তারুণ্যের গল্প

ক্ষুধার্ত থাকার দিনগুলি আজও ভুলিনি: সাক্ষাৎকারে নেইমার

সাক্ষাৎকারে কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসছিল নেইমারের
সাক্ষাৎকারে কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসছিল নেইমারের

পেলে ও ম্যারাডোনার মতো নেইমারের জীবনও দারিদ্রে ভরপুর। প্রথমে ফুটপাথ, সমুদ্র সৈকত কিংবা বস্তিতে খেলতে খেলতে বেড়ে ওঠা; এরপর এক সময় বিশ্বসেরা তারকা বনে যাওয়া। দক্ষিণ আমেরিকার সব ফুটবল গ্রেটের ক্ষেত্রেই এর যে কোন একটি প্রযোজ্য। নেইমার দ্য সিলভা সান্তোস জুনিয়রের উত্থানও অন্যসব ফুটবল গ্রেটের মতোই।

খুব কম বয়সেই একজন দক্ষ ফুটবলার হিসেবে বেড়ে উঠেছেন নেইমার। মাত্র ১৭ বছর বয়সে নেইমার প্রফেশনাল ফুটবলার হিসেবে খেলা শুরু করেন; যার মাত্র দুই বছর পর ২০১১-২০১২ সালে সাউথ আমেরিকান ফুটবলার অ্যাওয়ার্ড নিজের নামে করে নেন। এছাড়াও আরও অসংখ্য পুরস্কার ঝুলে আছে তার ঝুড়িতে ।

কিন্তু শৈশবের ক্ষুধার্ত থাকার দিনগুলি আজও ভোলেননি নেইমার। খুব ভালবাসতেন বিস্কুট খেতে। মায়ের কাছে বায়না ধরতেন প্রায় রোজ। কিন্তু সামান্য বিস্কুট কেনারও সামর্থ্য ছিল না তাঁর বাবার! সম্প্রতি ইউটিউবের একটি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেইমার সেই সব দুঃসহ দিনের স্মৃতিচারণ করেছেন অকপটে।

ওই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি ভীষণ বিস্কুট খেতে ভালবাসতাম। কিন্তু আমাদের একটাও বিস্কুট থাকত না। মা আমাকে বলত, এই সপ্তাহেই আমি হয়তো সেটা পাব। অথবা পরের সপ্তাহে। যখন আমার বাবা ওর পাওনা টাকা নিয়ে বাড়ি আসবে, তখন বিস্কুট কিনবে আমার জন্য।’ তার ভাষ্য, ‘আমি মাকে বলতাম, চিন্তা না করতে। দেখবে একদিন অনেক বড়লোক হব। তখন একটা বিস্কুটের কারখানাই কিনে নেব। আর যখন ইচ্ছে বিস্কুট খাব।’ কথাগুলো বলতে বলতে আবেগাপ্লুত নেইমারের গলাটা ধরে আসছিল। বলছিল, ‘আমার মা আজও এই গল্পটা বলতে বলতে কেঁদে ফেলে। আসলে আমাকে বিস্কুট কিনে দিতে না পারাটা সব সময় তাকে কষ্ট দিত। আসলে ক্ষুদার্থ থাকার দিনগুলি আজও ভুলিনি।’

এই তারকা জানিয়েছেন, ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়স হতেই বুঝে যান যে, ফুটবল খেলার সৌজন্যেই তাঁর জীবনে সুদিন আসবে। ‘জানতাম, যদি বাবা-মা ঠিকমতো আমাকে দেখাশোনা করে, তাহলে এই জীবনে আর কখনও কোনও অসুবিধে হবে না,’ হয়েছেও তাই।

একনজরে নেইমারের সব অর্জন

নেইমার ২০১৭ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে যোগ দেন ২২২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে- রেকর্ড গড়েন ব্যয়বহুল ফুটবলার হিসেবে। এতো বিখ্যাত, সফল এবং ধনী হওয়ার পরও নেইমার নিজেকে একদমই বদলাননি।

ছেলেবেলায় তাকে একবার ইন্টারভিউতে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘তুমি কেন ফুটবলার হতে চাও?’ তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ‘যেন আমি আমার পরিবারের যত্ন নিতে পারি। টাকা-পয়সা নিয়ে যেন আমার বাবা-মাকে কোনদিন ভাবতে না হয়।’ নেইমার তার কথা রেখেছেন। অনেক খেলোয়াড়েরই একটু খ্যাতি, অর্থ-বিত্ত পেলে মাথা ঘুরে যায়, ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করে। কিন্তু নেইমার এখনও পরিবারকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসেন। প্রিয় বোন রাফায়েলার ছবি নিজের বাহুতে ট্যাটু করে রেখেছেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