ছয় দফা কর্মসূচি নিয়ে দেশব্যাপী ছাত্র সমাবেশের ঘোষণা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের

সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট  © টিডিসি ফটো

বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যায়িত করে 'ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন থেকে মুক্তি এবং ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের ভয়াবহতা রুখতে ছয় দফা দাবি নিয়ে দেশব্যাপী ছাত্র সমাবেশ ঘোষণা করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট।

আজ রবিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতৃবৃন্দ। গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক এবং বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল লিখিত বিজ্ঞপ্তি পাঠ করেন।

লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, দেশের জনগণ হিসাবে আমরা দুঃসহ সময় পার করছি। সামনে জাতীয় নির্বাচন। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের কবলে দেশ। আবারও তারা একই পথ অবলম্বন করে দেশি-বিদেশি মদদে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। যার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদী- আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে রাষ্ট্রের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যার মাশুল দিচ্ছে দেশের জনগণ। সীমাহীন লুটপাট, ঘুষ-দূর্নীতি, সিন্ডিকেট ব্যবসা, অর্থ পাচার করে একটি শ্রেণি রাতারাতি শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণ মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী, আমলা এবং ব্যবসায়ীরা মিলে গত ১৫ বছরে ১১ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। উন্নয়নের নামে একদিকে বৈদেশিক ঋণ যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে সেই অর্থের একটা বড় অংশ আবার লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। এসবের প্রতিবাদ করলে বিরোধী শক্তিগুলোর উপর নেমে আসছে ভয়ংকর বিভীষিকা। গুম, খুন, হামলা, মামলায় জনজীবন অতিষ্ঠ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ও মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের নামে সাইবার নিরাপত্তা নামক কালো আইন বলবত রেখেছে।

লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, দেশের শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি আরো খারাপ। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বহুভাগে বিভক্ত। মানসম্মত সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারছে না। ক্রমাগত বাড়ানো হচ্ছে শিক্ষা ব্যয়। শিক্ষার বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতি বেপরোয়া গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। ছাত্র, শিক্ষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের কোন মতামত না নিয়েই সরকার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলদাসে পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসন অব্যাহত রাখতেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব কায়েম করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্রশাসনের মদদে টর্চার সেল প্রতিষ্ঠা করে সিট বন্টন-বাণিজ্যসহ গণরুম - গেষ্টরুম পরিচালনা করে গোটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একক আধিপতা ও সন্ত্রাস কায়েম করে চলেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আর এই আধিপত্য ধরে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছে ক্ষমতাসীনরা

গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের ঘোষিত ছয়দফা দাবিওগুলোর মধ্যে রয়েছে-

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা, সর্বজনীন, বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, গণতান্ত্রিক এবং একই ধারার শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা। জাতীয় শিক্ষাক্রম- ২০২১ বাতিল করা, কাগজ-কলমসহ শিক্ষা উপকরণ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস দখলদারিত্ব বন্ধ করা। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া, সাইবার নিরাপত্তা আইন ও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল- ২০২৩ বাতিল করা। শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দেওয়া, রাষ্ট্রীয়ভাবে জন- খুন নির্যাতন ও বিনা বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করা। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন বন্ধ করা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা।  

সম্মেলনে ছাত্র ঐক্য বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী জানান, আন্দোলনের মাঠে নতুন জোট গঠিত হতে পারে। কিন্তু আমাদের এই গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট অনেক আগে গঠিত হয়েছে। আমরা আমাদের মত কর্মসূচি পালন করবো। 

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, সালমান সিদ্দিকী সভাপতি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), ছায়েদুল হক নিশান সভাপতি গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, রাকিবুল রনি সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, এহতেশাম ইমন দপ্তর সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (মুক্তি কাউন্সিল), অঙ্কন চাকমা সভাপতি বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, তাওফিকা প্রিয়া সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত), বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন।


সর্বশেষ সংবাদ