এমপিওভুক্তি বাতিল করে অবৈধভাবে ট্রাস্ট গঠনের চেষ্টা মনিপুর স্কুলে
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ অভিভাবকদের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৪, ০৫:১৩ PM , আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪, ০৫:৪৭ PM
রাজধানী মিরপুরের খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজকে পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়ে গ্রাস করার অপচেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ— এমপিওভুক্তি বাতিল করে অবৈধভাবে ট্রাস্ট গঠন করে তার অধীনে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার চেষ্টা করছে একটি মহল। এজন্য মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজকে অধ্যক্ষ হিসেবে সেনাবাহিনী বা শিক্ষা ক্যাডার থেকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিও তুলেছেন অভিভাবকরা। পাশাপাশি দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গভর্নিং বডি গঠনের দাবি জানানো হয়।
সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। অভিভাবকদের পক্ষে মো. একলিমুর রেজা কোরাইশ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে অভিভাবক একলিমুর রেজা কোরাইশ বলেন, দানবীর নূর মোহাম্মদ ১৯৬৯ সালে মনিপুর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৩ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটি কুচক্রী মহলের শকুনি দৃষ্টির কারণে কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে চক্রান্ত চলছে। এটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে অপতৎপরতার ছক কষা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এমপিওভুক্তি বাতিল করে প্রতিষ্ঠানটি ট্রাস্টের অধীনে নেওয়ার অপতৎপরতা চলছে। ফলে প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা বিরাজ করছে এবং পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিয়ে ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার কিছু মন্তব্য করেছেন। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে না থাকতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের আগস্টে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। এ প্রজ্ঞাপনের পর এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতির চেয়ারে তার মেয়ে রাশেদা আক্তারকে বসান। তিনি অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রতিষ্ঠানটিকে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন।
৮ বছর এমপিওর টাকা পান না শিক্ষকরা
সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা জানান, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনায় অবৈধভাবে ট্রাস্টি গঠনের তোড়জোড় চালাচ্ছে একটি মহল। এজন্য ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে শিক্ষকদের এমপিওর টাকা তুলতে দেওয়া হয় না। অথচ প্রতিমাসে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতনের সরকারি অংশের টাকা আসে। তারা মনে করেন, এমপিও বন্ধ করা হলে এ প্রতিষ্ঠানকে তাদের নামে ট্রাস্ট করা যাবে।
তারা আরও বলেন, ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারের মেয়ে রাশেদা আক্তারকে রেখে ৯ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের জন্য মাউশি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করা হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে সরব হন। উচ্চ আদালতে রিট হয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী—২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের আইনগত কোনো সুযোগ নেই বলে অফিস আদেশে জানায় মাউশি।
বাড়তি ফি আদায়, বিপাকে অভিভাবকরা
মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাড়তি ফি ও বিভিন্ন চার্জ নেওয়ায় তা অভিভাবকদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। অভিভাবকরা বলেন, প্রতি বছর ৮ হাজার টাকা দিয়ে পুনঃভর্তি করাতে হয়। বর্তমানে ১৫০ টাকা হারে আইসিটি চার্জ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর কোনো সুফল নেই। অন্যদিকে স্কুলের বার্ষিক আয় শত কোটি টাকার বেশি। শিক্ষক নিয়োগ ও ভর্তিবাণিজ্যে আয় হয় আরও কয়েক কোটি টাকা। এসব অর্থের যথাযথ হিসাব নেই। অধ্যক্ষ ও এডহক কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
সেনা কর্মকর্তা বা শিক্ষা ক্যাডারকে অধ্যক্ষ চান অভিভাবকরা
মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বা নিয়মিত কোনো সেনা কর্মকর্তাকে অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিও জানান অভিভাবকরা। তারা বলেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের বয়স আগামী ৯ মার্চ শেষ হবে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী—একজন প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ নিয়োগ আবশ্যক। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো এডহক ম্যানেজিং কমিটি বা পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও একাডেমিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং অযাচিত হস্তক্ষেপ ও হয়রানিমুক্ত রাখতে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১-এর ১১.১৩ বিধি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে একজন দক্ষ সেনা কর্মকর্তা অথবা প্রশাসনিকভাবে দক্ষ শিক্ষা ক্যাডারকে দায়িত্ব দেওয়ার জোরালো অনুরোধ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অভিভাবক কবিতা আক্তার, মোজাম্মেল হোসেন ভুঁইয়া, স্কুলের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।