ছেলের মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় হোটেল শ্রমিক বাবা

মা-বাবা আর দুই ভাই-বোন
মা-বাবা আর দুই ভাই-বোন  © সংগৃহীত

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেলে চান্স পেয়েছেন প্রতীক কুমার সরকার। ডাক্তারি পড়ে একজন মানবিক চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করার স্বপ্ন তার। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে যাচ্ছে। অর্থাভাবে মেডিকেলে ভর্তি হতে পারছে না সে।

প্রতীকের বাড়ি গাইবান্ধা শহরের কালীবাড়িপাড়ায়। তার বাবা প্রবীর সরকার একজন হোটেল শ্রমিক। সন্তানের সাফল্যে খুশি হলেও পড়াশোনার আগামী দিনগুলোর কথা ভেবে রাজ্যের দুশ্চিন্তা ভর করেছে দরিদ্র এই বাবার মনে। তাঁর ছেলে প্রতীক কুমার সরকার এবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

প্রতীকরা থাকেন শহরের ব্রিজ রোড কালীবাড়িপাড়ার একটি টিনশেড ঘরে। মা-বাবা আর দুই ভাই-বোন। প্রতীকের মা বীথি সরকার গৃহিণী। একমাত্র বোন অনন্যা সরকার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দুই শতক ভিটায় ওই টিনশেড ঘর ছাড়া আর কোনো সম্পদ তাঁদের নেই। ওই ঘরের বারান্দায় কক্ষ বানিয়ে সেখানে লেখাপড়া করেন প্রতীক।

প্রতীক কুমার ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র। ২০১৩ সালে গাইবান্ধা ইসলামিয়া কিন্ডারগার্টেন থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। পরে তিনি গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পান। ২০১৯ সালে একই বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান।

আরও পড়ুন: মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম মিম

২০২১ সালে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে প্রতীক জিপিএ-৫ পান। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এ কলেজে ভর্তির তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যেই ভর্তির টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রতীকের বাবা। তিনি হোটেল থেকে মাসে ৯ হাজার টাকা বেতন-ভাতা পান। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। বেতনের টাকা দিয়ে সংসারই চলে না।

এর পাশাপাশি আছে দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগানো। মেডিকেলে ভর্তি হতে অন্তত ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন, পাশাপাশি আছে বই কেনা ও ময়মনসিংহে থেকে লেখাপড়া চালানো। সব মিলিয়ে সন্তানের ভবিষ্যৎ দিনগুলো নিয়ে বেশ চিন্তায় প্রবীর সরকার।

প্রবীর সরকার বলেন, পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে কিংবা পোশাক, বই-খাতা কিনতে অতিরিক্ত খরচ হয়। ফলে ৮-৯ বছর ধরে দুটি এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিচ্ছেন, পরিশোধও করছেন। আবার ঋণ নিয়ে কিস্তি চালাচ্ছেন। বর্তমানে দুটি এনজিওতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ আছে তাঁর। প্রতি সপ্তাহে দুটি প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে কিস্তির টাকা দিতে হয়।

তিনি বলেন, কোনো পূজার সময় ছেলে-মেয়েকে নতুন পোশাক দিতে পারেননি। দুবেলা কোনোমতে ভাত জুটলেও শাকসবজি ও ভর্তা-ছানা ছাড়া ভালোমন্দ খাবার জোটেনি। কত দিন থেকে মাংস ও বড় মাছ কেনেননি, তা তাঁর মনে পড়ে না।

প্রতীক কুমার বলেন, ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সে জন্য মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করেছেন। তাঁর স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। কিন্তু তাঁর বাবা ভর্তির টাকা জোগাতে পারছেন না। তিনি জানান, ভর্তির সুযোগ পেলে চিকিৎসক হবেন। তখন তিনি বিনা মূল্যে গরিব–অসহায় মানুষকে সেবা দেবেন।


সর্বশেষ সংবাদ