শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নাম আসছে এনসিটিবিরও

সংক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতার আন্দোলন
সংক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতার আন্দোলন  © সংগৃহীত

পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশকে কেন্দ্র করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সামনে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ এবং ‘সংক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’ নামক দুটি সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জনের মতো আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর ১টার পর মতিঝিলস্থ সংস্থাটির মেট্রো স্টেশনের নিচে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। 

বিভিন্ন মহলে সংঘর্ষের ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। ‘সংক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’ সংগঠনের দাবি, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চলানো হয়েছে। প্রশাসনের তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংগঠনের সদস্যরা।

এদিকে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামক সংগঠনের সদস্যদের দাবি, সংঘর্ষের সময় তারা এনসিটিবির চেয়ারম্যানের আহ্বানে আলোচনা করতে এনসিটিবি ভবনে প্রবেশ করেন। কিন্তু তারা ভিতরে গিয়ে দেখেন সেখানে এনসিটিবি চেয়ারম্যান নয়, বরং এনসিটিবির বই পরিমার্জনের জন্য মনোনীত সদস্য সাজ্জাদুর রহমান (রাখাল রাহা) তাদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ভবন থেকে বেরিয়ে তারা দেখেন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, আমাদের আগের কর্মসূচিগুলো সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে আমরা সম্পন্ন করি। কিন্তু গতকাল কর্মসূচি চলাকালীন এনসিটিবির চেয়ারম্যান আমাদের সাথে আলোচনা করতে চান বলে আমাদের এনসিটিবি ভবনের ভিতরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আমরা সেখানে গিয়ে দেখি চেয়ারম্যান নয় বরং সাজ্জাদুর রহমান (রাখাল রাহা) আমাদের সাথে আলাপ করতে চান। তখন শিক্ষার্থীরা অস্বীকৃতি জানালে রাখাল রাহা আমাদের সাথে বারবার প্রসঙ্গ পাল্টে এনসিটিবি ভবনে আলোচনা চালিয়ে যান। 

তিনি আরো বলেন, তখন একজন পুলিশ সদস্য এসে আমাদের জানান, পাহাড়ি ছাত্র জনতার সদস্যরা এনসিটিবি ভবনের কাছাকাছি চলে এসেছে। আপনাদের দ্রুত করতে হবে। তখন আমার বেরুতে চাইলে রাখাল রাহা আমাদের আটকে রাখেন। তিনি ‘আদিবাসী’ রাখার পক্ষে জড়িত হিসেবে সরকারকে দায়ী করেন। কিন্তু আমরা বারবার চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি আমাদের সেখানে বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে সময়ক্ষেপণ করতে থাকনে। কিন্তু আমরা বরাবরই তার সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলাম। পুলিশ পুনরায় আমাদের পরিস্থিতির বিষয়ে জানালে আমরা তখন প্রশাসনের কাছে ৫ মিনিট সময় চেয়ে কর্মসূচি শেষ করতে চাই। কিন্তু রাখাল রাহা তখনো আমাদের সাথে কথা চালিয়ে যেতে থাকেন।

এনসিটিবির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে জিয়াউল হক বলেন, আমরা সেখান থেকে বের হয়ে এসে দেখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের সদস্যদের থেকে জানতে পেরেছি, সেখানে কিছু অপরিচিত মানুষ ছিলেন। যাদের পরিচয় কেউ জানে না। আমার প্রশ্ন হলো, কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে আমাদের এনসিটিবি ভবনের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়? এ প্রশ্নগুলো জাতির কাছে রাখছি। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করছি, আমাদের অনুপস্থিতিতে যারা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। 

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার সময় এনসিটিবির ভবন পরিদর্শন, এনসিটিবি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি এবং দুইটি সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু অসঙ্গতির খোঁজ পেয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। ঘটনার সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, এনসিটিবির সামনে সকাল থেকেই অবস্থান নেয় স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি নামের সংগঠনের সদস্যরা। পরে এনসিটিবির সামনে সংক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে এনসিটিবির সামনে আসলে উত্তেজনা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে পাহাড়ি ছাত্র-জনতার সদস্যদের একজন সামনে এগিয়ে ডান হাতের মাঝের আঙুল দেখিয়ে বিদ্রুপ করে। তখন স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির ব্যানারে থাকা শিক্ষার্থীরাও এগিয়ে গিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এ ঘটনায় সংক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতার সদস্যদের নারীসহ অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসানের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গতকালের এই ঘটনার সময়ে আমি এনসিটিবিতে ছিলাম না। মন্ত্রণালয়ে আমার একটি মিটিং থাকায় আমি সেখানে ছিলাম। আমি এসবের কিছুই জানি না। যার নাম আসতেছে আপনি তার সঙ্গে কথা বলেন।

এসব বিষয় নিয়ে সাজ্জাদুর রহমানের (রাখাল রাহা) কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং এই মুহূর্তে কথা বলতে পরব না বলে প্রতিবেদকের কল কেটে দেন।

এনসিটিবির সচিব শাহ্ মুহাম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌস বলেন, রাখাল রাহা নিজ উদ্যোগে তাদের ডেকে কথা বলেছেন। তবে আলোচনার সময় রাখাল রাহা এবং আন্দোলনকারীরা ছিলেন। কী কথা হয়েছে, সেটা তারা ভালো জানবে। 

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সভাপতি অঙ্কন চাকমা বলেন, আমরা আগেই এনসিটিবি ভবনের সামনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি সেখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কর্মসূচি দেয়। ফলে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের উপর যেভাবে হামলা করেছে এটা অমানবিক। আমার এটার বিচার চাই। 

তবে এ ঘটনায় অন্য কোনো পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সেটা মনে করি না। ছাত্র ফেডারেশন অন্য সময়ের মতোই গতকালের কর্মসূচিতে আমাদের সাথে ছিলেন। বরং ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এখন বিভিন্ন চক্রান্ত করা হচ্ছে।

সমালোচনা তৈরি হয়েছে পাহাড়ি ছাত্রজনতার কর্মসূচিতে দেশের বাম ধারার সংগঠনগুলোর অংশ নেয়াকে কেন্দ্র করে। বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও সংগঠনের ভাষ্য, পাহাড়ি সংগঠনের কর্মসূচিতে বাম সংগঠনের সদস্যদের অংশ নেয়ার বিষয়টি বিস্ময়ের। আদিবাসী শব্দটি রাখা এবং না রাখার বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। কিন্তু একই দাবি নিয়ে বাম সংগঠনের অংশ নেয়ার অর্থ একই দাবি তাদেরও।

আজ বৃহস্পতিবার ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক আরমানুল হক বলেন, ‘আদিবাসী যেসব সংগঠন আছে তাদের পাশে আমরা সব সময় ছিলাম। গতকালের কর্মসূচিতে একটা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে বলে আমরা আগেই অনুমান করতে পেরেছিলাম। কারণ, একই সময়ে দুটো সংগঠনের কর্মসূচি থাকলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করতে পারত কিন্তু তারা সেটা করেনি। এমন অবস্থা দেখে আমরা আগেই প্রস্ততি নেই এবং ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা পাহাড়ি ছাত্র জনতার সাথে এনসিটিবির সামনে যাই।’


সর্বশেষ সংবাদ