১৬ বছরের ক্যারিয়ারে তামিমের যত অর্জন

তামিম ইকবাল
তামিম ইকবাল  © সংগৃহীত

তামিম ইকবাল বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। ভক্তদের অবাক করে হুট করেই বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিলেন অবসর। সঙ্গে দিয়ে যান বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অসামান্য সব অর্জন। কর্মজীবন ও ব্যক্তিগতজীবন দুটিতেই ছিলেন অসাধারাণ। সমালোচনা যেন কখনোই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। আজ জেনে নেয়া যাক বাঁ-হাতি এ ওপেনারের সব অর্জন এবং জীবন সম্পর্কে।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
তামিম ১৯৮৯ সালের ২০ মার্চ চট্টগ্রামের কাজীর দেওরিতে বিখ্যাত খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইকবাল খান ও মা নুসরাত ইকবাল। তার বাবা ছিলেন ফুটবলার ও ক্রিকেটার। ২০০০ সালে মারা যান তিনি। বড় ভাই সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল। তাদের একটি ছোট বোন আছে। ক্রিকেটার আকরাম খান তার চাচা। ব্যাক্তিগত জীবনে তাঁর আয়েশা সিদ্দিকা নামে স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে।

খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
দেশের হয়ে ৭০টি টেস্ট, ২৪১টি ওয়ানডে এবং ৭৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। ২৫টি সেঞ্চুরি এবং ৯৪টি হাফ সেঞ্চুরিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজারের বেশি রান করেছেন বাঁ-হাতি এ ওপেনার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই তার সেঞ্চুরি রয়েছে এবং প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন এবং সেই সাথে রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম সনাথ জয়াসুরিয়ার করা ২৫১৪ রানের রেকর্ড ভেঙে একই ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের অধিকারী হিসেবে নিজের নাম লেখান। তামিম ইকবালই একক বাংলাদেশী হিসেবে সীমিত ওভারের সংস্করণে সর্বোচ্চ রানের মালিক এবং একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই সেঞ্চুরির অধিকারী। এছাড়াও তামিম ইকবাল একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২০টি সেঞ্চুরির অধিকারী। বর্তমানে তিনি টেস্ট, ওডিআই ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে বাংলাদেশী হিসেবে সর্বোচ্চ রানের অধিকারী খেলোয়াড়।

ক্রিকেট জীবন
২০০৯ মৌসুমের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তামিম ইকবাল তার প্রথম টেস্ট শতক করেন। তামিমের ব্যাটিং বাংলাদেশকে এক ঐতিহাসিক বিজয় এনে দেয়। এটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট বিজয় এবং দেশের বাইরের মাটিতেও প্রথম টেস্ট জয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট হাতে নেমে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২০০০ রানের রেকর্ড গড়েন তামিম ইকবাল। প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক শতক আসে আয়ারল্যান্ড দলের বিপক্ষে। 

ভারত, শ্রীলঙ্কা নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রশিক্ষক জেমি সিডন্স তার সম্পর্কে বলেছেন, "তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিকমানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হবার যোগ্যতা আছে"।  ১৩ই মার্চ, ২০১০ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৮৬ রানের একটি অনবদ্য ইনিংস খেলে তামিম ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। শুধুমাত্র শচীন তেন্ডুলকর এবং মোহাম্মদ আশরাফুল তারচেয়েও কম বয়সে এ মাইলফলক স্পর্শ করতে পেরেছিলেন। এই টেস্টেরই দ্বিতীয় ইনিংসে ও পরের টেস্টের প্রথম ইনিংসে তামিম পরপর দু'টো সেঞ্চুরি করেন। ২০১২ সালে এশিয়া কাপে তামিম ইকবাল ৪টি ম্যাচেই হাফ-সেঞ্চুরি করেন এবং বাংলাদেশ ২য় বারের মতো কোনো ত্রি-দেশীয় ক্রিকেট সিরিজের ফাইনালে উঠে।

জাতীয় দলের অধিনায়ক
২০২০ সালের ৮ মার্চ মাশরাফির অবসর গ্রহণের পরে তামিমকে বাংলাদেশের একদিনের আন্তর্জাতিক (ওডিআই) দলের অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। তারপর ২০২২ সালের ১৭ই জুলাই তামিম নিজের ফেসবুক পেজে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দেন। 

২০১১ সালে তামিম উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক ম্যাগাজিন কর্তৃক বছরের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন হিসেবে নির্বাচিত হন। গ্রেম সোয়ান ও বীরেন্দ্র শেবাগকে পেছনে ফেলে তামিম এ খেতাব জিতে নেন।


সর্বশেষ সংবাদ