‘ছাত্রলীগ ভীতি’: ২ বছর ধরে ক্যাম্পাস ছাড়া চবি ছাত্রদল
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে বারবার মারধর এবং হেনস্তার পর দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে কোন দৃশ্যমান কর্মসূচিতে নেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রদল। ক্যাম্পাসের বাহিরে শহরে মাঝেমধ্যে কার্যক্রম দেখা গেলেও ক্যাম্পাস এলাকায় নীরব ছাত্র সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আসলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এরপর থেকে দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাস ছাড়া শাখা ছাত্রদল। এর নেপথ্যে শুধু ছাত্রলীগের অসহিষ্ণু আচরণই নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতাকে দায়ী করছে সংগঠনটির নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনটির উইং হিসেবে কাজ করছেন বলেও দাবি শাখা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের। তাছাড়া চবি শাখা ছাত্রদলের অনিয়মিত কমিটি দেওয়ার সংস্কৃতিও এরজন্য দায়ী করছেন অনেকেই।
তথ্যমতে, কয়েকটি ঝটিকা সফর ছাড়া ২০১৮ সালের পর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের দৃশ্যমান কোনও কার্যক্রম দেখা যায়নি। তবে ছাত্রলীগ ভীতিকেই বড় বাঁধা হিসেবে দেখছেন তারা। ক্লাস এবং পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে চলতে হচ্ছে দলটির নেতাকর্মীদের। গতবছরের নভেম্বরে বিলুপ্ত করা হয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ পূর্ণাঙ্গ কমিটির।
আরও পড়ুন: চবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা
জানতে চাইলে চবি ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মোঃ ইয়াসিন বলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে রাজনৈতিক পরিচয় দিতে গিয়ে হামলা এবং মামলার স্বীকার হয়েছি আমরা। ছাত্রদলের সম্পর্ক আছে এমন কেউ ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারে না, ক্লাসে যেতে পারে না। এমনও ইতিহাসও আছে পরীক্ষা দিতে এসেছে তবে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হতে হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাহলে ক্যাম্পাসে কিভাবে আমরা অবস্থান করব? আমাদের তো কোনও নিরাপত্তা নেই ক্যাম্পাসে। প্রশাসন ছাত্রলীগকে দমন তো দূরের কথা বরং লালন করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমার কোনও ছোটভাই অথবা কোনো সহযোদ্ধা সমস্যার সম্মুখীন হোক তা আমি চাইতে পারি না!
শাখা ছাত্রদলের বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বহুবার ছাত্রলীগের হামলার সম্মুখীন হয়েছি। তারা গণতান্ত্রিক অধিকার তো আদায় করতে পারেনি বরং তারা প্রশাসনের পক্ষ নেয়। হলের খাবারের নিম্নমান, শাটল ট্রেনের দুরাবস্থা, লাইব্রেরীর সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা, চাকসু নির্বাচন সহ শিক্ষার্থীদের কোন অধিকার নিয়ে ছাত্রলীগ এগিয়ে এসেছে? অথচ ছাত্রদল কোনও কিছু করতে গেলেই হামলা করে তারা এবং প্রশাসন তা চেয়ে চেয়ে দেখেও না দেখার ভান করে।
তবে ক্যাম্পাসে অস্তিত্ব সংকটের জন্য ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিকেও কিছুটা দায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন চবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, যেকোনো সংগঠনের নিয়মিত কমিটি না থাকায় ছাত্রনেতা এবং কর্মীদের উদ্যম কমে আসে। তবে ছাত্রলীগের অসহিষ্ণু মনোভাব এবং প্রশাসনের অসহযোগিতামূলক আচরণ আমাদের বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল দলের ছাত্রনেতাদের নিয়ে কোনো পরামর্শও করেনি। ছাত্রলীগ আমাদের হামলা করে আহত করেছে প্রশাসন কোনো বিচার করেনি। শুধু ছাত্রদল না বামপন্থী সংগঠনগুলোকেও ছাত্রলীগ হামলা করেছে।
আরও পড়ুন: চবিতে ছাত্রলীগ নেতার হাতে নারী সাংবাদিক হেনস্তা
শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, প্রশাসন এখানে সরকারদলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তবে আমরা এবার আর নিরব থাকব না। এবারের নির্বাচনে আমাদের তৃণমূল থেকে কার্যকরী ভূমিকা থাকবে। যুগপৎ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি গণআন্দোলনের দিকে।
ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের উপর হামলার অভিযোগের বিষয়ে চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কেউ তৈরি করতে চাইলে আমরা বসে থাকতে পারি না। তবে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি করতে চাইলে ছাত্রলীগ বাঁধা দিবে না। তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে ছাত্রলীগের উপর দোষ দেয়।
ছাত্রদল দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে আসেও না। তবে সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর হামলার অভিযোগের বিষয়টি স্মরণ হচ্ছে না বলে জানান ছাত্রলীগ সভাপতি রুবেল।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ছাত্রদলের উপর হামলার ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘসময় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের উপস্থিতি দেখি না। যদি তেমন কোনো বিষয় থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। বিশ্ববিদ্যালের নিয়মিত ছাত্ররা অবশ্যই ক্যাম্পাসে আসতে পারবে। কেউ তাদের বাঁধা দিলে জানাতে পারে।