হতভাগা রুবেল

রুবেল হোসেন, বোল্ড হিম... বাংলাদেশ মেক অ্যা হিস্টরি...’। কথাগুলো ক্রিকেটমোদিদের কানে এখনো বাজে। গত বিশ্বকাপে রুবেল হোসেনে বলে ইংল্যান্ডের দশ নম্বর ব্যাটসম্যান জেমস অ্যান্ডারসনের স্ট্যাম্প এলোমেলো হয়ে যাওয়ার পর ওভাবে বলছিলেন ধারাভাষ্যকার। rubel hossain celebrates a wicket world cup.

রুবেলের সেই বোল্ড বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে (কোয়ার্টার ফাইনাল) তুলে দিয়েছিল। অনেকে মনে করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকেই বদলে দিয়েছে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ! সম্প্রতি বছরগুলোতে নিয়মিত জিতছে বাংলাদেশ। মুখে নয়, মনে মনেও বাংলাদেশকে এখন আর ‘ছোট দল’ ভাবার বিলাসিতা নেই কারো।

গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার পর্যন্ত যাওয়ার সেই শক্তিটা ‘বড় দল’ হতে বড় সাহায্য করেছে বাংলাদেশকে। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার ম্যাচে ৫৩ রানে চার উইকেট নিয়েছিলেন রুবেল। শুধু ওই ম্যাচে নয়, পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ভালো বোলিং করেছিলেন ডানহাতি পেসার। এবারের বিশ্বকাপেও রুবেলের গতির ঝড় দেখার প্রত্যাশা ছিল অনেকের। আর সেটা গত বিশ্বকাপের অমন পাফরম্যান্সের জন্য নয়, রুবেলের সাম্প্রতিক ফর্মের কারণেই। অনেকদিন ধরেই বল হাতে নিয়মিত পারফরমার রুবেল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে ভালো বোলিং করেছেন। ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজটা পুরো খেলতে পারেননি। তবে এক ম্যাচ খেলে বুঝিয়ে দিয়েছেন বেশ ভালো ছন্দেই আছেন।

রুবেলের গতিকে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বড় সম্পদ মনে করা হচ্ছিল। দলের সবচেয়ে গতিশীল বোলার তিনিই। নিয়মিত ১৪০ এর আশেপাশে গতিতে বোলিং করতে পারেন তিনি। বলের লাইন-লেংথও চমৎকার। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছিলেন, ইংল্যান্ডের গতিময় উইকেটে বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানকে ভড়কে দিবেন রুবেল। কিন্তু কিসের কী! রুবেল সুযোগ পাচ্ছেন কই? মেহেদি হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতরা স্পিনে দারুণ সাফল্য পাচ্ছেন।

ওদিকে তরুণ পেস অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিন হঠাৎ-ই যেন কার্যকারী উইকেট শিকারী বনে গেলেন! দুই মিলিয়ে বিশ্বকাপে সুযোগই মিলছে না রুবেলের। সাইফুদ্দিনের ইনজুরির কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুযোগ মিলেছিল রুবেলের। ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চের মতো ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে রুবেলের প্রথম স্পেলটা হয়েছিল দুর্দান্তই। প্রথম স্পেলে চার ওভার বোলিং করে মাত্র ১৭ রান খরচ করেছিলেন রুবেল। তার দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ আর গতির কাছে বারবার পরাস্ত হচ্ছিলেন ওয়ার্নার-ফিঞ্চ। পরে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল অতিমানব হয়ে উঠলে বোলিং ফিগারটা অবশ্য প্রত্যাশামতো রাখতে পারেননি। পরের ছয় ওভারে বেশ খরুচে ছিলেন। তবে সেই কয়েকটা ওভারের দুঃস্মৃতি কাটিয়ে উঠার আর সুযোগ পাননি রুবেল।

সাইফুদ্দিন ইনজুরি কাটিয়ে উঠলে পরের ম্যাচে আবারও একাদশের বাইরে থাকতে হয়েছে অভিজ্ঞ এই পেসারকে। সাইফুদ্দিন যে ফর্মে আছেন এবং স্পিনাররা নিয়মিতভাবে যেভাবে সাফল্য পাচ্ছেন তাতে এবারের বিশ্বকাপে রুবেলকে আর বল করতে দেখা যাবে কিনা সন্দেহ। সব মিলিয়ে নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন রুবেল।

লেখক: ক্রীড়া সাংবাদিক


সর্বশেষ সংবাদ