কোথাও নিজেরা-নিজেরা, কোথাও বিরোধীদের মারছে ছাত্রলীগ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মরণসভা ডাকা হয়েছিল। শুক্রবার (০৭ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এ সভায় হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ১৩ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অবশ্য বিরোধীদের উপর ছাত্রলীগের এমন হামলা-মারধর নতুন কিছু নয়। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসেই এ ধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে।
শুধু প্রতিপক্ষ বা বিরোধীদের সঙ্গেই নয়, দেশের কিছু কিছু ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজেরা নিজেদের মধ্যেই মারামারিতে জড়াচ্ছে। গেল মাসের ২৫ সেপ্টেম্বর ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে তাদের বিরোধী নেতাদের রেষারেষির জের ধরে দুপক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের বিরোধীপক্ষের ১৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া শাখা ছাত্রলীগের কমিটিও স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
আরও পড়ুন: মাস্টার্স শেষ হলেও ১৫ বছরে অনার্স শেষ হয়নি ছাত্রলীগ সভাপতির
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগে মারামরারির ঘটনা লেগেই থাকে। আধিপত্য বিস্তার, হল দখল এবং শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপগুলোর শক্তি প্রদর্শনে চলে এসব মারামারি-সংঘর্ষের ঘটনা। গেল ১৬ সেপ্টেম্বর আবাসিক হলের কক্ষের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুগ্রুপ। এ সময় হলের চারটি কক্ষ ভাঙচুর করে তারা। আহত হন অন্তত চারজন।
গত ০৪ সেপ্টেম্বর ক্যাফেটেরিয়ায় তালা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও রড নিয়ে পক্ষ দুটির প্রায় দুই ঘণ্টার মহড়ায় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষকালে গুলিবিনিময় ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় এক সাংবাদিক ছাড়াও দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। কলেজের উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রাবাসের ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ বাধে।
আরও পড়ুন: কর্মীর হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে চবি ছাত্রলীগ নেতা
ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ
গত ০১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের একাংশের বিক্ষোভের কারণে ৪টি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চৌধুরী আমির মোহাম্মদ মুছা বলেছেন, বিক্ষোভের কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যেহেতু ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি, তাই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চলতি মাসের গত ২ অক্টোবর অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির সব আবাসিক হল বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। এছাড়া আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিরোধীদের মারছে ছাত্রলীগ
২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সাথে দেখা করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুনের নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে হামলায় আহত নবগঠিত ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির ছয় সদস্যকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিরোধীদের পেটানোর ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভা হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এ হামলায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ১৩ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রোগ্রামে না যাওয়ায় ১৫ ছাত্রকে হল থেকে বের করে দিল ছাত্রলীগ
হাইকমান্ডের নজরে ছাত্রলীগ
সংগঠনে অনুপ্রবেশ, প্রেস রিলিজে কমিটি গঠন, বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ায় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে কড়া হুঁশিয়ারি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ছাত্রনেতা জয়-লেখককে কাদের বলেন, জেলায় জেলায় কমিটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটেছে; তাছাড়া প্রেস রিলিজে কমিটি দেয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। এসব বন্ধ করতে হবে। যেখানে ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানেই তোমরা (জয়-লেখক) কথা বলে ঠিক কর। ছাত্রলীগকে আর বিতর্কিত করা যাবে না, দলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।