বিরল রেকর্ড গড়লেন উসমান খাওয়াজা

উসমান খাওয়াজা
উসমান খাওয়াজা  © সংগৃহীত

দুই বছর আগে ১৯৫ রানে অপরাজিত থাকার অম্ল-মধুর স্বাদ পেতে হয়েছিল বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে দল ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ায়। আরও তিন দফায় ১৭০ ছুঁয়েও পাননি দ্বিশতক।  অবশেষে এবার সেই কাঙ্ক্ষিত সেই সীমানায় পা রাখলেন উসমান খাওয়াজা। টেস্ট অভিষেকের ১৪ বছর পর, কয়েক দফায় দলে আসা-যাওয়ার পালা শেষে, ৭৮ টেস্ট খেলার পর, বয়স ৩৮ পেরিয়ে ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ডাবল সেঞ্চুরি করে রেকর্ড আর অনন্য অর্জনে নিজেকে রাঙান খাওয়াজা। অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে আর কোনো ওপেনার দুইশর দেখা পাননি ৩৮ বছর বয়সে।

প্রথম দিন শেষে তিনি অপরাজিত ছিলেন ১৪৭ রানে। দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) প্রথম সেশনেই ঘুচিয়ে দেন দ্বিশতকের সঙ্গে দূরত্ব। শ্রীলঙ্কায় এই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারলেন কোনো অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান। আগের সর্বোচ্চ ১৬৬ ছিল আরেক বাঁহাতি ওপেনার জাস্টিন ল্যাঙ্গারের। ২০০৪ সালে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ওপেন করতে নেমেই ইনিংসটি খেলেছিলেন খাওয়াজার সাবেক কোচ। ওই সিরিজেই ক্যান্ডিতে ১৬১ করেছিলেন ডেমিয়েন মার্টিন।

৩৮ বছর ৪২ দিন বয়সের ডাবল সেঞ্চুরিতে আরও রেকর্ড ধরা দিয়েছে খাওয়াজার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তার চেয়ে বেশি বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি আছে আর কেবল স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের। সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান বলে বিবেচিত এই কিংবদন্তি ১৯৪৬ সালে একটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ৩৮ বছর ১০৮ দিন বয়সে, ১৯৪৮ সালে আরেকটি করেছিলেন ৩৯ বছর ১৪৯ দিন বয়সে।

তবে ওপেনিংয়ে ৩৮ বছর বয়সে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তিতে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অনন্য। সবচেয়ে বেশি বয়সে ডাবল সেঞ্চুরির আগের রেকর্ড ছিল ডেভিড ওয়ার্নারের। ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি ৩৬ বছর ৬০ দিন বয়সে।

১৪৭ রানে দিন শুরু করা খাওয়াজা আগের দিনের মতোই সাবলীল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন মাইলফলকের দিকে। স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে তার জুটি পেরিয়ে যায় আড়াইশ। সেই জুটি থামে ২৬৬ রানে। লেগ স্পিনার জেফ্রি ভ্যান্ডারসের সোজা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয় যান ১৪১ রান করা উসমান খাওয়াজা।

অভিষিক্ত জশ ইংলিস ক্রিজে গিয়েই প্রমাণ দিতে থাকেন, কেন তাকে এই সিরিজে বেছে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। স্পিনে দারুণ দক্ষ বলে পরিচিত ব্যাটসম্যান টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম বলেই বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করেন। লঙ্কান স্পিনার লেংথ এলোমেলো করে দিয়ে খেলতে থাকেন তিনি।

খাওয়াজা ছিলেন নিজের মতোই আত্মবিশ্বাসী। ১৯০ পেরিয়েও সুইপ, রিভার্স সুইপ খেলতে থাকেন অবলিলায়। মাইলফলকে পা রাখেন ২৯০ বলে। তার উচ্ছ্বসিত ও দীর্ঘ উদযাপনই বলে দিচ্ছিল, কতটা প্রতীক্ষায় ছিলেন তিনি।

অথচ কিছুদিন আগেই দলে জায়গা নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল তার। ভারত সিরিজের মাঝপথে তাকে বাদ দেওয়ার ডাকও উঠেছিল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে। সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক পরামর্শ দিয়েছিলেন, সিডনিতে ঘরের মাঠ থেকে অবসর নেওয়া উচিত খাওয়াজার।

শ্রীলঙ্কা সফরে ব্যর্থ হলে হয়তো টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতিই হয়ে যেত তার। এখান থেকেই আবার নতুন শুরু। দেড় বছর আর ৩৩ ইনিংসের খরা কাটিয়ে সেঞ্চুরি করলেন প্রথম দিনে। দ্বিতীয় দিনে জায়গা করে নিলেন ইতিহাসের পাতায়।


সর্বশেষ সংবাদ