২১ আগস্ট ২০২২, ১৮:২৭

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের নম্বর টেম্পারিং

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রথম সেমিস্টারের প্রকাশিত ফলাফলে নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ এনে আলোচনায় বসেছেন বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি সমাধানে আজ রবিবার (২১ আগস্ট) অর্থনীতি বিভাগেই অফিস কক্ষে বসেন তারা।

এর আগে গত বুধবার (১৭ আগস্ট) বিভাগটির স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশিত হয়। যেখানে ইন্টার্নাল ও এক্সটার্নাল পরীক্ষকের নম্বরে পার্থক্যের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০ এবং গড়ে ৮ থেকে ১০ নম্বর।

এছাড়াও ১৪১৫১৮১৯৫১১ শিক্ষার্থীর মোট নম্বর ৭৫ পেলেও তার মোট নম্বর দেয়া হয়েছে ৫৪। অন্য আরেক শিক্ষার্থী ১৪১৫১৮১৯৫১৭ রোলধারী মোট ৭৪.৫ পেলেও ফলাফলে দেখানো হয়েছে ৫৪। ১৪১৫১৮১৯৫৪৩ ও ১৪১৫১৮১৯৫৪৪ রোলধারীর ক্ষেত্রেও একই রকম নম্বরের অসঙ্গতি দেখা গেছে।

শুধু তাই নয়, একই শিক্ষাবর্ষের স্নাতক পর্যায়ে ৩.৫০ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১১ জন। অথচ স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৩.৫০ পেয়েছেন মাত্র ১ জন। এদিকে স্নাতক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী আফরোজা খাতুনের ফলাফলও এসেছে ৩.৫০-এর নীচে। এমন ফলাফল নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিভাগটির একাধিক শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন: সেমিস্টার পরীক্ষার পূর্বেই প্রকাশ করতে হবে ইন্টারনাল মার্কস

ফলাফলের প্রতিবাদ জানাতে শিক্ষার্থীরা বিভাগে গেলে আলোচনায় বসে বিভাগীয় প্রধান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি আলফারুন্নাহার রুমাসহ অন্য শিক্ষকরা। ফলাফলের সমস্যা থাকলে শিক্ষকরা তা পুনরায় যাচাই করে প্রকাশেরও আশ্বাস দেয় বলে জানায় আলোচনায় থাকা একাধিক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা প্রত্যাশিত ফলাফল পায়নি। বিষয়টি সমাধানে বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বিবেচনায় নিয়ে দেখবে কোনো ত্রুটি আছে কিনা। থাকলে সেটির সমাধান করে পুনরায় ফলাফল জানাবেন। 

এদিকে আলোচনায় থাকা একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, পুনরায় ফলাফল প্রকাশের আগমুহূর্ত পর্যন্ত স্নাতকোত্তর শ্রেণির ভাইভায় অংশ নেবেন না তারা।

অর্থনীতি বিভাগের এমন অবস্থা নিয়ে রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ফলাফল প্রকাশের পর সেটি তখন আর বিভাগের থাকে না, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ হয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রশাসনকে অবগত করতে হবে। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই।
 
ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আব্দুল হালিম বলেন, ফলাফল প্রকাশিত হলে সেখানে নম্বর যোগ বা বিয়োগের সুযোগ থাকে না। তবে ভুল থাকলে কেবল যোগ-বিয়োগ হিসাব করতে পারবে। এমনকি মোট নম্বরেও পরিবর্তনের ক্ষমতা বিভাগের থাকবে না। এ বিষয়ে কোনো সংশোধন করতে হলে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে করতে হবে। 

তবে পরীক্ষায় ফলাফলের অবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে জানতে চেয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি বিভাগটির প্রধান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম এবং পরীক্ষা কমিটির সভাপতি আলফারুন্নাহার রুমাকে।

এর আগে একই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ এনে বিভাগীয় প্রধানকে আটকে প্রতিবাদ জানায়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে।

সেই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জারমিনা রহমান উচ্চ আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে রিট করলে আদালত ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে চলতি বছরের ১ আগস্ট রুল জারি করেন। যেখানে বিভাগীয় প্রধান, ডিন, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং উপাচার্যের থেকে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।