২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:১০

সমন্বয়ক নামধারীদের অপকর্মের দায় আন্দোলনের কাঁধে আসছে: আব্দুল কাদের

আব্দুল কাদের  © ফাইল ছবি

আন্দোলন চলাকালে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কেউই সমন্বয়ক হতে রাজি ছিল না। হাতে পায়ে ধরেও রাজি করানো যায় নাই। অনেকেই আন্দোলনে এক্টিভ ছিল; কিন্তু সমন্বয়ক তালিকায় নাম লেখায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বৈমষ্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুক পোস্টে এ মন্তব্য করেছেন।

আব্দুল কাদের বলেছেন, জানের ভয় হোক আর যে কারণেই হোক; তবে আন্দোলনে সর্বাত্মক অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিনিয়ত গুলির মুখে দাঁড়িয়ে লড়ে গেছে, কোনো ব্যক্তিগত কিংবা সাংগঠনিক স্বার্থ হাসিলের চিন্তা তখন কারোর মাথায়-ই ছিল না। কিন্তু ব্যত্যয় ঘটলো ৫-ই আগস্টের পরে আইসা। সমন্বয়ক পদ লাগবেই লাগবে, সমন্বয়ক হওয়া ছাড়া কোনো গতি নাই কারো। 

আন্দোলনে সবার অংশগ্রহণের বিষয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেইটাও আলাপের বিষয় না, মূল আলাপ হইলো, আন্দোলন হয়েছিল ইনক্লুসিভ। এখানে ডান-বাম সব ঘরানার মানুষজন ছিল। কিন্তু আন্দোলন শেষে যে যার যার ঘরে ফিরে গেলো এবং নিজেদের মতাদর্শ ও সাংগঠনিক স্বার্থরক্ষায় কাজবাজ শুরু করে দিল। তো, এনারা কাজ করছে নিজের ব্যক্তি কিংবা সাংগঠনিক স্বার্থকে সামনে রেখে; কিন্তু এনারা আবার সমন্বয়ক নামধারী।’

আরও পড়ুন: অনুষ্ঠানটি শপথ পাঠ করানোর নয়— ব্যাখ্যায় যা বলছেন শাবিপ্রবির সমন্বয়করা

‘‘বিপদ হইলো, সব সমন্বয়ক নামধারীর অপকর্মের দায়ভার আসে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাঁধে। সমন্বয়ক নামধারী ব্যক্তি কিংবা তার সংগঠনের কাঁধে এই দায় যায় না। আবার ঐ সংগঠনগুলাও ওত পেতে থাকে, কীভাবে সমন্বয়কদের পুনানো যায়, সমন্বয়কদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারলেই তার সংগঠনের রাজনীতি আছে।’’

উদাহরণ টেনে এই সমন্বয়ক বলেন, সারাদেশে শিক্ষকদের অপমান-অপদস্থ করে টেনেহিঁচড়ে পদত্যাগ করানোর মতো ঘৃণ্য কাজ শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ ৫-ই আগস্টের কিছুদিন পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিনকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হয়, পূর্বের ক্ষোভের জের ধরে উনার রুমে গিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করে উনাকে দিয়ে জোরপূর্বক মোনাজাত করানো হয়৷ এই যে শুরু হলো, পরে সেটার সিলসিলা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। দুনিয়াবাসী সমন্বয়কদেরকে ছি ছি করেছিল; অথচ কোন ছাত্রসংগঠনের লোকেরা ঢাবিতে এই বর্বতার সূচনা করেছিল, সেটা সবাই জানে। 

নিজেদের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে আব্দুল কাদের বলেন, সারাদেশে যত চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব হয়, বেশিরভাগ সমন্বয়ক পরিচয় দিয়েই হয়৷ অথচ তাদের অনেকেরই ভিন্ন সাংগঠনিক পরিচয় আছে, বিভিন্ন দলের সাথে এ্যাফিলিয়েশন আছে; কিন্তু দিনশেষে প্রশ্নবিদ্ধ হয় সমন্বয়কদের ব্যানার। আর মূলধারার যে ক'জন সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত, যাদেরকে নিয়ে আপনারা কনসার্ন, তারা যে নিখুঁত; সেটা বলতেছি না। আমাদেরও ভুলত্রুটি আছে। আমরা তো খুবই অপরিপক্ব। 

আরও পড়ুন: ফ্যাসিস্টদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে: উপদেষ্টা নাহিদ

আমাদের কাঁধ ছোট; কিন্তু দায়িত্ব অনেক বড় জানিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ব যেহেতু কাঁধে এসে গেছে, সেজন্য খেয়ে-না খেয়ে, পরিবার-পরিজন বাদ দিয়ে, দিন-রাত স্রেফ অমানবিক পরিশ্রম করে যাচ্ছি। যারা কাছ থেকে আমাদের চেহারা-ছবি দেখতেছেন, তারা কিছুটা বুঝতে পারছেন। কাজ তো করতেছি; কিন্তু এতো কাজ, ঘুচিয়ে উঠতে পারতেছি না। এতকিছুর পর মানুষের উপর্যুপরি উদ্দেশ্যমূলক সমালোচনায় অনেক আগেই হয়রান হয়ে গেছি, এখন মানসিকভাবেও কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলছি। তবে কাজ তো করে যাবোই, হেরে গেলে তেমন আফসোস থাকবে না। এক্ষেত্রে গঠনমূলক সমালোচনা, পরামর্শ কাম্য ছিল।

দেশের মাটিতে আবারও শকুনের থাবা পড়লে কি আর করার, জীবন বাজি রেখে চেষ্টা তো করে গেছি জানিয়ে আব্দুল কাদের বলেন, আমাদের দশ-বারোজন মানুষের কল্লা না হয় আগেই যাবে, সেটা না হয় গেলো। আফসোস নাই, হাসিনার আমলেই যেতো। 

তবে আপনারা যারা নতুন করে হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পেয়েছেন, নতুন করে স্বপ্ন দেখেন, আপনাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন সবই মাঠে মারা। পরিশেষে তিনি বলেন, ‘কিছুই বলার নাই, কি আর বলব, একটাই কথা, দেখেন, আপনারা যা ভালো মনে করেন।’