জার্মানিতে পড়তে যাওয়ার আগে যা যা জানা প্রয়োজন
জার্মানির ১৬টি রাজ্যের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো টিউশন ফি নেই। এটা সত্য। তবে এক্ষেত্রে শর্ত প্রযোজ্য। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সুনির্দিষ্ট ডিগ্রি প্রোগ্রামে আবেদন করলে বিনা খরচায় পড়ার সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয়রা যেসব শর্ত মনে লেখাপড়া করে, বিদেশিদেরও সেগুলো মানতে হবে। ‘স্টাডি এবরোড’ প্রোগ্রাম এবং প্রাইভেট ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা ফ্রি নয়।
বেশি কাজের মানসিকতায় লাগাম টানুন
একজন বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার ফাঁকে আপনি কতটা কাজ করতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করে দেয়া থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-র কোনো দেশের পাসপোর্টধারী নয়, এমন শিক্ষার্থীরা বছরে ১২০ দিন পূর্ণদিবস কিংবা ২৪০ দিন অর্ধদিবস কাজ করতে পারেন। এছাড়া সেমিস্টার চলাকালে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করা যাবে না। ভালো কথা, গোপনে বাড়তি কাজের চেষ্টা করবেন না। ধরা পড়লে বড় সমস্যা হতে পারে।
যথাযথভাবে অনুদানের আবেদন করুন
আশার কথা হচ্ছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন অনুদান এবং ফেলোশিপের ব্যবস্থা রয়েছে জার্মানিতে। আপনার বিষয় যাই হোক না কেন, আপনি যদি তাতে মেধাবী হন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য পরিশ্রমে আগ্রহী হন, তাহলে অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারেন। ‘জার্মান অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস’ বা ডিএএডি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে থাকে। তবে অনুদানের আবেদন প্রফেশনালদের মতো হওয়া চাই।
ভিসা জটিলতা
উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জার্মানিতে পড়তে আসার ভিসা পাওয়া একটু জটিল। তাঁদের বেশকিছুদিন সময় হাতে রেখে ভিসার আবেদন করতে হয়। আর জার্মানিতে আসার পর মাঝেমাঝেই যেতে হয় ‘আউসলান্ডারবেহ্যোর্ডে’ বা বিদেশিদের জন্য নির্ধারিত সরকারি কার্যালয়ে।
আরও পড়ুন: জার্মানিতে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে কীভাবে পড়বেন
সব কিছুর কপি রাখুন
জার্মানিতে আসার পর আপনি নিয়মিতই বিভিন্ন চিঠি পাবেন। এমনকি কবে কবে বাড়ির সামনে কোন কোন ধরনের ময়লা রাখা যাবে, সেটাও জানবেন চিঠির মাধ্যমে। বুদ্ধিমানের কাজ হবে সব চিঠি জমা করে রাখা। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী উত্তর দিতে ভুল করবেন না যেন। জার্মানিতে বসবাসের এক বিরক্তিকর দিক হচ্ছে দেশটির জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়ার অংশ এ সব চিঠি।
জার্মান বলতে পারলে অনেক সুবিধা
এটাও সত্য, জার্মানির বড় শহরগুলোতে জার্মান না জেনেও বসবাস করা য়ায়। এছাড়া বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ইংরেজিতে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে। তবে কিছুটা জার্মান ভাষা শিখতে পারলে দেশটিতে জীবনযাপন অনেক সহজ হয়ে যাবে। আর আপনি যদি পড়ালেখা শেষে জার্মানিতে চাকুরি করতে চান, তাহলে ভাষা জানাটা অনেক জরুরী। এক্ষেত্রে ডয়চে ভেলের জার্মান ভাষা শিক্ষা কোর্স আপনাকে সহায়তা করতে পারে।
নিজেকে নিজেরই সহায়তা করতে হবে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাইভেট কলেজগুলো ব্যয়বহুল হলেও শিক্ষার্থীদের অনেক খেয়াল রাখেন। শিক্ষার্থী কোনো ক্লাস ক্রমাগত মিস করে গেলে তাকে তা জানানো হয়। ক্যাম্পাসে কখন, কোন প্রোগ্রাম হচ্ছে তাও সুনির্দিষ্টবাবে শিক্ষার্থীদের জানাতে উদ্যোগ আছে। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কখন, কোথায় কেন ক্লাস হচ্ছে কিংবা কোন প্রোগ্রাম চলছে তার খোঁজ রাখার দায়িত্ব আপনার।
জার্মানদের সঙ্গে থাকুন
জার্মানির বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করে থাকে। তবে তাদের সেবা নেয়া বাধ্যতামূলক নয়। অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেছে দেয়া অ্যাপার্টমেন্ট শিক্ষার্থীর পছন্দ হয় না। আশার কথা হচ্ছে, অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো থেকে থাকার জায়গা বেছে নেয়া যায়। কাজটা কঠিন। তবে চেষ্টা করবেন এমন জায়গায় থাকার যেখানে জার্মান শিক্ষার্থীরা থাকেন। তখন ভাষা শেখাটা আপনার জন্য সহজ হবে।
আপনি একা নন
শিক্ষার্থী হিসেবে জার্মানিতে বসবাস শুরুর দিকে অনেক কঠিন মনে হতে পারে। মনে হতে পারে আপনি একাই বুঝি এত পরিশ্রম করছেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আপনার আগেও অনেক আপনার মতোই পরিশ্রম করে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তাই নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করতে শিখুন। এ জন্য বিভিন্ন অনলাইন ফোরামের সহায়তা নিতে পারেন।
থাকবেন, নাকি চলে যাবেন?
শুরুর দিকে জার্মানিতে বসবাস কঠিন মনে হলেও দেশটি ক্রমশ আপনার ভালো লাগতে শুরু করতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে এমন হয়েছে। ডিগ্রি, চাকুরি আর নিরাপদ জীবন - এসব বিবেচনা করে আপনি হয়ত একসময় জার্মানিতে থেকে যেতে চাইবেন। কিংবা থাকবেন নাকি চলে যাবেন সেই দ্বিধায় পড়ে যাবেন। সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনার, আমরা শুধু আপনাকে আগেভাবে জানিয়ে রাখলাম। [সূত্র ডয়চে ভেলে বাংলা]