এসএসসিতে যশোর বোর্ডে ২৪তম আবরার ফাহাদের ভাই

  © সংগৃহীত

এসএসসি পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল করে মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ। যশোর শিক্ষাবোর্ড প্রকাশিত বৃত্তির তালিকায় ২৪তম স্থান দখল করে নিয়েছেন তিনি।

ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে নিজেই বিষয়টি জানিয়েছেন ফাইয়াজ। তার স্ট্যাটাসসি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘এসএসসি ২০১৯: শুরু হয় ২ ফেব্রুয়ারী। প্রথমদিন ছিল বাংলা পরীক্ষা। কেন যেন সব গুলা এমসিকিউ মারতেই পারলাম ঠিকমতো, লিখিতও মনের মতো হলো না। ভাইয়াকে ফোন দিয়ে যখন বললাম ৮০ হবে না মনে হয়... ভাইয়া তখন বলছিল কেন হবে না, লিখিত অমনই মনে হয়। আর এমসিকিউ কারোর সাথে মিলানোর দরকার নেই, কেউ পারে না। ৮০ এমনিই হবে। মন খারাপ করিস না।

ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষা দিলাম। এমসিকিউ খুব খারাপ হয়েছে, ৮০ হওয়ার সম্ভাবনাই নাই। এমনকি পরেরদিন এর পড়া ও পড়ছিলাম না। আম্মু ভাইয়াকে বললো। ভাইয়া আমাকে বললো, অত বেশি বুঝিস কেন? এমসিকিউ তুই না পারলে কেউই পারে নাই। আর বেশি কঠিন হলে ভুল গেলেও মার্ক দেয়, উত্তর ২/৩ টাও দেয়। ইংরেজি, গণিত কোনটাই কয়টা এমসিকিউ হইছে, পরীক্ষা হল থেকে বের হতে না হতেই ফোন দিত।

উচ্চতর গণিতে একটা এমসিকিউ ভুল করছিলাম। ভাইয়াকে বললে বলছিল, আরে একটা ভুল করছিস খালি , আমি তো ৪/৫টা মারতেই পারছিলাম না। তাও তো এ প্লাস (A+) পেয়েছিলাম। যখন বলতাম কোনো পরীক্ষা খারাপ হইছে, আগে ও চুপ হয়ে যাইতো। পরে আবার বলতো, আরে ব্যাপার না। কেউই পারে না ওই গুলা।

সত্যি বলতে গেলে, পড়ালেখা যতটা না নিজের বা বাবা-মার জন্য করতাম, তার থেকে বেশি করতাম ভাইয়ার সম্মান এর ভয়ে। একবার স্কুলে চান্স না পাওয়ার জন্য দেখছিলাম ভাইয়ার কান্না। তারপর ওই ভয়েই পড়তাম।

যখন কোনো উল্টাপাল্টা কাজ করতাম ভাইয়াই বুঝাইতো যে, এগুলা করলে এই হয়, এইভাবে এড়িয়ে চলতে হয়। যেখানে যেই স্যারের কাছেই পড়তে যেতাম উঠতে বসতে বলতো তোর ভাই এইগুলো আরো ভালো পারত, তুই পারিস না। বাধ্য হয়ে পড়তে হতো অপমানের ভয়ে। কোন স্যারের কাছে পড়বো, সব ওই ঠিক করে দিতো, ও না চাইলে কোথাও পড়তে যেতাম না।

ক্লাস টেন এ উঠার পর বলছিল, সবার ভাই পড়ালেখায় অনেক ভালো তুই ভালো করে পড়, জেলার ভিতরে পজিশন এ থাকা উচিত তোর। সত্যি বলতে স্যারদের কাছে কোনো কঠিন বিষয় জিজ্ঞেসই করতাম না, না বুঝলে বাসায় এসে ভাইয়ার কাছে বুঝতাম। কারোর উপরই বিশ্বাস করতাম না, কোনো বিষয়ে ভাইয়াকে ছাড়া।

ফোন থাকলে পড়া হয়না বলে নিজে ফোন নিয়ে গিয়ে হলে রেখে দিত। এমনকি যাওয়ার আগের দিন বলছিলাম, এইবার নিয়ে যায় মোবাইলটা। ব্যবহার করবো না, রেজাল্ট আছে খালি দেখবো। খালি বলছিল, ওই সব অজুহাত দিয়ে লাভ নাই, কাছে থাকলে কখনোই পড়বি না তুই যে মানুষ। আমাক বলবি, আমি রেজাল্ট দেখে বলবো।

আজকে আর সেই মানুষটা নেই, যে বলে দেবে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল। বিশ্বাস করার মানুষটাও নেই। ভাইয়ার সাথে যখন মারামারি বাধত, তখন একটু লাগলেই কেদে ফেলতো। আর তাকে ওইভাবে মারতে মারতে মেরেই ফেললো।

আহ আজ সেই রেজাল্ট ঠিক দিলো। কিন্তু তোকে জানানোর কোনো ক্ষমতা নেই আমার। আম্মুকে বললেই আম্মু খুশি না হয়ে কেঁদে উঠলো কেন? আমিই বা হাসতে পারলাম না কেন! তোকে ছাড়া মন যে খুশি হতে চাইনা ভাইয়া।

সবকিছুই তো পারফেক্ট ছিল। কিন্তু খালি একটা জিনিসই বুঝলাম না, দোষটা কি ছিল আমাদের? But আলহামদুলিল্লাহ For Everything।’

উল্লেখ্য, আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন আবরার। গত ৬ অক্টোবর রাত আটটার দিকে তাকে কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন। এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলছে।


সর্বশেষ সংবাদ