ঘর নেই, ট্রেনেই চলছে পড়াশোনা

১৪ বছর বয়সী এক ছেলে। তাকে প্রায়ই দেখা যায় লোকাল ট্রেনে মন দিয়ে পড়ছে। তার ঘর নেই। তাই ট্রেনে বসে পড়াশুনা করতে হয়ে ছেলেটিকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ঘটনা এটা।

রাত আটটার আপ শিয়ালদা লোকাল। কাকদ্বীপ স্টেশন থেকে ছাড়ার পর একটি কামরার মধ্যে ১৪ বছর বয়সী একটি ছেলের দেখা পাওয়া যায়। কোনও দিন সিটের ওপর, আবার কোনও দিন মেঝেতে বই নিয়ে এক মনে পড়াশোনা করে চলেছে। পাশের সিটে ঘুমে কাতর সাত বছরের বোন। আর একপাশে বসে আছেন এক নারী। সম্পর্কে ছেলেটির মা তিনি। ৩০ বছর বয়সী সেই নারীর চোখেমুখে একরাশ ক্লান্তি। তিনিও মাঝেমধ্যে ঘুমে ঢলে পড়ছেন। কিন্তু ওই কিশোরের পড়ার কোনও ছেদ পড়ে না।

শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার একটার পর একটা স্টেশন পেরিয়ে যায় ট্রেন। রাতের ট্রেনে যাত্রী কম থাকায় কোনও অসুবিধা হয় না। এই একই দৃশ্য কমবেশি প্রায় সারাবছরই দেখা যায়। খুব কম দিন এই দৃশ্যের ছেদ পড়ে। এই ঘটনা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন।

এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ার বরাতে বিষয়টি নজরে আসে কাকদ্বীপের প্রতাপাদিত্য পঞ্চায়েতের কর্মকর্তাদের। শুরু হয় খোঁজখবর। অবশেষে সোমবার সেই কিশোরের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছে কাকদ্বীপের প্রতাপাদিত্য গ্রাম পঞ্চায়েত। পড়াশোনার পাশাপাশি ওই পরিবারের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইও হয়েছে। এবার থেকে পঞ্চায়েতের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘরে থাকবে ওই পরিবার। মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতাও দেওয়া হবে পরিবারটিকে। এদিন পরিবারটিকে পঞ্চায়েতে ডেকে এই ঘোষণা দেন উপপ্রধান বাদল মাইতি।

কাকদ্বীপের বামুনেরমোড় এলাকার একটি তেঁতুল গাছের তলায় ৮ বছর ধরে মওসুমি ফল বিক্রি করেন আরতি দাস। বছর ১৫ আগে এলাকার যুবক বলাই দাসের সঙ্গে আরতির বিয়ে হয়েছিল। দুই সন্তান হওয়ার পর আরতিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় স্বামী। ২ নাবালক সন্তানকে নিয়ে তখন মহা সঙ্কটে পড়েন আরতি। আরতীর বাপের বাড়ি রায়দিঘির কাশীনগরে। বাপের বাড়িতেও টানাটানির সংসার। কিন্তু সে সময় আরতির অভাবী মা মেয়ের হাতে ৫০০ টাকা তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‌নিজের মতো করে কিছু করে সংসার চালা। সেই শুরু। মওসুমি ফল নিয়ে একসময় কাকদ্বীপ বাজারে বসতেন আরতি। দুই সন্তান তখন খুব ছোট। কিন্তু কোনও বাড়ি ছিল না। তাই দোকানের পাশেই শুয়ে রাত কাটত তাঁদের। এরপর শিয়ালদা থেকে ফল কেনা শুরু। ছেলে অর্জুন প্রাইমারির সীমানা পেরিয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছে। স্থানীয় জ্ঞানদাময়ী স্কুলে ভর্তি হয় সে। মেয়ে পূর্ণিমা আইসিডিএস স্কুলে পড়ে।
অর্জুন ক্লাস সেভেনে পড়ে। ঘর না থাকায় ট্রেনের কামরাই ভরসা।

আরতি জানান, খুব ছোট থেকে ওদের নিয়ে ট্রেনে শিয়ালদা যেতাম। শিয়ালদা কোর্ট চত্বরের পাশে ওদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ফল কিনতাম। তারপর ভোরের ট্রেনে আবার ফিরে আসতাম কাকদ্বীপে। দিনভর দোকান চালাই।

এভাবেই চলে যাচ্ছিল। পঞ্চায়েত পাশে দাঁড়ানোয় খুশি এই পরিবার। (সূত্র: আজকাল)


সর্বশেষ সংবাদ