খুঁজে খুঁজে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের পেটাচ্ছে ছাত্রলীগ
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:১৭ PM , আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২৯ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের ছাত্র ইউনিয়নের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ঢাবি সংসদের সভাপতিসহ আহত হয়েছেন চারজন। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) এ ঘটনা ঘটে। ছাত্র ইউনিয়নের অভিযোগ, সংগঠনটির নেতাকর্মীদের শাহবাগ, টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে খুঁজে খুঁজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের উপর হামলা করছেন।
এদিনের হামলায় ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ঢাবি সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু (২৭), সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ (২৫), ঢাকা মহানগর সহসাধারণ সম্পাদক তাজমির তাজওয়ার শুভ্র (২৬) ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সদস্য শাহরিয়ার শিহাব (২৩)। আহতদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ফেস্টুনকেই নিরাপত্তা দিতে পারিনি, ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা দেবো কীভাবে? -ছাত্রলীগ
ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীরা ইউনিয়নের এই নেতাদের উপর হামলা করেছেন। এরমধ্যে ছাত্রলীগের বিজয় একাত্তর হল শাখার পদপ্রত্যাশী সৈকতের অনুসারী সাকিবুল সুজন ছিলেন বলে অভিযোগ সংগঠনটির।
ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মাঈন আহমেদ বলেন, আমরা মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ফুল দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরেছি। তখন থেকেই সৈকতের কয়েকজন অনুসারী আমাদের উপর নজর রাখছিল। কথাবার্তা শেষ করে, চা খেয়ে চলে যাওয়ার সময় টিএসসির রাজু ভাস্কর্য থেকে আমি প্যাডেলচালিত রিকশায় উঠি।
বাম গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের উপর এর আগেও হামলার ঘটনা ঘটেছে
‘‘মেঘদা মোবাইলফোন ঠিক করবেন বলে মোটরচালিত রিকশায় শাহবাগের দিকে যান। ডাসের সামনে পৌঁছালে মোটরসাইকেলে চড়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন আমার রিকশা ঘিরে ধরে। রিকশা থেকেই মারধর শুরু। পরে নিচে নামিয়ে মারধর করে।’’
মাঈন আহমেদ বলেন, মেঘদা আর শুভ্রকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ঘিরে ধরে মারধর করা হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিহাবকে মারা হয় ভিসি চত্বরে।
বাম সংগঠনের নেতাদের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল রাজু ভাস্কর্যের কালো কাপড় যেন সরিয়ে ফেলা হয়। যদি না সরানো হয় তাহলে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। তখন তাদের বলেছি যারা বেঁধেছে তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখব। -প্রক্টর
তিনি বলেন, টিএসসিতে আমাকে কিছুক্ষণ মারার পর মানুষ জড়ো হয়ে যায়। মানুষ দেখে ওরা সেখান থেকে চলে যায়। কিন্তু শাহবাগ ক্যাম্পাসের বাইরে হওয়ায় তেমন কেউ এগিয়ে আসেনি। ফলে মেঘদাকে দীর্ঘসময় ধরে মারা হয়েছে। তার চোখকে লক্ষ করে বেশি হামলা করা হয়েছে। তার বাম চোখের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে এখন শ্যামলির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক নিনাদ খান বলেন, আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে টিএসসিতে একত্রিত হয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে আমাদেরকে খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের মতো মহান দিনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও নৃশংস হামলা প্রমাণ করে যে কারা আসলেই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে শক্তি।
মাঈন আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন রাজু ভাস্কর্যে একটি ব্যানার দিয়ে ছাত্রলীগ রাজনৈতিক শিষ্টাচার নষ্ট করেছে। তারা আমাদের উপর হামলা করেছে। তারাই আবার ছাত্র ইউনিয়নকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে ব্যানার লাগিয়েছে। এটা বিদ্রুপ ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের হামলার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।
টিএসসি থেকে ফেরার পথে আমাদেরকে খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। -ছাত্র ইউনিয়ন
জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ফেস্টুনকেই নিরাপত্তা দিতে পারিনি, ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা দেবো কীভাবে? প্রধানমন্ত্রী আমাদের আবেগের জায়গা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র ইউনিয়নের প্রতি ক্ষুব্ধ। আগামীতে তাদের নিরাপত্তা আমরা দিতে পারব না। তাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি অনতিবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর ফেস্টুন ছেঁড়ার জন্য তাদেরকে অফিসিয়ালি ক্ষমা চাইতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, বাম সংগঠনের নেতাদের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল রাজু ভাস্কর্যের কালো কাপড় যেন সরিয়ে ফেলা হয়। যদি না সরানো হয় তাহলে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। তখন বলেছি যারা বেঁধেছে তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখব। আর আজকের মারধরের ঘটনা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি।