০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৫০

এক ভিসায় ঘুরে আসুন ২৭ দেশ, যেভাবে পাবেন 

এক ভিসায় ঘুরে আসুন ২৭ দেশ  © সংগৃহীত

শখ আর স্বপ্ন যখন মিশে যায় তখন কী হয়? শখ বা স্বপ্নের অনেক কাজ অনেকেই জমিয়ে রেখে দেন অবসরে যাওয়ার পরে করবেন বলে। কিন্তু সেগুলো এখনই শুরু করে দেওয়া ভালো। ভ্রমণ পিপাসুরা দেশ-বিদেশ ঘুরতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। যারা দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করেন বেড়ান তাদের কাছে ‘সেনজন ভিসা’ শব্দটি অতি পরিচিত। সেনজেন বলতে আমরা ইউরোপ মহাদেশের ৫০টি দেশের মধ্যে ২৭টি দেশকে বুঝি। 

অন্যরাও কমবেশি এই ভিসার সাথে পরিচিত অথবা নাম শুনে থাকবেন। অন্যান্য সাধারণ ভিসার আর ‘সেনজেন ভিসার মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। এই দেশগুলো স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। তাদের নিজস্ব পৃথক পৃথক ভাষা, মুদ্রা ও রাজধানী আছে। কিন্তু ভিসা পলিসির ক্ষেত্রে তারা অভিন্ন নীতি অবলম্বন করে থাকে। যাকে আমরা সেনজেন ভিসা বলে থাকি। শেনজেনভুক্ত যেকোনো একটি দেশের ভিসা সংগ্রহ করে বাকি ২৬টি দেশ অনায়াসে ভ্রমণ করা যায়। এজন্য আলাদা ভিসার প্রয়োজন হয় না। 

সেনজন ভিসার পরিচিতিঃ 
ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিয়ে একটি একীভূত অঞ্চল তৈরি করে সবার যাতায়াত সহজ করা লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গের শেনজেন শহরে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে সেনজেন এলাকা এবং সেনজেন ভিসা। ইউরোপের অধিকাংশ এলাকা এই সেনজেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই ভিসা নিয়ে ৯০ দিনের জন্য বেড়ানো বা ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে ইউরোপ ঘুরে আসা যায়।

সেনজেন অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪২ কোটি। আয়তন ৪৩,১২,০৯৯ বর্গকিলোমিটার । প্রায় ১৭ লাখ মানুষ প্রতিদিন একটি অভ্যন্তরীণ ইউরোপীয় সীমান্ত পেরিয়ে কাজ করার জন্য অন্য দেশে যাতায়াত করে এবং কিছু অঞ্চলে এরা কর্মশক্তির এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত গঠন করে। প্রতি বছর শেনজেন এলাকায় মোট ১৩০ কোটি সীমান্ত পারাপার ঘটে থাকে। প্রতি বছর সড়কপথে ২ লাক ৮০ হাজার কোটি ইউরো মূল্যের ৫.৭ কোটি আমদানি-রফতানি সংগঠিত হয়।
 
ভৌগলিক অবস্থা, বাণিজ্য অংশীদার এবং অন্যান্য কারণের উপর নির্ভর করে শেনজেন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যের ব্যয় ০.৪২% থেকে ১.৫৯% পর্যন্ত হ্রাস পায়। সেনজেন এলাকার বাইরের দেশগুলোও এ কারণে উপকৃত হয়। সেনজেন অঞ্চলের রাজ্যগুলি সেনজেনভুক্ত নয় এমন দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে।

সেনজেনভুক্ত দেশগুলো হলোঃ 
অস্ট্রিয়া, আইসল্যান্ড, ইতালি, এস্তোনিয়া, গ্রিস, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, মাল্টা, লুক্সেমবার্গ, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, স্পেন, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, হাঙ্গেরি এবং ক্রোয়েশিয়া।

কিভাবে সেনজেন ভিসা পাবেনঃ 
অনলাইনে আবেদন করা যায়। আবেদন করতে এবং বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন 
 
বিঃদ্রঃ আবেদন ফর্মটি সতর্কতার সঙ্গে পূরন করতে হবে। দুই পাশের প্রতিটি ঘর পূরণ করতে হবে। এই ফর্মে কোনো ঘর ফাঁকা থাকলে অথবা তথ্যে ভুল থাকা যাবে না। এমন হলে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করা হবে না। আবেদন ফরমের একটি কপি জমা দিতে হবে। আর ফর্মে অবশ্যই তারিখ ও স্বাক্ষর থাকতে হবে।

সেনজেন ভিসা ফিঃ 
সেনজেন ভিসা পাওয়ার স্ট্যান্ডার্ড ফি ৮০ ইউরো ডলার। এই ফি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। ছয় থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য ভিসা ফি ৪০ ইউরো। ছয় বছরের নিচের শিশুদের ভিসা ফি লাগে না। 

