শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রদল ও শিবির প্রবেশ করেছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
- মাহবুব রনি
- প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০১৮, ০৯:১০ PM , আপডেট: ০২ আগস্ট ২০১৮, ০৯:১০ PM
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আন্দোলনকারীদের সব দাবি পূরণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে তাদের এখন ঘরে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছে তিনি বলেছেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে’। এক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহায়তাও চেয়েছেন।
ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে গত ২৯ জুলাই বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর টানা পাঁচ দিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাজধানীর সড়কগুলো দিনভর অচল ছিল। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় আন্দোলন-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনা ও সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে রাজনৈতিক ইন্ধন দেখা যাচ্ছে। আমরা দেখেছি, এই আন্দোলনের মধ্যে শিবির ও ছাত্রদল সম্পৃক্ত হয়েছে।
“আমাদের কাছে ছাত্রদল ও শিবিরের কথোপকথনের অডিও রয়েছে। সেখানে ছাত্রদলকে স্কুল ও কলেজের ড্রেস পরে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশ দিতে শোনা গেছে।”
শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, “এই আন্দোলন সহিংসতার দিকে টার্ন করতে পারে। কারণ, আমরা দেখিছি কাফরুল থানায় আক্রমণ করা হয়েছে। রাজারবাগ ও মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজম্যান্ট-এ ঢিল ছোড়া হয়েছে।”
মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয় পুলিশ। এসময় পুলিশের সঙ্গে লাঠিহাতে একদল যুবককেও দেখা যায়।
মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের হামলার অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেখানেও ছাত্রদলের কর্মীরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছিল, তখন তা প্রতিরোধে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়েছিল।
গত পাঁচ দিনের আন্দোলনে যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই কয়দিনে ৩১৭টা গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। আটটি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। তাই আমরা এই আন্দোলন আর না করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহায়তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা মনে করি, তারা যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, তা দেশবাসী জেনে গেছে। সুতরাং এই ধরনের পরিস্থিতিতে একটা সাবোটাজ ঘটতে পারে।
“তাই অভিভাবক, শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্য ও প্রতিবেশীকে অনুরোধ করব, এই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে মাঠে না নামে। তাদেরকে বোঝান।”
আন্দোলন থেমে গেলে এই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা অনেক ছোট। এই কারণে তাদেরকে কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।”
তিনি বলেন, কোনো স্কুল-কলেজের পাশে রাস্তা থাকলে সেখানে ট্রাফিক পুলিশ থাকবে এবং শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা করবে। যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই কলেজছাত্রী নিহত হয়েছেন, সেখানে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে নতুন আইন শিগগিরই সংসদে উপস্থাপন করা হবে।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আবেগের সুযোগ নিয়ে ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ তাদের ভিন্ন পথে পরিচালনার চেষ্টা করছে বলে অভিভাবকদের সতর্ক করেছেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
তিনি বৃহস্পতিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই আন্দোলনে যারা এসেছে, তারা অবোধ শিশু ছাত্র। এটা তাদের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ। আমরা তাদের মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরেছি। শিক্ষার্থীদের আবেগকে আমরা এপ্রিসিয়েট করছি।”
স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পুরো বিষয়টিকে ‘ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে’- এই দাবি করে তিনি বলেন, “আমি প্রত্যেক অভিভাবককে আহ্বান জানাব, তারা যেন কোনো অপচেষ্টা করতে না পারে, কোনো সুযোগ না পায়। সুবিধাভোগী গোষ্ঠী নিষ্পাপ শিশুদের ভিন্ন পথে পরিচালনার চেষ্টা করছে। তারা পরিবহন ব্যবস্থা অচল করে দিয়ে ঢাকার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে।”