করোনার ভুয়া সনদ, বিপাকে বিদেশে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা

বিদেশে উচ্চশিক্ষায় বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

দেশ থেকে করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে পজিটিভ ধরা পড়ায় দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে খেসারত দিতে হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি (স্কলারশিপ) পাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের।

একারণে এখন বিদেশে যেতে পারছেন না বাংলাদেশ থেকে স্কলারশীপ পাওয়া শিক্ষার্থীরা। যারা আংশিক বৃত্তি পেয়েছেন কিংবা পুরো টিউশন ফি দিয়ে ভর্তি হয়েছেন, তারা গত এক বছরে এক থেকে তিন লাখ টাকা জমা দিয়েও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করতে যেতে পারছেন না। ভর্তির পর এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও যারা এখনও যেতে পারেননি, তারা আশঙ্কা করছেন তাদের ভর্তি বাতিল হতে পারে।

জানা যায়, গত মার্চে ১৬ জন, এপ্রিলে ৩৩ জন এবং মে মাসে ৯ জন বাংলাদেশি করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার পর তাদের পজিটিভ ধরা পড়ে। এ কারণে ১৬ এপ্রিল থেকে নতুন ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। এ সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে দেশ ছাড়ার আগে দক্ষিণ কোরিয়াগামীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়ম করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেলের তত্ত্বাবধানে সাত দিনে কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম করা হয়েছে।

এ নিয়ম অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়া যাত্রার ৯ দিন আগে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। নেগেটিভ এলে বিমানের টিকিট বুকিং দিয়ে সাত দিন বোয়েসেল নির্ধারিত হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ষষ্ঠ দিনে দ্বিতীয় করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। তাতে নেগেটিভ এলে ট্রাভেল বিমা করে অষ্টম দিনে হোটেলের ব্যবস্থাপনায় সরাসরি বিমানবন্দরে যেতে হবে। বোয়েসেল বাংলাদেশি কর্মী ও শিক্ষার্থীদের করোনা পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইনে রাখতে 'স্টিমজ হেলথ কেয়ার বিডি লিমিটেড' নামের বাংলা মটরে একটি প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি জনপ্রতি ২৫ হাজার ৫০০ টাকা ফি হিসেবে নেয়। অথচ বিদেশগামীদের ভুয়া করোনা সনদ এবং হোটেলে না রেখেও কোয়ারেন্টাইনে থাকার সনদ দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে স্টিমজের করোনা পরীক্ষা স্থগিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বোয়েসেল সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মে থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৮৪ জন দক্ষিণ কোরিয়াগামী বাংলাদেশি করোনা পরীক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য নিবন্ধন করেন। তাদের মধ্যে ৪৪ জন দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়েছেন। একজনের করোনা পজিটিভ মিলেছে দেশটিতে পৌঁছানোর পর, যাদের আগে থেকেই ভিসা ছিল কিংবা বসবাসের অনুমতি রয়েছে- শুধু তারাই এখন দক্ষিণ কোরিয়া যেতে পারছেন।

একই শঙ্কায় রয়েছেন জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও দেশটিতে যেতে না পারা হাজারখানেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. নাজিম উদ্দিন। তিনি জার্মানির ওটিএইচ এনবার্গ বাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিতে পড়ার বৃত্তি পেয়েছেন।

নাজিম উদ্দিন জানান, অক্টোবরের মধ্যে যেতে না পারলে তার ভর্তি বাতিলের শঙ্কা রয়েছে। তিনি গত বছর ভর্তি হয়েছেন। এখনও যেতে পারেননি। লকডাউনের কারণে ঢাকার জার্মান দূতাবাস ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল। আটকেপড়া শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি শুরুর পর জার্মান দূতাবাসের দৃষ্টিগোচর হয়। ২৬ মে থেকে শিক্ষার্থীদের ঢাকায় ভিসা সাক্ষাৎকার শুরু হয়। তবে এ কার্যক্রমের গতি মন্থর।

বিষয়টির সমাধান করতে মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তাদের কষ্টার্জিত স্কলারশিপ বাতিল হলে উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বিদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় তারা ব্লক অ্যাকাউন্টে এক লাখ ১০ হাজার করে টাকা জমা দিয়েছেন। এ টাকা আর ফেরত পাবেন না। অনেক শিক্ষার্থীকে ভর্তি টিকিয়ে রাখতে মাসে মাসে দেশ থেকে টাকাও পাঠাতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরি ও স্বাস্থ্য বিমার কিস্তি বাবদ।


সর্বশেষ সংবাদ