বিএড সনদ ছাড়াই দুই বছর ধরে সুবিধা নিচ্ছেন উইলস লিটলের অধ্যক্ষ
রাজধানীর নামি প্রতিষ্ঠান উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধিবহির্ভূত খাতে বিদ্যালয়ের তহবিল হতে কোটি টাকারও বেশি অর্থ খরচ, নিয়োগে নানা অসংগতি, আর্থিক অনিয়ম, শিক্ষকদের নিয়ম বহির্ভূতভাবে পদোন্নতি ও দায়িত্ব বণ্টনসহ বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও শিক্ষালয়টির বিভিন্ন শিক্ষক ও কর্মকর্তার সনদে (সার্টিফিকেট) জালিয়াতি, ভুয়া বিএড সনদে পদোন্নতিসহ একাধিক অনিয়ম ধরা পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির তদন্তে। পাঁচ বছর আগে সম্পন্ন এ তদন্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আ ন ম সামশুল আলম খানের বিএড সার্টিফিকেট না থাকলেও অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের বিষয়টিও সামনে এসেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে কমিটির পক্ষ থেকে পাওয়া অনিয়মের মধ্যে রয়েছে, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের উচ্চ প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ শূন্য থাকলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব বিধি মোতাবেক প্রদান না করার বিষয়টি। যদিও ২০২১ এর নভেম্বর থেকে এখন অবধি তিনি দায়িত্বে রয়েছেন। তদন্ত চলাকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটিকে বিএড’র সনদ (সার্টিফিকেট) প্রদর্শন করতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ ন ম সামশুল আলম খান। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে এমপিওভুক্ত হিসেবে বেতন ও ভাতায় নিয়ম ভেঙ্গে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা বলছেন, আ ন ম সামশুল আলম খান প্রতিষ্ঠানের উন্নতির লক্ষ্যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছেন না। এছাড়াও তার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শিক্ষালয়টিতে শিক্ষার্থীদের নিম্নমুখী ফলাফল, শিক্ষকদের বিশৃঙ্খলা এবং মনমতো যাওয়া-আসা, আর্থিক অনিয়ম এবং প্রশাসনিক অদক্ষতাও সামনে আসছে নতুন করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনকে সমর্থন করে সামশুল আলমের বিএড সনদের কোনো ভিত্তি নেই বলেও নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক।
এর আগে বিগত ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর শেষ হয় স্কুলটির পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ। একই বছরের নভেম্বরে বিধি ভেঙে প্রভাব খাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন শামসুল আলম খান। পর্ষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পদাধিকারবলে জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে ওই বছরের ১ ডিসেম্বর একটি কমিটি করে এবং সে কমিটির মেয়াদও শেষ হয় বিগত ২০২২ এর জুনে। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা হলেও চেয়ার থেকে সরেননি তিনি।
সরকারের ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’ অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষকদের বিএড ও এমএড ডিগ্রি অর্জন করলে তা উচ্চতর স্কেল হিসেবে গণনা করা হবে না। তবে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সময় এই ডিগ্রি না থাকলে একধাপ নিচে বেতন ধার্য হবে। তবে নিয়ম ভেঙে, এমপিওভুক্তির সময় বিএড সার্টিফিকেট রয়েছে এমন দাবি এবং তার প্রেক্ষিতে বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি গ্রহণ করেছেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের বর্তমান কর্তা। আ ন ম সামশুল আলম সবমিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বেতন ও ভাতা পান প্রতিষ্ঠান থেকে। এছাড়াও অন্যান্য সুবিধাদিও তিনি পাচ্ছেন নিয়ম করেই। যদিও মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, তার বিএড সার্টিফিকেট নেই।
গরমিল শিক্ষকদের পদোন্নতিতেও
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পদোন্নতির বিধান না থাকলেও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সহকারী শিক্ষক পদ হতে প্রভাষক পদে, প্রভাষক পদ হতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদান এবং পদোন্নতি প্রাপ্ত পদের নির্ধারিত এবং প্রাপ্য বেতন স্কেলের অনেক উপরের স্কেলে বেতন ভাতা প্রদান করায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের।
এছাড়াও শিক্ষালয়টিতে সৃষ্ট বা অনুমোদিত পদ, প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণের কাম্য যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কোন প্রকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ ছাড়াই জনবল কাঠামোর বাহিরে অপ্রয়োজনীয় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও উঠে এসেছে মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে জনবল কাঠামোতে নেই, এমন অনেক পদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জনকে দায়িত্ব প্রদান এবং বড় অঙ্কের বেতন ভাতা প্রদানের ফলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি সাধনের বিষয়টিও জানানো হয়েছে একই প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বললে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রয়োজনে আমি আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো—আ ন ম শামসুল আলম খান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
