রাতভর গুজবে সয়লাব ফেসবুক

গুজবে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
গুজবে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম  © সংগৃহীত

কোটা আন্দোলন নিয়ে নানা ইস্যুতে গুজবে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। আর এসব গুজবে বিভ্রান্তও হচ্ছেন অনেক সাধারণ নাগরিক। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা করে একটি মহল। বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক অপতথ্য ছড়ানো থেকে শুরু করে নানা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও গুজব ছড়াতে পিছপা হননি একশ্রেণির মানুষ। গতকাল শনিবার (৩ আগস্ট) রাতভর গুজবে সয়লাব ছিল ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের গুজব সমাজে তৈরি করে বিশৃঙ্খলা, যা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই যে কোনো খবর যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস করা ও ছড়িয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ তাদের।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ছবি, ভিডিও এবং পোস্ট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শাহবাগ ও টিএসসিতে সারারাত শিক্ষার্থীদের অবস্থান, সমন্বয়ক সার্জিসের বাসা থেকে দুই কোটি টাকা উদ্ধার, রাতেই দেশ ছাড়ছেন কোটা আন্দোলনের সমন্বয়করা ও সন্ধ্যার পর বোরকা পড়ে এম্বুল্যান্সে করে ঢাকা ছাড়লো ছাত্রলীগের সাদ্দাম ও ইনান এমন ভুয়া খবর ছড়ানো হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে শনিবার রাতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ‘উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক শিরোনামে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফটোকার্ড ব্যবহার করেও নানা অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে।

৫৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরকম কিছু ভিডিও দেখুন এখানে ও এখানে। শনিবার রাত ১২টার দিকে সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, টিএসসি এলাকা, শাহবাগ কিংবা রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ ধরনের কোনো আন্দোলনকারীকে জড়ো হতে দেখা যায়নি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ঢাবি প্রতিনিধি জুবায়ের হোসাইন জানান, এ ধরনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে রাতে আমি টিএসসি ও শাহবাগে যাই। তবে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি সেখানে ছিল না। ক্যাম্পাসের এসব জায়গা তখন ফাঁকা ছিল বলেও জানান তিনি।

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শনিবার রাতভর দেশের পরিচিত ইউটিউবার, ইনফ্লুয়েন্সার ও অভিনেতাদের নামে ছবিসহ ভুয়া পোস্ট করা হয়। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, ভারতীয় অভিনেতা শাহরুখ খান, অভিনেত্রী কাজলের ছবি দিয়ে পোস্ট করা হয়, ‘কোটা আন্দোলনের পাশে ছিলাম, এখন যেটা চাচ্ছেন সেটার পাশে নাই’। টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক ও ইউটিউবার রাফসান দ্যা ছোট ভাই -এর ছবি দিয়েও একই কথা পোস্ট করা হয়। তবে তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে গিয়ে এধরনের কোনো পোস্ট দেখা যায়নি।

আরও দেখা যায়, রাতে বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপে ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক আইডিতে কয়েকটি এক হাজার টাকার বান্ডিলের ছবি পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হয় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা সার্জিসের বাসা থেকে দুই কোটি টাকা উদ্ধার করেছে র‍্যাব-১০। তবে যাচাই করে দেখা যায়, যে ছবিটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে সেটি কয়েকদিন আগে এক তরুণী একটি গ্রুপে পোস্ট দেন। পোস্টে লেখা ছিল, ‘আব্বুর পেনশনের টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে নিলাম।’

‘সন্ধ্যার পর বোরকা পড়ে এম্বুল্যান্সে করে ঢাকা ছাড়লো ছাত্রলীগের সাদ্দাম ও ইনান’ এমন শিরোনামে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পেস্টার ব্যবহার করে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তবে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস থেকে এমন কোন সংবাদ প্রকাশ করা হয়নি। 

রাতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নিয়ে ফেসবুকে এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেসের (এএফপি) ফ্যাক্টচেকার কদর উদ্দিন শিশির লিখেন, ভিডিওগুলো পুরোনো। আরেকটি পোস্টে তিনি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান করা কিছু তরুণের ছবিরও মাধ্যমে ফ্যাক্ট চেক করেন।


সর্বশেষ সংবাদ