হাটে গিয়ে যেভাবে চিনবেন কোরবানীর সুস্থ গরু
ঈদুল আজহা মানেই ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এক ধর্মীয় উৎসব। আর এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে কোরবানির পশু। অনেকে বছরের পর বছর ধরে গরু কিনে কোরবানি দেন, কেউ বা প্রথমবারের মতো যাচ্ছেন হাটে। তবে হাটের গরুর বাহ্যিক চেহারা দেখে অনেক সময় বোঝা যায় না এর ভিতরে লুকিয়ে আছে কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি। কারণ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রুত বেশি লাভের আশায় গরুকে কৃত্রিমভাবে মোটা ও চকচকে করে তোলে ক্ষতিকর রাসায়নিক ও স্টেরয়েড ব্যবহার করে।
অসুস্থ বা রাসায়নিকযুক্ত গরু
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের লক্ষণগুলো থাকলে বুঝতে হবে গরুটি সুস্থ নয় বা রাসায়নিক দিয়ে মোটা করা:
অস্বাভাবিক ফোলা: রাসায়নিকযুক্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন অংশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে থাকে। চাপ দিলে চামড়ায় গর্ত হয়, এবং তা স্বাভাবিক হতে সময় নেয়।
শরীরে পানি জমা: শরীর নরম ও থলথলে হয়ে যায়, বিশেষ করে পিঠ ও পায়ে এ লক্ষণ স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: শরীয়ত অনুযায়ী যেসব ত্রুটি থাকলে কোরবানি সহীহ হবে না
নিষ্ক্রিয়তা ও ঝিমঝিম ভাব: অতিরিক্ত ওজন ও ক্লান্তিভাব গরুর চলাফেরা কমিয়ে দেয়। রাসায়নিক খাওয়া গরু অলস হয়ে যায়, ঝিমায়, এমনকি দাঁড়িয়ে থাকতে চায় না।
শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি: অসুস্থ বা স্টেরয়েডযুক্ত গরু দ্রুত ও কষ্টকরে শ্বাস নেয়। অনেক সময় হাঁপানির মতো শব্দ শোনায়।
লালা ঝরা ও খাওয়ায় অনীহা: রাসায়নিক প্রয়োগে মুখ থেকে ক্রমাগত লালা পড়ে। গরুটি খাবারে আগ্রহ দেখায় না, জাবরও কাটে না।
নাক শুকিয়ে যাওয়া: সুস্থ গরুর নাক সাধারণত ভেজা থাকে। শুকনো নাক অসুস্থতার লক্ষণ।
বিবর্ণ শরীর ও বেশি গরম: গরুর শরীরের রঙ ফিকে হয়ে যায় এবং শরীর স্পর্শ করলে অতিরিক্ত তাপ অনুভব হয়।
সুস্থ গরু চেনার উপায়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিশেষজ্ঞরা সুস্থ গরু চেনার জন্য কিছু পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন:
চটপটে আচরণ: সুস্থ গরু সচল ও সজীব থাকে। কান ও লেজ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে মশা-মাছি তাড়ায়, আশপাশে নজর রাখে।
নাক ভেজা, মুখে খাবার ধরলে খায়: গরুর নাকের ওপরের অংশটা ভেজা বা ঘাম জমা থাকে। খাবার দিলে টেনে খায় অথবা জাবর কাটে।
শরীরের গঠন ভারসাম্যপূর্ণ: পিঠের কুজ শক্ত, মোটা ও দাগমুক্ত থাকে। রানের মাংস শক্ত হয় এবং পাঁজরের হাড় আংশিক দেখা যায়।
গরম নয়, স্বাভাবিক তাপমাত্রা: সুস্থ গরুর শরীরের তাপমাত্রা ১০২–১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে থাকে।
আরও পড়ুন: যেসব কারণে দ্রুত নষ্ট হয় স্মার্টফোন
কোরবানির জন্য উপযুক্ত গরুর বৈশিষ্ট্য
বয়স: গরুর বয়স অন্তত দুই বছর হতে হবে। নিচের চোয়ালের পাটিতে দুটি বড় ‘কোদালের মতো’ দাঁত থাকলে বুঝতে হবে বয়স উপযুক্ত।
শারীরিক দিক থেকে ত্রুটিমুক্ত: শিং ভাঙা, লেজ কাটা, চোখ, মুখ বা পায়ে ক্ষত থাকলে তা কোরবানির অনুপযুক্ত।
গর্ভবতী গাভী নয়: গর্ভবতী গাভী কোরবানি দেওয়া ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ। গর্ভবতী গরুর পেট ও ওলান ফুলে থাকে খেয়াল রাখতে হবে।
দেশি গরু কেন ভালো
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হাশেমের মতে, দেশি গরু সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ দেশি গরুকে কৃত্রিমভাবে অতিরিক্ত মোটা করা বেশ কঠিন। দেশি গরুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশি, এবং এসব গরু রাসায়নিক ব্যবহারের ঝুঁকিতে সাধারণত পড়ে না।
দিনের আলোতেই কেনা ভালো
অভিজ্ঞ ক্রেতারা বলছেন, গরু কেনার সময় অবশ্যই দিনের আলোয় যাচাই-বাছাই করা উচিত। রাতে আলো স্বল্পতা ও হট্টগোলের কারণে গরুর সুস্থতা যাচাই করা কঠিন।
গরু শুধু ধর্মীয় অনুষঙ্গ নয়, বরং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তারও অংশ। তাই হাটে গিয়ে বাহ্যিক মোটা চেহারা দেখে নয়, চোখ-কান খোলা রেখে বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা মেনে সুস্থ গরুই বেছে নিন। কারণ, রাসায়নিক দিয়ে মোটা করা গরু হতে পারে আপনার পরিবারের জন্য একটি স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ।