দুই দিনের জ্বরে মারা যাওয়া সাবিনাও থাকতে পারতেন এই বিজয়ী দলে
সাফ চ্যাম্পিয়নের ফাইনালে নেপালকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে নারী ফুটবল দল। সোমবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন সাবিনা-কৃষ্ণারা। নারী ফুটবল দলকে বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। সেই ছাদখোলা বাসে দাড়িয়ে ঢাকার মাটিতে বিজয় উৎসব করবে বাংলার বাঘিনীরা। এ বিজয়ের অন্যতম কারিগর কলসিন্দুরের মেয়েরা।
সেই কলসিন্দুরের মেয়েদের ফুটবল দলেরই একজন ছিলো সাবিনা ইয়াসমিন। জাতীয় দলের নারী ফুটবলার। অনূর্ধ্ব–১৪ ফুটবল ক্যাম্প থেকে ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিল। ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জ্বরে আক্রান্ত হয়। ২৭ তারিখ তার ঢাকায় আসার কথা ছিল। ২৬ তারিখ ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় সে। বাংলাদেশ যদি একটি বাগান হয়ে থাকে, তাহলে তার একটি ফুল ঝরে পড়ল।
সেই সাবিনার কথা মনে আছে?। মাঝমাঠে খেলতো। ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন দলে সে খেলেছিল। বেঁচে থাকলে আজকে সে জাতীয় দলের অন্যতম সেরা খেলোয়ার হতে পারত। মারিয়া, মনিকাদের সঙ্গে মাঠ মাতিয়ে বেড়াতো। সাফ জয়ের গৌরবের অংশ হতে পারত সে নিজেও। কিন্তু দুর্ভাগ্য ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দুইদিনের জ্বরে ভোগে সাবিনা মারা যায় একরকম বিনা চিকিৎসায়।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক রাঙামাটির রুপনা
সাবিনা ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ রানীপুর গ্রামের মৃত সেলিম মিয়ার মেয়ে। সে কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখায় নবম শ্রেণিতে পড়ত। বাবা ছিলেন গ্রামের অসচ্ছল মানুষ। মা এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান। তিন ভাইবোনের মধ্যে সাবিনা ছিল দ্বিতীয়। ২০১৩ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় সাবিনা প্রথম অংশ নিয়েছিল। এরপর সে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে প্রথম ডাক পায়।
বাংলাদেশের জাতীয় দলের নারী ফুটবলার হিসেবে সাউথ এশিয়া গেমসসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়ে সাবিনা কৃতিত্বের পরিচয় দেয়। ১৭ সেপ্টেম্বর যশোরে অনূর্ধ্ব–১৪ ফুটবল ফাইনাল খেলা শেষে দলের সঙ্গে ঢাকায় ফেরে সাবিনা। ঢাকা থেকে যায় বাড়িতে মায়ের কাছে। বিধাতা তাকে তার মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে তাঁর নিজের কাছে নিয়ে গেলেন।
বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলে তিনজন সাবিনা। আর দুজনের একজন সাতক্ষীরার, একজন যশোরের। নানা কারণে বাংলাদেশের মুখ বিশেষ উজ্জ্বল নয়। সেই অবস্থায় সাবিনাদের মতো ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে।
২০১৫-তে আমাদের সাবিনারাই নেপালে গিয়ে শক্তির পরিচয় দিয়েছে। ২০১৬-তে তাজিকিস্তানে ফুটবল কাপ অনূর্ধ্ব–১৪ খেলায় অসামান্য সাফল্যের পরিচয় দেয়। অস্ট্রেলিয়া, উত্তর কোরিয়া, জাপানের মতো পুরোনো শক্তিশালী দলগুলোকে মোকাবিলা করে। অনেক খেলায় বিজয় ছিনিয়ে আনছে। সবশেষ গতকাল এই দলটি সাফের শিরোপা এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। সেই বিজয়ে ভাসছে সারা দেশ। এই বিজয়ের দিনে মনে পড়ছে সেই সাবিনাকে। বেঁচে থাকলে হয়তো সেও এ গৌরব অর্জনে অবদান রাখতো।