২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৩০

মাথার খুলি-বুকের পাজর, হাত-পা-মুখ-গলা— শরীরের কোথায় নেই পুলিশের বুলেট?

আহত আল আমিন ইসলাম ও তার মেডিকেল রিপোর্ট  © সংগৃহীত

পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হয়ে এখনও বিছানায় কাতরাচ্ছেন আল আমিন ইসলাম। তিনি গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে আহত হয়ে বিছানায় ঠাঁই হয়েছে তার। পুরো শরীরে তার এখনও রয়েছে ছররা গুলির ক্ষত। চিকিৎসা সহযোগিতায় এখনও এগিয়ে আসেনি কেউ। অর্থাভাবে হচ্ছে না তার চিকিৎসা।

আজ শনিবার বিছানায় শুয়ে শুয়ে  ঘটনার বর্ণনা করছেন আল আমিন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি জানান, তার শরীরে আনুমানিক ১৫০টির মতো ছররা গুলি রয়েছে। বাবা একজন কৃষক হওয়ায় তার বা পরিবারের কারো পক্ষেই অপারেশনের টাকা জোগাড় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। 

আল-আমিনের মেডিকেল রিপোর্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, আল-আমিনের শরীরে অন্তত ১৫০টি ছররা গুলির চিহ্ন। গুলিগুলো মাথার খুলি, বুকের পাঁজর, হাত-পা-মুখ-গলাসহ শরীরের সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এসব গুলির যন্ত্রণায় ছটফট করে দিনাতিপাত করছেন তিনি।

আরও পড়ুন: আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ৫ ও আহতরা পাবেন ১ লাখ টাকা করে

আন্দোলনের দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আর আমিন বলেন, ‘প্রতিদিনই  আন্দোলনে গিয়েছি। গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ৫ আগস্টের দিন আমি মিছিলের প্রথম দিকে ছিলাম। পুলিশ যখন গুলি ছোড়া শুরু করে, তখন আমরা একটা সরু গলিতে আট-দশজন আটকা পড়ি। তাই পুলিশের ছোড়া গুলিগুলো বেশিরভাগ আমাদের শরীরে লেগেছে।’

‘‘যখন গুলিগুলো আমার শরীরে লাগে তখন আমি পড়ে গিয়েছিলাম। অনেকক্ষণ পড়েছিলাম। পুলিশ সদস্যরা অন্যদিকে চলে যাওয়ার পর নিজে নিজে উঠে পাশের একটা ভবনে গিয়ে তাদের সাহায্য নেই। তারাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’’

আরও পড়ুন: আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ফাহিমকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড পাঠাল সরকার

আল আমিন বলেন, ‘টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতাম এবং সেই টাকার কিছু বাড়িতেও পাঠাতাম। কারণ, আমি ছাড়া পরিবারের খরচ চালানোর মতো আর কেউ নেই।’ তার ভাষ্য, চার ভাই-বোনের পরিবারটি বর্তমানে দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট আবেদন, তারা যেন পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়।  

‘দেশে তার শরীর থেকে সবগুলো ছররা গুলি বের করা সম্ভব নয়। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন’— চিকিৎসকদের বরাতে সর্বশেষ এমনটাই জানালেন স্নাতোকোত্তরের এই শিক্ষার্থী।