ছাত্রলীগ নেতার চাপ, প্যাডে স্বাক্ষর দিয়ে নিখোঁজ হন কুবির তারেক
আঞ্চলিক সংগঠনের কমিটিতে পছন্দের নেতাকে আনতে প্যাডে চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ তারেকুল ইসলামের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়েছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ। এ ঘটনায় সংগঠনটির সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘আত্মহত্যা’র স্ট্যাটাস দিয়ে নিখোঁজ হন।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) চট্টগ্রাম স্টুডেন্ট’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের নবীনবরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তিনি তার পরিবারের কাছে নিরাপদে রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের কমিটিতে নিজের পছন্দের নেতাদের সভাপতি-সম্পাদক করতে হুমকি-ধামকি দেয়াসহ কমিটি আটকে রাখেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ। চট্টগ্রাম স্টুডেন্ট’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটি করাকে কেন্দ্র করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন তিনি।
খোজ নিয়ে জানা যায়, আঞ্চলিক সংগঠন চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরেই হস্তক্ষেপ করে আসছিলেন রেজাউল ইসলাম মাজেদ। তার পছন্দের প্রার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) খায়রুল বাশার সাকিবকে শীর্ষ পদে আনতে গত মার্চ মাসে বিগত কমিটির সভাপতিকে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। এ কারণে কমিটি গঠনে চারমাস দেরিও হয়।
আরও পড়ুন: খোঁজ মিলেছে আত্মহত্যার স্ট্যাটাস দেয়া সেই শিক্ষার্থীর
সর্বশেষ শুক্রবার সংগঠনটির নবীনবরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠানে খায়রুল বাশার সাকিবসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ ও নেতা-কর্মীরা সংগঠনের সভাপতি তারিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসাইনের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেন।
ঘটনার পর পরই সংগঠনের সভাপতি তারিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে সামাজিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। নিখোঁজের প্রায় তিন ঘণ্টা পর পুলিশের সহায়তায় চট্টগ্রাম থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের বিগত কমিটির সভাপতি আব্দুল জব্বার বলেন, এ কমিটি দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের কারণে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। সাকিবকে সভাপতি দিতে পরোক্ষভাবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতাকর্মী আমাকে দেখা নেওয়ার হুমকিও দেয়। কিন্তু আমি যারা কাজ করে তাদেরকেই দায়িত্ব দেই।
চট্টগ্রাম ছাড়াও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের কমিটি গঠনে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ রয়েছে।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে রেজাউল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আঞ্চলিক সংগঠন তো ছাত্রলীগের দেখার বিষয় না। তবু কমিটি দিতে গিয়ে একাধিক প্রার্থী থাকায় ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে তারা আমাদের কাছে আসেন, আমরা সমাধানের চেষ্টা করি।
তবে এসব বিষয় অস্বীকার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) খায়রুল বাশার সাকিব বলেন, অনুষ্ঠান নিয়ে এসোসিয়েশনের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু ঝামেলা হয়েছিল। আমি চট্টগ্রামের ছেলে হিসেবে সমাধান করতে গিয়েছি। সেখানে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রিয়াজ উদ্দিন জানান, আমরা ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর স্ট্যাটাস পাওয়ার পর সাথে সাথে তাকে খোঁজার জন্য বের হই। পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এসে তিশা প্লাস বাস কাউন্টারের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে তাকে শনাক্ত করি। সে বর্তমানে চট্টগ্রামের অলংকারে। তারেককে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমরা প্রক্টরিয়াল বডিসহ শিক্ষার্থী, পুলিশ প্রশাসন সবাই মিলে তাকে খুঁজেছি, গাড়ির কাউন্টারগুলো চেক করেছি। পরে তিশা কাউন্টারের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে আমরা তাকে শনাক্ত করি। সে যে গাড়িতে উঠেছিল সেটা থামিয়ে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছে হস্তান্তর করতে সক্ষম হই।
আঞ্চলিক কমিটিতে হস্তক্ষেপের পর শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার হুমকির ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, 'ঘটনার সত্যতা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।'