রাজধানীর নামি এ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সরকারি বিধি-বিধান অনুসরণ না করে সহকারী প্রধান শিক্ষকের নির্ধারিত পদে কাম্য যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই—এমন শিক্ষককে শাখা প্রধান করার নামে পদায়ন, অপ্রয়োজনে এবং ব্যক্তি-স্বার্থ রক্ষার্থে অতিরিক্ত ২জনকে শাখা প্রধান এবং ১ জনকে কো-অর্ডিনেটর পদে পদায়ন করে বাড়তি আর্থিক সুবিধা প্রদান, বিদ্যালয়ের তহবিল সংগ্রহে অভিভাবকদের উপর বাড়তি আর্থিক চাপ প্রয়োগ, প্রভাষক পদ হতে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত অবস্থায় মো. মসিউর রহমান নামের এক শিক্ষককে কলেজ শাখায় প্রভাষক পদে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
ভাঙা হয়েছে দেশের শিক্ষা সংস্কৃতিও
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিগত ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের শেষদিকে এ প্রতিবেদন জমা দেয় এবং তাতে বেশ কিছু সুপারিশের বিষয়ে প্রস্তাবনা আকারে জানান কমিটিতে থাকা সদস্যরা। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের এমন অনেক অপ্রাসঙ্গিক ও ব্যতিক্রমধর্মী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে—যা দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
আরও পড়ুন: উইলস লিটল ফ্লাওয়ারে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার এত দাপট!
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা অনিয়মের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন গভর্নিং বডি এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিধির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। এছাড়াও বিধি-বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে গৃহীত অর্থ পুনরায় তহবিল ফেরতের সুপারিশও জানানো হয়েছে একই প্রতিবেদনে।
অনিয়ম ছাড়িয়েছে কোটির হিসেব
প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এতে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের তহবিল থেকে বিভিন্ন ভাতা বাবদ অনিয়ম করে ওই বছর খরচ করা হয়েছে মোট ১ কোটি ৩ লাখ ১৫ হাজার ২৯৬ টাকা। এর মধ্যে বিশেষ ভাতা ৮১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৬ টাকা, টিফিন বাবদ ১১ লাখ ৮২ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। এছাড়াও একই সময়ে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে যাতায়াত বাবদ খরচ করা হয়েছে মোট ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ টাকা।
কমিটির পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে গৃহীত এ অর্থ বার্ষিক হারে অর্থাৎ প্রতিবছর ব্যয় করা হয়েছে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই। একই সাথে কমিটির পক্ষ থেকে বিধি-বহির্ভূতভাবে গৃহীত বিদ্যালয়ের এ অর্থ পুনরায় একই তহবিলে ফেরতের সুপারিশ জানানো হয়েছে।
সেনাবাহিনী থেকে অধ্যক্ষ চান ১৪০ শিক্ষক
স্কুল ও কলেজ শাখা মিলিয়ে রাজধানীর নামি এ প্রতিষ্ঠানের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। স্কুল শাখার শিক্ষকদের দাবি, স্কুল শাখায় শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় সে আয় দিয়েই কলেজ শাখা চলে। অন্যদিকে কলেজ শাখার শিক্ষকরা জানান, বেতন স্কেলে সহকারী অধ্যাপকরাই জ্যেষ্ঠ বিধায় প্রতিষ্ঠান প্রধান হওয়া উচিত তাঁদের থেকেই।
দু’পক্ষেরই চাওয়া, সংকট নিরসনে সেনাবাহিনীর শিক্ষা কোরের ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা কিংবা সরকারি কলেজের (বিসিএস) কাউকে প্রেষণে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ করতে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে লিখিত আবেদন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ১৪০ শিক্ষক।
এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে প্রতিষ্ঠানটির নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে নির্বাচন দেওয়ার আদেশ থাকার পরও নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেনি তখনকার আহ্বায়ক কমিটি। কালক্ষেপণ করতে করতে ওই কমিটির মেয়াদ ফুরিয়ে যায় একই বছরের জুনে। ফলে পূর্বের ন্যায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিশেষ কমিটির অনুমোদন এনে নিজেই ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠান চালানোর পাঁয়তারা অব্যাহত রেখেছেন—অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের। নাম অপ্রকাশিত রাখতে তারা অনুরোধ জানিয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে।
