দোকানি থেকে ৪২ কোটি টাকার মালিক থানা ছাত্রলীগ নেতা
বেশ কয়েকবছর আগেও মোস্তফা হোসেন হেলাল রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় চালাতেন একটি ছোট মোবাইল রিচার্জের দোকান। তবে ২০১৯ সালে গুলশান থানা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর রাতারাতি বদলে যায় হেলালের জীবনধারা। থাকেন নিজস্ব অভিজাত ফ্ল্যাটে, চড়েন বিলাসবহুল গাড়িতে। ঘুরতে যান উন্নত দেশে। তবে জানাজানি হলে গত ঈদে ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেন তিনি। এছাড়া স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকার পরও দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন এই ছাত্রনেতা।
হেলালের এই উত্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও বিস্মিত। চার বছর ধরে রাজধানীর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ ধরে রেখেছেন তিনি। তার নামে চাঁদাবাজি ছাড়াও রয়েছে নানা অভিযোগ। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে হতাশ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
হেলালের বিরুদ্ধে জানুয়ারি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় তার ৪২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।
এই ছাত্রলীগ নেতার অন্যতম আয়ের উৎস স্পা ব্যবসা ও চাঁদাবাজি। তার বিরুদ্ধে গুলশান এলাকার ২৫টি স্পা সেন্টার থেকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। হেলালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায় যে তিনি প্রায়শই থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশেও ভ্রমণ করেন।
আরও পড়ুন: নৌকা প্রতীকে সিল মারা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজাদ আটক
এসব কারণে হেলাল ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের কয়েকটি ধারা ভঙ্গ করেছেন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই সংগঠনের কর্মীদের কোনো চাকরি বা ব্যবসায় জড়িত থাকার অনুমতি নেয়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে আরও বলা আছে, নেতাদের বয়স ২৯ বছরের কম হতে হবে এবং বিবাহিত কেউ এর সদস্যপদ পাওয়ার বা সদস্যপদে বহাল থাকার যোগ্য হবে না। কিন্তু হেলালের ক্ষেত্রে তা পুুরোপরি ব্যতিক্রম। তিনি ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই ৩০ বছর বয়সে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
জানা যায়, হেলাল ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদের অনুসারী। ২০১১ সালে সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। সংগঠনের নিয়ম লঙ্ঘন করে দুবার বিয়ে করেছেন। গুলাশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার আগে হেলাল মধ্যবাড্ডা এলাকায় পোস্ট অফিস গলিতে সিডি ও ফ্লেক্সিলোডের দোকান চালাতেন। ওই গলিতে অন্তরা আক্তার নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন। সেই ঘরে তার দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পদ পাওয়ার পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে গুলশান থানা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হেলাল বলেন, আমি যখন ঢাকা মহানগর উত্তরের (ছাত্রলীগ) সভাপতির সঙ্গে রাজনীতি করতাম, তখন কোনো সমস্যা ছিলো না। এখন সাধারণ সম্পাদকের রাজনীতি করি, তাই সমস্যা। আমি মহানগরকে বলেছি সম্মেলন দিয়ে নতুন কমিটি দিতে। আমি আর এই পদে থাকতে চাই না।
হেলালের বিরুদ্ধে এসকল অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, সব অভিযোগের বিষয়ে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবো। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, আমরা অভিযোগ সম্পর্কে অবগত। আমরা ইতিমধ্যেই কমিটি (যেটির সভাপতি হেলাল) ভেঙে দিতে বলেছি।