এসএসসির প্রশ্নফাঁসে জড়িত জাল সনদধারী শিক্ষক!
কুড়িগ্রামে এসএসসিও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জাল সনদধারী বেশ কয়েকজন শিক্ষক জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। তবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাল সনদ দিয়ে চাকরি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের স্বাক্ষরিত ২৭(৪৬৮)/২০১৩ স্বারকে ১৫ জুন ২০১৩ সালে ইসলাম ধর্ম পদে অস্থায়ীভাবে জোবাইর হোসাইনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
একই বছরের ১০ জুন নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশ এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির ১৪ জুন সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই নিয়োগ প্রদান করে। পত্রে ৭ দিনের মধ্যে যোগদান করার জন্য বলা হলেও শিক্ষক জোবাইর হোসাইন ১৬ জুন সকালে যোগদান করেন। এরপর ওই শিক্ষকের এমপিও করার জন্য তথ্য প্রেরণ করা হলে সেখানে ধরা পড়ে জোবাইর হোসাইনের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি ভুয়া।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও প্রত্যয়ন-৩এর সহকারি পরিচালক তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাই সনদে তা প্রকাশ পায়। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে-৩৭.০৫.০০০০.০১০.০৫.০০২.২০.৩৫৮নং স্মারকে বলা হয়- ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক জোবাইর হোসাইনের শিক্ষক নিবন্ধন সনদে দেখা যায়, ২০১২সালে বাধ্যতামূলক-৪৮ এবং অপশনাল-৫০ নম্বরসহ গড় ৫০ নম্বর পেয়ে ৮ম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করেন। তার রোল-৩২১১০৩৩৫ নম্বরে শিক্ষক জোবাইর হোসাইনের পরিবর্তে ফরিদপুর জেলার সাধারণ বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক মো. কাওছার খান তথ্য পাওয়া যায়। শিক্ষক জোবায়ের হোসাইন এনটিআরসি সনদটি জাল ও ভুয়া হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রাপক হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের মূল হোতা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আটককৃত লুৎফর রহমান বিষয়টি গোপন রাখেন।
আরও পড়ুন: মাধ্যমিক স্কুলে এক হাজার শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আসছে
এ নিয়ে তদন্ত হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। গেল বছর এনটিআরসি কর্তৃক ১০৫ জন শিক্ষকের সনদের সঠিকতার তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে ৭৭জন শিক্ষক জাল সনদ তথ্য উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। উল্টো জাল সনদধারীরা বেতন ভাতা নিয়মিত তুলে আসছেন। এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ৬জনকে ইতোমধ্যে পুলিশ গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত ৬ জন হলেন, ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান, ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক জোবাইর হোসাইন,কৃষি বিজ্ঞানের শিক্ষক হামিদুল ইসলাম, বাংলা শিক্ষক সোহেল চৌধুরী ও পিয়ন সুজন মিয়া। এই ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবু হানিফ (৪৮) পলাতক আছেন। তিনি নাগেশ্বরী রামখানা ইউনিয়নের পূর্ব রামখানা গ্রামের বাসিন্দা মৃত বাহার আলী পুত্র। এদের সবাইকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি।
এছাড়াও অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক নাসরিন সুলতানা কম্পিউটারের শিক্ষকের এনটিরআরসি সনদটিও ভুয়া। অথচ এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস লিখিতভাবে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও তা আজও কার্যকর হয়নি। এই শিক্ষক এখনও নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। নাসরিন সুলতানা ২০০৯ সালে চাকরিতে প্রবেশ করলেও তার এমপিও হয় ২০১০ সালে। তদন্ত পূবর্ক চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ওই শিক্ষকের বেতন ভাতা বন্ধের সুপারিশ করে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র দেন ফুলবাড়ি ইউএনও সুমন দাস।
ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহমুদুর রহমান রোজেন শিক্ষক জোবাইর হোসাইনের এনটিআরসি সনদ জাল কিনা আমি জানি না।
একই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এটিএম খলিলুর রহমানও জানান, শিক্ষক জোবাইর হোসাইনের এনটিআরসি সনদ জাল কিনা আমার জানা নেই। এই বিষয়ে কোনো চিঠি এসেছিল কিনা সাবেক প্রধান শিক্ষক কাউকে বলেওনি।
জাল সনদে অভিযুক্ত শিক্ষক নাসরিন সুলতানা বলেন, এনটিআরসি সনদটি পেয়েছি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ২০০৮-০৯সালে। অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি সনদটি ভুয়া। তবে এই বিষয়ে শিক্ষা অফিস বা মাদ্রাসা সুপারের কোন লিখিত নির্দেশনা পাইনি।
জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম বলেন, জাল সনদধারীদের বিষয়ে এনটিআরসি থেকে সনদ যাচাইয়ের কোনো নির্দেশনা আসেনি। তালিকা পেলে সেগুলো যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবেন বলে জানান তিনি।