অভিযোগ অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আ ন ম শামসুল আলম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি অবৈধভাবে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রভাষক হন। এমনকি সহকারী শিক্ষক পদে ইস্তফা না দিয়েই যোগদান করেন প্রভাষক পদে। বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই নানান আলোচনা-সমালোচনা হলেও বিষয়টি কখনও আমলে নেননি তিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে শীর্ষ কর্তার পদ পেতে তার বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা অনিয়মের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিধির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিধি-বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে গৃহীত অর্থ পুনরায় তহবিল ফেরতের সুপারিশ জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ প্রতিবেদন ছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এবং ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শ্যামলী হোসেন, নিলুফার ইয়াসমিন, ইসমত আরা ফারুক, মাহাবুব আলম বাচ্চু, গিয়াস উদ্দিনসহ অনেকেই অবৈধভাবে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রভাষক হয়েছেন বলে উঠে এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক আইয়ুব আলী, লায়লা নূর, আতিকুর রহমান ও শারমিন রহমান সেখানে কর্মরত রয়েছেন অধ্যাপক পদে। তবে তাঁরা প্রত্যেকে প্রভাষক পদে কর্মরত দেখিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তখন ডিজির প্রতিনিধির নামের মিল ও সই জাল করে এমপিওভুক্ত করানো হয় তাদের।
আরও পড়ুন: উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের অধ্যক্ষ ও সভাপতির দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি
এর বাইরে সেকশন হেড (ইংলিশ ভার্সন, মর্নিং শিফট) ইমেলদা হোসেন ও আফরোজা ইয়াসমিনের বিএড সনদ জাল থাকার বিষয়টি সামনে এনেছে তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে শিক্ষালয়টির প্রভাষক আবদুল আজিজ, মাহবুব আলম বাচ্চু, গিয়াস উদ্দিন, এস এম মাসুদ (ইংলিশ মিডিয়াম) এবং সহকারী অধ্যাপক আসিফ রহমানের অন্তত একটি করে সনদ জাল বলে অভিযোগ রয়েছে একই প্রতিবেদনে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম প্রথমে প্রতিষ্ঠানটিতে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ দেন। পরে কর্তৃপক্ষকে হাত করে হয়ে যান সহকারী প্রধান শিক্ষক। একইভাবে শাখাপ্রধান উত্তম কুমার হাজরা প্রথমে নিয়োগ পান ল্যাব সহকারী হিসেবে। পরে স্কাউটে সহকারী লিডার এবং এখন তিনি সহকারী শিক্ষক। অথচ তাঁর এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দূরে থাক, নিয়োগপত্রই নেই।
আরও পড়ুন: বোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা, শিক্ষিকার বকেয়া পরিশোধে গড়িমসি কর্তৃপক্ষের
প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক আসাদুজ্জামান তুহিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকায় ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ জুড়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে দু’বছর নিয়মিত শিক্ষকতার বিধি ভেঙে মাত্র সাত দিনের মধ্যে তাঁর চাকরি স্থায়ীকরণ করে কর্তৃপক্ষ। তুহিনকে বেশ কয়েকটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে সম্প্রতি ৬২ শিক্ষকের পদোন্নতি হলেও মামলা করা সংক্রান্ত বিষয়ে পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে নিগার শারমিন নামের এক শিক্ষকের। আগের গভর্নিং বডি বিধি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের চাহিদা ও প্রয়োজনে খণ্ডকালীন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয় শিক্ষালয়টিতে। আর ২০২১ সালের ৯ অক্টোবর জোর করে সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবুল হোসেনকে পদত্যাগে বাধ্য করেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ ন ম শামসুল আলম খান এবং তার অনুসারী শিক্ষকরা—অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের।
শুধু অনিয়মকারী নয়, প্রয়োজনে নিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: অধ্যক্ষ
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জানতে কথা হয় উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আ ন ম শামসুল আলম খানের সাথে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছেন, পদে থাকা বা সুবিধা গ্রহণের জন্য বিএড সার্টিফিকেটের কোনো দরকার নেই। তিনি নিয়ম মেনেই দায়িত্বে এসেছেন এবং দায়িত্ব পালন করছেন।
মন্ত্রণালয়ের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বললে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একই তদন্তে তার নাম রয়েছে এবং তিনি নিজের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কিনা—এমন প্রশ্নে আ ন ম শামসুল আলম খান বলেছেন, প্রয়োজনে তিনি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাজি আছেন।