পা-য়ে ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, পা দিয়েই হতে চান জজ
কথায় আছে, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। শ্রম ছাড়া কোন জাতি বা ব্যক্তি উন্নতি লাভ করতে পারে না। আর দশজনের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিউটির ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। হাত নেই, পা দিয়ে লিখেই চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের পড়াশোনা। স্বপ্ন দেখেন অনেক দূরে যাবেন। হবেন জজ (বিচারক)।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর গ্রামের বায়েজিদের মেয়ে বিউটি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলেন। দুটি হাত না থাকলেও বাবা-মায়ের চেষ্টায় পা দিয়ে লিখেই পিএসসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫। এইচএসসিতে এ গ্রেড। বিউটি এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
বিউটি বলেন, 'বাবা-মা মনে করেছিল হয়তো আমার পড়াশোনা হবে না। যেহেতু আমার হাত নেই, সুতরাং কীভাবে লিখব? আমার বাবা ছােটবেলাতে চক দিয়ে প্রথম পা দিয়ে লেখা শুরু করান। বাবার প্রচেষ্টায় পা দিয়ে লেখা শুরু করি। তারপর থেকে পা দিয়ে লিখেই চালিয়ে গেছি পড়াশোনা। সবার ভালোবাসা সহযোগিতায় আমি এতদূরে আসতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমি ছোটবেলায় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। যেহেতু আইনজীবী নিয়ে পড়াশোনা করছি তাই এখন আমি বিসিএস দিয়ে জজ হতে চাই। এমন কিছু করবো যার মাধ্যমে মানুষের সেবা করতে পারি।'
বিউটির একমাত্র ভাই আব্দুর রহমান শুধু বোনের সুবিধার জন্য চলে এসেছেন রাজশাহীতে। বিউটির ভাবি দেখাশোনা করেন তাকে। প্রতিদিন ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন।ভাই-ভাবির সাথেই থাকেন তিনি।
বিউটির বন্ধুরা বলেন, বিউটি আমাদের আইন বিভাগের গর্ব। তার পাহাড় সমান ইচ্ছে শক্তি। যা খুব কম মানুষের মধ্যেই আছে। আমরা মাঝেমধ্যে অনুপ্রাণিত হয় একটা মেয়ে কীভাবে এত ইচ্ছাশক্তি রাখতে পারে।
আরও পড়ুন: মানুষ বলে তুমি খাটো, ক্লাসে অনেকেই আমার সঙ্গে বসতে চায় না
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক হাসিবুল আলম জানান, বিউটি দারুণ মেধাবী সে কোন কোটা নয় বরং নিজ মেধায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ক্লাসে সে নিয়মিত এবং পরীক্ষাতেও অনেক ভালো রেজাল্ট করছে। আরও সুযোগ সুবিধা পেলে নিশ্চয় সে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবে।
বিউটি দেখিয়ে দিয়েছে হাত না থেকেও পরিবার বা সমাজের বোঝা না হয়ে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। কখনও হননি কারোর দয়ার পাত্র। মনের শক্তি আর অধ্যাবসায় দ্বারা অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়। দুই হাত না থাকার পরেও জীবন সংগ্রামে এতদূরে এগিয়ে এসেছেন বিউটি। পরিশ্রমী ব্যাক্তি আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হয়।