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদ। ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ৩ মাস হলেও প্রায় ৪ বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির ২০ জন সদস্যই মাঠে সক্রিয় নন। এমনকি অধিকাংশ নেতাকর্মীর ছাত্রত্বও শেষ হয়েছে অনেক আগেই। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে মাঠে না থাকলেও ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছে ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী। তবে সক্রিয় হওয়ার এই অল্প কয়েকদিনের মাঝেই প্রভাব বিস্তার, হল দখল, চাঁদাবাজি ও নিয়োগে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে।
একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান দলীয় কর্মসূচির প্রতি কম মনোযোগী থাকলেও ব্যস্ত সময় পার করেন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দপ্তরে, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অফিসে মিটিংয়ে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার দীর্ঘদিনের পরিচালককে পরিবর্তনের পেছনেও ইমরান প্রধান এবং ছাত্রদলের এক যুগ্ম-আহ্বায়কের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও ইমরানের আরেক অনুসারী আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধেও ছিল প্রভাব বিস্তার, হল দখল ও ছাত্রলীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগ। পরে গত বছরের নভেম্বর মাসের ৮ তারিখে সুস্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রদলের এক নেতা জানান, ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালককে সরানোয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ এবং ছাত্রদলের সংশ্লিষ্টতার গুঞ্জন ওঠার ফলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও পূর্বের ক্যাফেটেরিয়া পরিচালককে পুনরায় ফিরিয়ে আনা অথবা নতুন পরিচালককে অপসারণের দাবি জানাতে সম্মত হই। তখন নতুন ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালককে নিজের লোক বলে দাবি করেন ইমরান হোসেন প্রধান এবং সকলের নিকট দুঃখ প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় কার্যক্রমে অনুপস্থিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আল আমিন। গত ৫ আগস্ট থেকে এ বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন মাত্র একবার। বিভাগীয় যৌথ কর্মীসভা, বিএনপির ৩১ দফা কর্মশালা, ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্র ঘোষিত মানবাধিকার দিবস কিংবা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কোনটিতেই উপস্থিত ছিলেন না তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তার চাচা গফরগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের রেখে যাওয়া ব্যবসা দেখাশোনাতে ব্যস্ত থাকায় তিনি ক্যাম্পাসে সক্রিয় নন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হুসাইন বলেন, বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব আল আমিন তার এলাকা নিয়েই ব্যস্ত। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করছে না। এটি ২০২১ সালের কমিটি। কমিটি আরও আগেই ভাঙার কথা থাকলেও সেসময়ে দেশের পরিস্থিতির জন্য নতুন করে আর কমিটি হয়নি। বর্তমান বাস্তবতায় যত দ্রুত নতুন কমিটি গঠন করা যায় ততই ভালো। আমরা চাই দ্রুততম সময়ে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করে কমিটি করা হোক, পাশাপাশি সংগঠনের প্রতি আহ্বান থাকবে বিগত ১৫ বছরে হামলা-মামলার স্বীকার ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হোক।
তবে আবুল কাশেমের রেখে যাওয়া ব্যবসা দেখাশোনার কথা অস্বীকার করেন সদস্য সচিব মো. আলামিন। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি অবগত না। এ ধরনের কোনো কার্যক্রম ঘটার কথা না, এগুলা কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করছে। আমি পারিবারিকভাবে ব্যস্ত, ফলে ওদিকে সময় দিতে পারছি না। আমি কঠিন সময়ে সংগঠনকে সময় দিয়েছি, কিন্তু বর্তমানে কিছু পারিবারিক সমস্যার কারণে সময় দিতে পারছি না। তবে আমি সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসের সব বিষয় নিয়ে খোঁজ রাখার চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান বলেন, চাঁদাবাজি, নিয়োগে প্রভাব রাখা কিংবা অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। ক্যাফেটেরিয়ার বিষয়েও আমরা জানি না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিষয়গুলো জানেন। আর আহ্বায়ক কমিটি যখন করা হয়, তখন কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে অনেকেই নাম জমা দিয়েছিলো। তবে কমিটি ঘোষণার পর থেকে আমরা ৭-৮ জনই সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।