বাংলাদেশ থেকে সেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায়ঃ 
২৭টি সেনজেনভু্ক্ত দেশের যে কয়টির দূতাবাস বাংলাদেশে আছে সেখানে যোগাযোগ করে সেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। মনে রাখতে হবে শেনজেনভুক্ত যেকোনো দেশের দূতাবাস থেকেই এই ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ- 

(১) ভিসা আবেদনের সাথে যে যে কাগজপত্র জমা দিতে হবেঃ- 
* ভ্রমণ শেষ হওয়ার পরও অন্তত ছয় মাস মেয়াদ থাকবে এমন পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। 
* দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি। ( সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড) । 
* পাসপোর্টের ব্যক্তিগত তথ্যের পৃষ্ঠাগুলোর পরিষ্কার ফটোকপি।  
* প্রতিটি কাগজের মূল কপির সাথে একটি করে ফটোকপিও জমা দিতে হবে।
* সকল কাগজপত্র বাংলার সাথে সাথে ইংরেজি অথবা জার্মান অনুবাদ করে জমা দিতে হবে।
* স্বাস্থ্য বীমা করতে হবে (নূন্যতম ৩০ হাজার ইউরো মূল্যমানের)। 
* ইংরেজি, জার্মান বা অন্য কোন ভাষায় দক্ষতা থাকলে  ভিসা পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।

(২) ভ্রমণ ভিসার ক্ষেত্রেঃ- 
* কোন কোন জায়গায় ভ্রমণ করবেন সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য। 
* বিগত তিন মাসের বাক্তিগত ব্যাংক হিসাব বিবরণ। 
* হোটেল বুকিং তথ্য।(প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। বিঃদ্রঃ হোটেল বুকিং কনফার্মেশনের ই-মেইল প্রিন্ট আউট গৃহীত হয় না। 
* ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট এবং সন্তান সন্ততির তথ্য। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

(৩) বিজনেস ভিসার ক্ষেত্রেঃ-  
* বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষ থেকে ভ্রমণে যাচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানের তরফে ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে লিখা চিঠি জমা দিতে হবে। 
* কোম্পানির পাঠানো আমন্ত্রণপত্রের মূলকপি এবং আমন্ত্রণপত্র অবশ্যই ইংরেজি বা জার্মান ভাষায় হতে হবে। 
* ট্রেড লাইসেন্স এবং কোম্পানির বিগত তিন মাসের ব্যাংক হিসাব বিবরণী। 
* কোম্পানির সার্টিফিকেট অফ ইনকর্পোরেশন অথবা মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশন। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
* বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরে লেনদেনের তথ্য। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট এবং সন্তান সন্ততির তথ্য। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)সেনজেন দেশগুলো আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আরও কিছু অতিরিক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হয়ে। যেমন: হোটেলের ঠিকানাসহ হোটেল রিজার্ভেশনের তথ্য এবং স্টল বরাদ্দ হয়ে থাকলে তার এক্সিবিটর পাস। 

(৪) কারও সাথে দেখা করার ক্ষেত্রেঃ- 

* যার সাথে দেখা করতে যাওয়া হবে তার সাক্ষরিত গ্যারান্টর ফরম । 
* অন্তত বিগত তিন মাসের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব বিবরণ । 
* যার সাথে দেখা করতে যাবেন তার সাথে সম্পর্কের প্রমাণপত্র।  
* ফ্লাইট রিজার্ভেশন কপি। 
* হোটেল বুকিং তথ্য।(প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। বিঃদ্রঃ হোটেল বুকিং কনফার্মেশনের ই-মেইল প্রিন্ট আউট গৃহীত হয় না। 
* ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট এবং সন্তান সন্ততির তথ্য। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

আরও পড়ুন: টিউশন ফি-আবাসন সুবিধাসহ স্কলারশিপ নিয়ে স্নাতকোত্তর করুন নেদারল্যান্ডে

(৫) শিশুদের ক্ষেত্রেঃ-  
• বাবা-মা বা বৈধ অভিভাবকের অনুমতিপত্র এবং শিশুদের ভিসা আবেদনের সময় অভিভাবকে অবশ্যই দূতাবাসে উপস্থিত হতে হবে। 

(৬) এয়ারপোর্ট ট্রানজিট ভিসার ক্ষেত্রেঃ- 
* সেনজেন এলাকা থেকে যে দেশে যাবেন সে দেশের ভিসা।
* ফ্লাইট রিজার্ভেশন।  

বি: দ্র: ট্রানজিট ভিসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবীমা প্রয়োজন হয় না।

ভিসা ইন্টারভিউঃ 
সর্বশেষ সেনজেন দেশগুলোর দূতাবাস থেকে আবেদনকারীর সাথে একটি ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হয়।এই সাক্ষাৎকারটি অনেক গুরুত্বপূর্ন। তাই আত্মবিশ্বাসের সাথে সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করতে হবে।