চাকরির পেছনে না ছুটে গবির সোহানের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
হতে পারতেন আইনজীবী কিংবা সাংবাদিক। কিন্তু কোনটাই হলেন না, পেশা হিসেবে বেছে নিলেন পরোপকারী বৃক্ষকে। সুজলা-সুফলা বাংলার অপরূপকে হৃদয়ের গহীনে ধারণ করে সবকিছু বাদ দিয়ে এই বৃক্ষের মধ্যেই সুখ খুঁজে নিয়েছেন। আর এই সুখ থেকেই তৈরি করলেন সবুজ বিপ্লব। গড়ে তুলনেন ৩০০ প্রজাতির বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ অ্যাপোলো এবং চাঁদপুর জেলা শহরে পুলিশ লাইন নামে বিশাল দুটি নার্সারি। বলছি একজন বৃক্ষেপ্রেমী ওমর ফারুক সোহানের কথা।
আরও পড়ুন: মুরগি আগে না ডিম? যুগ যুগ ধরে চলা রহস্যের সমাধান গবেষণায়
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) থেকে স্নাতক এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে নিজ জেলা চাঁদপুরের জজ কোর্টে শিক্ষানবিশ আইনজীবী ছিলেন বছর খানেক। দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) ২য় কমিটির (২০১৪-২০১৫) সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। তিনি গবি সাংবাদিক সমিতির আজীবন উপদেষ্টা।
চাঁদপুর জেলা শহরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিবন্ধিত অ্যাপোলো নার্সারি এবং পুলিশ লাইন নার্সারির স্বত্বাধিকারী সোহান বলেন, কৃষি সম্ভবনাময় বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করছি। আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে এই পেশায় আশা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু ভালো আছি।
আরও পড়ুন: মাছের টিকা উদ্ভাবন করলেন সিকৃবির শিক্ষক
তার নার্সারিতে দেশি-বিদেশি ৩০০ প্রজাতির গাছ আছে। দূরদূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, চাঁদপুর জেলার সবচেয়ে বড় বাগান এটি। আপেল, আনার, তিন, জয়তুন, পার্সিমন, এবোকাডো, রামভুটান, ডুরিয়ান, আনার, ইয়োলো মাল্টা, ব্লাড মাল্টা, নতুন নতুন জাতের কমলাসহ ৫০ এর অধিক জাতের আম, চা পাতার গাছ, স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি ফল, ১০০ রঙের গোলাপ চারাইনডোর প্লান্ট, সাকুলেন্ট, গ্রিন লিফ, পিটুনিয়া, ক্যাকটাসসহ কতশত গাছ। গাছে গাছে ভরা এই নার্সারি।
গ্রীষ্মকালে আমের রাজ্যে পরিণত হয় ২ একরের দুটো নার্সারি। অনলাইনে ৬৪ জেলায় মাল্টি গ্রাফটিং চারা বিক্রি করেন। কৃষি সেবায় খুলছে ফেসবুক পেজ। গাছ কিনতে আসা জিন্নাতল তানিয়া জানান, চমৎকার কয়েকটি গাছ কিনেছি। ভালো মানের সব গাছ সুলভ মূল্যে পেয়েছি। দুটো গাছ উপহারও দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: গবেষণায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের
ওমর ফারুক আইন পড়ে ব্যবসায়ে ঝুঁকি নিয়েছেন সাড়ে ৩ বছর ধরে। তিনি বলেন, বাবা মৃত দেলোয়ার চৌধুরী নার্সারি ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরে আমি হাল ধরেছি। নার্সারিতে এমনও জাতের চারা আছে, যা বাংলাদেশে একদম নতুন প্রজাতির। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গাছ বা সায়ন সংগ্রহ করে থাকি। নতুন জাতের মাতৃ গাছও তৈরি করি।
জানা যায়, তার পারিবারিক এই ব্যবসার বয়স ২০ বছর। এখানকার পুলিশ লাইনে পরিত্যক্ত ডোবা পড়ে ছিল। তৎকালীন দায়িত্বরত পুলিশ সুপার (এসপি) আমির জাফর ১৫ শতাংশ জমিতে নার্সারি করার অনুমতি দেন। সেই থেকে শুরু।
ক্যাম্পাস জীবনে সোনালি সময় কেটেছে সোহানের। ২৯ বয়সী এই তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, চাচা টাকশালের উৎপাদন শাখার পরিচালক। তার মাধ্যমে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হই। ক্যাম্পাসে থাকাকালীন পলাশ, শিমুল, বকুল আপেলসহ নানা ধরনের গাছ রোপণ করেছি।
বর্তমানে নার্সারিতে ১০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। নিজ উদ্যোগে মহামারিতে বাড়ি বাড়ি ত্রাণ পৌঁছে দেন। লকডাউনে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও জরুরি অক্সিজেন সেবা চালু করেন।
চাঁদপুরের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোহান মাতৃ গাছ থেকে সায়ন সংগ্রহ করে নতুন চারা তৈরি করেন। যা কৃষি সম্ভবনাময় বাংলাদেশে বিদেশি ফল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।