জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় সুমাইয়া

বাবা-মায়ের সাথে সুমাইয়া
বাবা-মায়ের সাথে সুমাইয়া  © সংগৃহীত

গত ২৮ জুলাই দেশজুড়ে প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এখন অপেক্ষা করছেন পছন্দের কলেজে ভর্তির। তবে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও বিপরীত চিত্র সুমাইয়া আক্তারের। আর্থিক শঙ্কটের জেরে কলেজে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় আছেন এ মেধাবী শিক্ষার্থী।

মাদারীপুরের শিবচরের পাঁচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া সুমাইয়া আক্তারের বাবা মো. হবি মোল্লা দরিদ্র ভ্যান চালক এবং মা তাসলিমা বেগম গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় সুমাইয়া আক্তার। পদ্মা নদীর ব্যাপক ভাঙনের শিকার হয়ে চরজানাজাত থেকে এ এলাকায় এসে বছরে পাঁচ হাজার টাকা খাজনায় এক টুকরো জমি ভাড়া নিয়ে দোচালা ঘর তুলে বসত গড়ে হবি মোল্লার পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মো. হবি মোল্লাকে তিন বেলা পরিবারের সদস্যদের খাবারের ব্যবস্থা করতেই প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়।

এমন পরিস্থিতিতে পরিবারটির কাছে লেখাপড়া স্বপ্নের মতো হলেও সুমাইয়ার ছিল অদম্য ইচ্ছাশক্তি। প্রতিদিন আধা ঘণ্টার মতো পায়ে হেঁটে স্কুলে যেত সে, ফিরতও একইভাবে। ৯ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মা-বাবা বিয়ে ঠিক করলে সুমাইয়া প্রধান শিক্ষকের কাছে আশ্রয় নেন, তার আশ্বাসে ও সহায়তায় চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। ফরম ফিলআপের টাকাও দেন প্রধান শিক্ষক। সব বই না থাকায় সহপাঠীদের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ত সুমাইয়া। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার চিন্তায় উদ্বিগ্ন সুমাইয়া।

আরো পড়ুন: একাদশে ভর্তি আবেদন শুরু ১০ আগস্ট

সুমাইয়ার মা তাসলিমা বেগম বলেন, আমরা কোনোদিন সুমাইয়াকে ভালো কোনো খাবার খাওয়াতে পারিনি। অনেক দূরের স্কুলে যেত পায়ে হেঁটে। কখনো ওর বাবা পৌঁছে দিত। আমার মেয়ের স্বপ্ন অনেক বড়। কিন্তু ওর স্বপ্নপূরণ করার সাধ্য আমাদের নেই। একবার বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু স্কুলের হেড স্যার দিতে দেননি। ওর লেখাপড়া চালানোর জন্য অনেক সহযোগিতা করেছেন স্যারেরা। এখন ওর ভবিষ্যৎ লেখাপড়া কীভাবে চালাব সেটাই বুঝতে পারছি না। সবাই সহযোগিতা করলে হয়ত আমার মেয়ের স্বপ্নপূরণ হবে।

সুমাইয়ার বাবা মো. হবি মোল্লা বলেন, ভ্যান চালিয়ে কোনোরকমে সাতজনের সংসার চালাই। মেয়েটাকে কোনো দিন ভালো একটা ড্রেস কিনে দিতে পারিনি। স্কুলের স্যারেরা সাহায্য না করলে ওর লেখাপড়াই হতো না। এখন কীভাবে ভালো কলেজে ভর্তি করব বুঝতে পারছি না। ওর স্বপ্ন অনেক বড় কলেজে পড়ার। আমি সবার সহযোগিতা চাই।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তির স্বপ্ন আছে জানিয়ে সুমাইয়া আক্তার বলেন, স্কুলের হেড স্যারসহ অন্য স্যারদের সহযোগিতা না পেলে ভালো ফল দূরের কথা আমার লেখাপড়া করাই হতো না। আমার বাবা ভ্যান চালিয়ে অনেক কষ্ট করে আমাদের সংসার চালান। আমি যখন দশম শ্রেণিতে পড়ি তখন ফরম ফিলআপসহ অন্য খরচের চিন্তায় আমার লেখাপড়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পরিবার। তখন হেড স্যারকে বললে তিনি আমার ফরম ফিলআপের দায়িত্ব নেন। খাতা, কলম, বই দিয়েছেন। আমার ইচ্ছা ঢাকায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু আমার বাবা-মায়ের পক্ষে এত খরচ চালানো সম্ভব না। কীভাবে লেখাপড়া চালিয়ে নেব কিছুই বুঝতে পারছি না।

পাঁচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সামসুল হক বলেন, সুমাইয়া খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। তবে অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় ওর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর ছিল। সুমাইয়া বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি বিভিন্ন সময়ে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি, ফরম ফিলআপ করিয়ে দিয়েছি। এসএসসি পরীক্ষায় সে ভালো ফল অর্জন করেছে, এতে আমরা খুুব আনন্দিত।

তিনি বলেন, সুমাইয়ার ভবিষ্যৎ লেখাপড়ার খরচ বহন করা ওর পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সমাজের বিত্তবান মানুষরা যদি সহযোগিতার হাত বাড়ায় তবে মেধাবী সুমাইয়া ভবিষ্যতে অনেক বড় স্থানে জায়গা করে নেবে বলে আমার বিশ্বাস।

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence