০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৫০

সঠিক দিকনির্দেশনা আর প্রস্তুতিতেই সম্ভব আমেরিকায় পড়াশোনা

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আগ্রহীরা জেনে নিন খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে  © সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শিক্ষার মান, ইংরেজি ভাষাভাষী পরিবেশ, ফান্ডিং সুবিধা ও জীবনযাত্রার মান—এসব কারণে অনেকেই দেশটিকে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। যদিও আবেদনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ভর্তি পর্যন্ত পুরো যাত্রাটিই দীর্ঘ, জটিল ও সময়সাপেক্ষ। আবার অনেকেই ভাবেন, আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা হয়তো শুধু ধনী বা বড় শহরের শিক্ষার্থীদের জন্যই সম্ভব। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা মেনে চললে যে কেউই যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগ পেতে পারেন।

আমেরিকায় স্নাতক (Undergraduate)

বাংলাদেশের অনার্স প্রোগ্রামের মতোই চার বছরের এই কোর্সটি সম্পন্ন হয়।  আমেরিকায় এটাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। প্রথম বছর ফ্রেশম্যান (Freshman Year), দ্বিতীয় বছর সফোমোর (Sophomore Year), তৃতীয় বছর জুনিয়র (Junior Year) এবং চতুর্থ বছর সিনিয়র (Senior Year) নামে পরিচিত। যারা উচ্চমাধ্যমিকের পর আমেরিকায় পড়তে চান, তারা ফ্রেশম্যান হিসেবে ভর্তি হন।

স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রাম

যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স ও পিএইচডি একত্রে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম নামে পরিচিত। সাধারণত মাস্টার্স প্রোগ্রামের মেয়াদ ১.৫ থেকে ২ বছর এবং পিএইচডির মেয়াদ ৪ থেকে ৬ বছর।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা ফান্ডিং ও স্টাইপেন্ড (ভাতা) পান। ফলে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিতে হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয় মাসে মাসে বেতন দেয়।

আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: জেনে নিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুল-ফ্রি ১৬ স্কলারশিপ সম্পর্কে

ফান্ডিং ও অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ

ফান্ডিং, স্কলারশিপ বা অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ—তিনটি শব্দ মূলত একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ফান্ডিং মানে টিউশন ফি সম্পূর্ণ মওকুফের পাশাপাশি মাসিক বেতন পাওয়া।

সাধারণত শিক্ষার্থীরা মাসে ১৩০০ থেকে ২৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পান, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১.৫ থেকে ২.৮ লাখ টাকার সমান।

দুই ধরনের অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ বেশি প্রচলিত—

১. রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ (RA): ল্যাব বা গবেষণামূলক কাজে সহায়তা করা।

২. টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ (TA): ক্লাস নেওয়া, কুইজ বা অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন এবং শিক্ষককে সহায়তা করা।

আরও পড়ুন: জেনে রাখুন বিশ্বসেরা ২৯ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট

ভর্তি সেশন: ফল ও স্প্রিং

আমেরিকায় মূলত দুটি সেশনে ভর্তি নেওয়া হয়—

Fall (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) এবং Spring (জানুয়ারি)।

দুটি সেশনের মধ্যে Fall Session-এ সবচেয়ে বেশি ফান্ডিংয়ের সুযোগ থাকে, ফলে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এই সময়টিকে প্রাধান্য দেন। তবে প্রস্তুতি থাকলে Spring Session-এ-ও ভর্তি ও ফান্ডিং পাওয়া সম্ভব।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য কিছু আন্তর্জাতিক মানদণ্ডভিত্তিক পরীক্ষা দিতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে—

১. IELTS বা TOEFL: ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষা।

২. SAT: স্নাতক পর্যায়ের আবেদনকারীদের জন্য।

৩. GRE: মাস্টার্স বা পিএইচডি আবেদনকারীদের জন্য।

৪. GMAT: ব্যবসা প্রশাসন (MBA) প্রোগ্রামের জন্য।

নতুনদের জন্য পরামর্শ—প্রথমে IELTS/TOEFL দেওয়া ও পরে GRE প্রস্তুতি নেওয়া।

আরও পড়ুন: জেনে নিন বিশ্বসেরা ১০ ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ সম্পর্কে

আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয়

আমেরিকার আটটি ঐতিহাসিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একত্রে বলা হয় আইভি লীগ (Ivy League)। এগুলো হলো—হার্ভার্ড, ইয়েল, প্রিন্সটন, ব্রাউন, করনেল, ডার্টমাউথ, কলাম্বিয়া ও ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া।

তবে উল্লেখযোগ্য বিষয়, MIT ও স্ট্যানফোর্ড আইভি লীগভুক্ত নয়, তবুও অ্যাকাডেমিক মানে তারা অনেক ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে।

প্রচলিত ভুল ধারণা

অনেকে মনে করেন আমেরিকায় পড়তে গেলে অনেক টাকা লাগে। কিন্তু ফান্ডিং পেলে টিউশন ফি দিতে হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ই মাসের বেতন দেয়। কম CGPA থাকা মানে সুযোগ শেষ নয়। ভালো গবেষণার অভিজ্ঞতা, উদ্দেশ্যপত্র (Statement of Purpose) ও শক্তিশালী সুপারিশপত্র (Recommendation Letter) দিয়ে কম CGPA পূরণ করা যায়। এ ছাড়া IELTS ৬.৫ বা ৭.০ স্কোর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যথেষ্ট।

আর ‘গ্রাম থেকে এলে ভিসা হয় না’ —এটিও সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ভিসা অফিসার আবেদনকারীর জায়গা নয়, বরং তার পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাসকে গুরুত্ব দেন।

মো. আল আমিন

পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র