ছাত্র ইউনিয়নের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিচার দাবি
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০৭ PM , আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:১২ PM
ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের ওপর হামলার আইনানুগ ব্যবস্থাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) নেতৃবৃন্দ। আজ সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন তারা।
তাদের তিন দফা দাবি হলো—সাবেক ছাত্রনেতা বিপুল চাকমাসহ ৪ জনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার বিচার করা, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে ও পরবর্তীতে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের ওপর হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনিকভাবে আইনানুগ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ভাস্কর্য নীতিমালা পরিপন্থী কর্মকান্ড বন্ধ করা।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, গত ১১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পিসিপির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সদস্য রুহিন বিকাশ ত্রিপুরাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় ইউপিডিএফ এর সংগঠক নীতিদত্ত চাকমা, হরিকমল ত্রিপুরা ও সদস্য প্রকাশ ত্রিপুরাকে অপহরণ করা হয়। যার প্রতিবাদে ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশাল মিছিল ঘোষণা করা হয়। মশাল মিছিলের এক পর্যায়ে বিজয় একাত্তর হলের সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা উষ্কানিমূলক আচরণ প্রদর্শন করে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের উসকানিতে এড়াতে মিছিলের নির্ধারিত রাস্তা পরিবর্তন করে মসজিদের গেট দিয়ে বের হয়ে মিছিল শেষে মিলন চত্বরে সমাবেশের প্রাক্কালে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা করে। এতে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মেঘমল্লার বসুসহ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ৩০ জন আহত হন। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য কালো কাপড়ে ঢেকে দেয় ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নকে সন্ত্রাসী সংঠন অ্যাখ্যা দেয়।
আরও পড়ুন: ভিসির বাসভবনে শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা, মুখোমুখি উপাচার্য-শিক্ষক সমিতি
তিনি আরও বলেন, মিছিলে হামলার ১ দিন বাদে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসে সকালে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর টিএসসি এলাকায় ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ চা খাওয়া শেষে নিজ নিজ কাজে ফেরার পথে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মেঘ মল্লার বসু ও ঢাকা মহানগর সংসদের সহকারি সাধারণ সম্পাদক তাহমিদ তাজোয়ার শুভ্রের উপর শাহবাগে, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাঈনের ওপর মিলন চত্বর ও স্বোপার্জিত স্বাধীনতা সংলগ্ন রাস্তায় এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতা শিহাবের ওপর স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে হামলা করে ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে তারা ক্যাম্পাস শ্যাডোতে ছাত্র এম এন লারমার গ্রাফিতিসহ কলাভবন, টিএসসি এবং শামসুন্নাহার হলের দেয়ালে ছাত্র ইউনিয়নের দেয়াললিখন সাদা রং দিয়ে ঢেকে দেয়।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১ ডিসেম্বর ভাস্কর্য নীতিমালার লঙ্ঘন করে টিএসসিতে মেট্রো স্টেশন স্থাপনের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে মেট্রোরেলের ছবি সংবলিত একটি বিলবোর্ড স্থাপন করে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানবীর হাসান সৈকত। ফলে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য বিলবোর্ডের আড়ালে সম্পূর্ণ ঢেকে যায়। ভাস্কর্যটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতৃবৃন্দ ছাত্রলীগ নেতা তানবীর হাসান সৈকতকে বিলবোর্ডটি সরাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে সাড়া না দিলে নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবগত করে এবং অবিলম্বে বিলবোর্ড সরানোর আহ্বান জানান। কিন্তু টানা ১২ দিন পার হলেও ছাত্রলীগ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেটি সরানোর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।
প্রশাসনকে জানানোর পর তারা কী বলেছে জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাগীব নাঈম জানান, বর্তমানে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পক্ষপাতমূলক আচরণ করে। আমরা প্রশাসনকে জানালে তারা বরাবরের মত বলেছে ‘আমাদেরকে কয়েকটা দিন সময় দাও’। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে—১৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর অভিযোগপত্র প্রদান করা, ২০ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় টিএসসি সঞ্জীব চত্বরে সন্ত্রাসবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং ২২শে ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় পাহাড়ে সেনা শাসন হটাও ও সারাদেশে রাষ্ট্রীয়মদদে সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করা।