ছাত্রলীগকে সম্মেলনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগেই ছাত্রলীগকে সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার (৩০ অক্টোবর) এ নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির জাতীয় সম্মেলন নিয়ে এক সভায় তিনি এ নির্দেশনার কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন করার জন্য দলীয় সভাপতি নির্দেশ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে এই সম্মেলনগুলো হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের জানান, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন করে ফেলব। তিনি আরও জানান, আমরা সমন্বয় করছি এই ব্যাপারে। নেত্রীর উপস্থিতিতে সম্মেলন করতে চান সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। তাঁর সময়সূচির সঙ্গে মিলিয়ে তারিখগুলো দেয়া হবে বলেও জানান কাদের।
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে গেছে ২০২১ সালে ৩১ জুলাই। আর ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দুই বছর পর পর হওয়ার কথা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। সেজন্য, সবার নজর ছিলো সংগঠনটির সাংগঠনিক অভিভাবক শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকে। সহযোগী সংগঠন যাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, তাদেরও সম্মেলন দাবি জোরালো ছিলো অনেকদিন ধরেই। পাশাপাশি, দলটির সহযোগী সংগঠন যাদের মেয়াদ উত্তীর্ণদেরও সম্মেলন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে নেতা-কর্মীদের।
এর আগে, গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক বিষয়গুলো নিয়ে নির্দেশনা দেন। যদিও, আশা করা হচ্ছিল ওই সভা থেকে জানা যাবে সম্মেলনের তারিখ। কিন্তু সভা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পায়নি সম্মেলন প্রত্যাশীরা। পরবর্তীতে, গুঞ্জন ছিলো গত সেপ্টেম্বরে সম্মেলন হবার। কিন্তু, দলীয় অভিভাবক শেখ হাসিনার কোনো নির্দেশনা না থাকায় আলোর মুখ দেখেনি সম্মেলনের ওই গুঞ্জনও। ফলে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর নতুন করে অনেকটাই আশাবাদী হচ্ছেন ৩০তম সম্মেলন ঘিরে পদ-প্রত্যাশীরা।
আরও পড়ুন: পাওয়ার পলিটিক্স নয়, রিসার্চ পলিটিক্সে গুরুত্ব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের
২০১৮ সালের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হয়। এর প্রায় এক বছর পর ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। দুর্নীতি, অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনকেই অব্যাহতি দেয়া হয় ওই কমিটি থেকে। এরপর সংগঠনটির দায়িত্ব নেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। তারা এখনও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ২০২০ সালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ দুজনকেই ভারপ্রাপ্ত থেকে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে এ দুজনের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। তাই, এখন ছাত্রলীগের সম্মেলনে চোখ সংগনটির সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের।
তথ্য বলছে, নব্বই দশকের পর ছাত্রলীগের প্রায় সব কমিটিই সম্মেলন আয়োজনের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছে। এসব কমিটি দুই বছর মেয়াদের জায়গায় চার বছর পার করেছে। তবে, করোনা মহামারীর কারণে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন নিয়মিত সময়ে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। তারা বলছেন, নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় অনেক যোগ্য প্রার্থীর নির্ধারিত বয়স (২৯ বছর) পার হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে বয়স এক বছর শিথিল করার দাবিও তাদের।
ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলছেন, আশাকরি ৩০তম জাতীয় সম্মেলনে সাহসী ও সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন নেতৃত্ব উপহার পাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তারা বলেন, দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক, সংগঠনের গঠনতন্ত্র। অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং সংগঠনে আদর্শিক চর্চার ধারাকে গতিশীল করাই বর্তমান সময়ের মূল চ্যালেঞ্জ এবং মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং অপশক্তির মোকাবেলা করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকিমুক্ত রাখাও আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলেও জানান তারা।
তারা বলছেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় অধিকাংশ নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তারা জানান, নিয়মিত সভা না হওয়া, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন ইউনিটে বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি দেয়া, পছন্দের লোকদের দিয়ে সংগঠন পরিচালনা করার কারণে এই দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রলীগের সম্মেলন চান তারা।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনের ব্যাপারে নির্দেশনা দেন দলটির দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের এক সভায় এ নির্দেশনা দেন। । এর পর পরই সম্মেলন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে দলটির সকলস্তরে।